বিশ্ব জুড়ে ওমিক্রন আতঙ্ক, কী কী বিশেষত্ব নয়া করোনা ভ্যারিয়েন্টের?
দীর্ঘ প্রায় ২ বছরের করোনার ফাঁড়া অনেকটা কাটিয়ে নিউ নর্মালে ফিরছিল ভারত তথা পৃথিবী। কিন্তু এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতি 'ওমিক্রন' ইতিমধ্যেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে গোটা বিশ্বজুড়ে। ৩০ বার প্রোটিন পার্টিকল পাল্টে গঠিত হওয়া এই বি.১.১.৫২৯ কোভিড ভেরিয়েন্ট বা ওমিক্রনের খোঁজ প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া গেলেও বর্তমানে এটি ছড়িয়েছে বিশ্বের বহু দেশে। এই নয়া প্রজাতির করোনা নিয়ে প্রথম থেকেই সতর্ক করেছে 'হু'। কিন্তু এবার ওমিক্রনের লক্ষণ নিয়ে একাধিক তথ্য সামনে আসছে।
মার্কিন মুলুকে ওমিক্রন আতঙ্ক
এখনও পর্যন্ত বিশ্বের যে যে দেশে করোনার এই নয়া প্রজাতি থাবা বসিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র। আমেরিকায় ওমিক্রন হানা আচমকা বেড়ে যাওয়ায় এই দেশের অধিবাসীরা বেশ কিছু ক্ষেত্রে অনুধাবন করছেন করোনার আগের প্রজাতি গুলির থেকে এই প্রজাতির লক্ষণ সামান্য আলাদা।
ওমিক্রন সনাক্তকরণ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পিসিআর বা র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টেই ধরা যায় ওমিক্রনের উপস্থিতি। ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে শুধুমাত্র কয়েকটি পরীক্ষা রয়েছে যাতে ওমিক্রন সনাক্ত করা যায়না। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য বিষয় হল পরীক্ষার রিপর্টে আলাদা করে 'অমক্রন' আক্রান্ত হওয়ার কোনও পাকাপোক্ত লক্ষণ চিহ্নিত করা যাচ্ছে না টেস্ট রিপোর্টে। ফলে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ডেল্টা না ওমিক্রন আদৌ কোন প্রজাতির করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তা নির্ধারণ করতে হচ্ছে অনেকটা অনুমানের উপরেই।
ওমিক্রনের প্রাথমিক লক্ষণ কী কী ?
প্রাথমিক ভাবে ওমিক্রন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণে আগের প্রজাতিগুলির থেকে কিছু কিছু পার্থক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বৃহত্তম বেসরকারি স্বাস্থ্য সংগঠনের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। যাতে সামনে এসেছে সেই দেশে ওমিক্রন আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় সবারই নাক বন্ধ, শুকনো কাশি, শরীরের পেশীতে ব্যথা, বিশেষত পিঠে ব্যথা সহ দেহে ঘামাচির মত গুটি বেড়ানো এবং গলা ব্যথা হয়। তবে এক্ষেত্রে অনেকেই আছেন যারা করোনার টিকা দেওয়ার পরেও ওমিক্রন আক্রান্ত হয়েছেন। কন্তু সেক্ষেত্রে লক্ষণ কিছুটা আলাদা বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি মেয়ার্স কলেজ অফ নার্সিং-এর অধ্যাপক জানিয়েছেন, টিকা দেওয়া ওমিক্রন রোগীদের মাথাব্যথা, কনজেশন, সাইনাসের ব্যাথার লক্ষণ দেখা দেয়। অন্যদিকে টিকা না দেওয়া আক্রান্তদের শ্বাসকষ্ট, কাশি, জ্বরের মত লক্ষণ দেখা যায়।
ডেল্টা বনাম ওমিক্রন
এখন প্রশ্ন হল করোনার ডেল্টা প্রজাতি আর ওমিক্রনের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দুই প্রজাতির করোনার লক্ষণের পার্থক্যের থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ বেশি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওমিক্রনের বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যাচ্ছে। যেমন, ওমিক্রন এর স্বাদ এবং গন্ধ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আগের প্রজাতির তুলনায় কম। গবেষণায় দেখা গেছে যে মূল সার্স কোভ-২ স্ট্রেনের ৪৮% রোগী গন্ধ হারিয়েছেন এবং ৪১% রোগী স্বাদ হারিয়েছেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে অমিক্রন আক্রান্ত মাত্র ২৩% রোগী স্বাদ হারিয়েছেন এবং মাত্র ১২% রোগী গন্ধ হারিয়েছেন। এই সমীক্ষা নেদারল্যান্ডসে করা হয়েছিল। ওমিক্রন এবং অন্যান্য ভেরিয়েন্টের মধ্যে আরেকটি পার্থক্য হল যে ওমিক্রনের ইনকিউবেশন সময় কম সময়ে হয়। একজন ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পরে, তাদের লক্ষণগুলি দেখা দিতে, সংক্রামক হতে এবং পজিটিভ হতে চার থেকে ছয় দিনের তুলনায় ওমিক্রনের ক্ষেত্রে তা মাত্র তিন দিনের মতো সময় লাগে। যা বিশেষজ্ঞদের কাছে যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ।