কোচবিহার উপনির্বাচনের আগে ফরওয়ার্ড ব্লকের গাড়ি 'ব্যাকওয়ার্ড'-এ যাওয়ার জোগাড়!
সামনেই কোচবিহারে লোকসভা উপনির্বাচন (২০১৪ সালের জয়ী প্রার্থী তৃণমূলের রেণুকা সিংহ গত অগাস্ট মাসে হৃদরোগে প্রয়াত হন) অথচ যাঁরা ১৯৭৭ সাল থেকে রেণুকা দেবীর জয়ের আগে পর্যন্ত একটানা এই কেন্দ্রে জিতে এসেছেন, সেই ফরওয়ার্ড ব্লক নাকি যোগ্য প্রার্থীই খুঁজে পাচ্ছে না, একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে বঙ্গের প্রথম সারির দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। কী কলিকাল পড়ল!
প্রথমত তো কোচবিহার জেলায় ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রথম সারির নেতা উদয়ন গুহ গতবছর তৃণমূল কংগ্রেস-এ যোগ দিয়ে এবছরের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরই প্রাক্তন দলের প্রার্থীকে হারান। প্রকট হয় বামেদের প্রাক্তন দূর্গে বড়সড় ফাটল। আর তার উপর, বামফ্রন্টের শীর্ষ নেতৃত্ব এই উপনির্বাচনে গত বিধানসভার মতো কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করতে যাওয়ার পথে বেড়া তুলে দেওয়াতে গোঁজামিলের উপায়ও আর নেই। ব্লক নেতাদের মাথা এখন প্রকৃত অর্থেই 'ব্লক' হয়ে যাওয়ার জোগাড়।
প্রবল মমতা ঝড়ে উড়ে গিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক এবার কোচবিহার জেলায় মাত্র একটি আসনে জিততে পারে (কোচবিহার উত্তর)। আর তারপর থেকেই মোটামুটি দলের এখন বানপ্রস্থ অবস্থা।
কেউই আর 'ব্যাটিং অ্যাভারেজ' খারাপ করতে রাজি নন
প্রাক্তন বাম জমানার মন্ত্রী এবং দলের জেলা সভাপতি পরেশ অধিকারীকে অনেকের পছন্দ হলেও তিনি ইচ্ছুক নন বলে জানিয়েছে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনটি। কয়েকমাস আগেই বিধানসভা নির্বাচনে নিজের পরপর তিনবার জেতা কেন্দ্র মেখলিগঞ্জে হারেন পরেশ। আবার এখুনি বুলডোজার-এর সম্মুখীন হতে হয়তো তাঁর মন চাইছে না। দলের পক্ষ থেকে ভাবা হচ্ছিল গত লোকসভা নির্বাচনে রেণুকা সিংহের কাছে হেরেছিলেন সেই দীপক রায়ের কথাও। কিন্তু এই তিনিও গররাজি। এই বাজারে শুধু শুধু পরিসংখ্যানে হারের সংখ্যা কেই বা বাড়াতে চায়? তার চেয়ে না লড়াও ভালো।
ভয় বিজেপিকেও
ফরওয়ার্ড ব্লকের আরও মাথাব্যথা বাড়িয়েছে ওই অঞ্চলে বিজেপির ক্রমবর্ধমান শক্তি। উত্তরবঙ্গের সীমানা লাগোয়া অঞ্চলগুলিতে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ভালো ফল করে। উত্তরবঙ্গে মাত্র একটি আসন (আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট) জিতলেও অনেক আসনেই গেরুয়া দল তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রথম টিনের মধ্যে শেষ করে।
এক ধাক্কায় তিন নম্বরে চলে গেলে লজ্জার একশেষ হবে
এমনকি, গত লোকসভা নির্বাচনেও যেবার বিজেপি নরেন্দ্র মোদী হাওয়ায় ভর করে পশ্চিমবঙ্গে ১৭ শতাংশ ভোট পায়, সেবারও অনেক কেন্দ্রেই তাঁরা ভালো ফল করে। কোচবিহার কেন্দ্রেও তাঁদের প্রার্থী হেমচন্দ্র বর্মন সেবার তৃতীয় স্থান পান। তাই প্রার্থী ঠিক করতে পারা নিয়েই হিমশিম খাওয়া ফরওয়ার্ড ব্লক এবারের লড়াইতে তৃতীয় স্থানে চলে যাবেন কিনা, তা নিয়েও ঘোর দুশ্চিন্তায় আছেন।
ব্লকের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর এক নেতা নাকি প্রকাশ্যে এমন আশঙ্কা করেওছেন বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনটি। তাঁর ভয়, কোচবিহারের লড়াইটা আদতে 'দিদি বনাম মোদী' অর্থাৎ তৃণমূল বনাম বিজেপি হয়ে যেতে পারে। কামতাপুরী এবং সেরকম নানা সংগঠনকে কাছে টানা ছাড়াও বিজেপি ছিটমহলের আন্দোলনকারী নেতাদেরও সমর্থন পাচ্ছে বলে জানিয়েছে বাম শিবির, বলছে প্রতিবেদনটি।
কিন্তু তাতে দোষের কী আছে? রাজনীতিতে আপনি চোখ বুজে থেকে নিজের পায়ে কুড়ুল মারলে কি সবাই তাই করবে?