ফিরে দেখা ২০১৯ : পাঁচ শীর্ষ রাজনেতার মৃত্যুতে রাজনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি
২০১৯ সাল। এ বছরই ভারতীয় রাজনীতিতে কিছু ইন্দ্রপতন ঘটে গিয়েছে। দেশবাসী হারিয়েছে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদের, যাঁরা এ বছরই তাঁদের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। দেশের রাজনীতিতে তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। বিজেপি তাদের তিন মহান নেতা সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি ও মনোহর পরিক্করকে হারান। একই বছরে দলের তিন শীর্ষ নেতার অকাল প্রয়ানে একটু হলেও ক্ষমতা কমে বিজেপির। অন্যদিকে, কংগ্রেসের বরিষ্ঠ নেত্রী শীলা দীক্ষিত এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জর্জ ফার্নানডিসও এ বছরকে শেষ বিদায় জানায়।

অরুণ জেটলি
আইনজীবী তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অরুণ জেটলি ৬৬ বছর বয়সে গত ২৪ আগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘকাল রোগভোগের পর দিল্লির এইমসে তিনি মারা যান। ৯ আগস্ট বিজেপির বলিষ্ঠ ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এইমসে ভর্তি হন এবং তাঁকে একাধিক চিকিৎসকরা দেখভাল করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয় যে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। অরুণ জেটলি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহকর্মী। দেশের জনপ্রিয় আইনজীবীর তকমা পাওয়ার পর তিনি নিজেকে একজন সফল রাজনৈতিকবিদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। জেটলি ধীরে ধীরে বিজেপির অন্দরমহলে নিজের পাকা জায়গা করে নেন এবং ক্রমে অটল বিহারি বাজপেয়ি ও এল কে আদবানির ছায়াসঙ্গী হয়ে ওঠেন।

সুষমা স্বরাজ
বরিষ্ঠ বিজেপি নেত্রী তথা প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ৬ আগস্ট দিল্লিতে মারা যান। ভারতীয় রাজনীতিতে বিশিষ্ট মহিলা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন তিনি। এইমসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুষমা স্বরাজ। ৬৭ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। মোদী সরকারের আমলে স্বরাজ প্রথম মন্ত্রী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। এ বছরের লোকসভা নির্বাচনে তিনি তাঁর শারীরিক অবস্থার জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হননি। সুষমা স্বরাজ প্রয়াত হওয়ার আগে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে টুইট করে অভিনন্দনও জানান। কিন্তু তার পরের দিনই তিনি পরলোক গমন করেন।

মনোহর পার্রিকর
দীর্ঘদিন অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে ভুগে ১৭ মার্চ প্রয়াত হন মনোহর পার্রিকর। তিনি গোয়ার দ্বিতীয় ও ভারতের ১৮তম মুখ্যমন্ত্রী যিনি নিজের অফিসেই মারা যান। ৬৩ বছরের পার্রিকর গোয়ার প্রথম বিজেপি শাসন নিয়ে আসেন এবং মুখ্যমন্ত্রী হন। তিনি ২০০০-০৫ সাল এবং ২০১২-১৪ সাল পর্যন্ত গোয়ায় মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন। এরপর তিনি ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসাবে যোগ দেন। তবে ২০১৭ সালেই তিনি রাজ্যের রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং জোট সরকার গঠন করেন গোয়াতে।

শীলা দীক্ষিত
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বরিষ্ঠ এই কংগ্রেস নেত্রী শীলা দীক্ষিত। তিনি প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী যিনি দীর্ঘদিন পর্যন্ত রাজ্যের ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি দিল্লি কংগ্রেসের সভাপতিও ছিলেন। ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শীলা দীক্ষিত মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দিল্লি শাসন করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি কেরলের গর্ভনরও ছিলেন। আবেগপূর্ণ ও স্নিগ্ধ রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিচিত শীলা দীক্ষিতের আমলে দিল্লিতে বহু কল্যাণমূলক কাজ হয়েছে। তিনি অসংখ্য সমাজ কল্যাণমূলক প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন। ২০ জুলাই তিনি মারা যান।

জর্জ ফার্নান্ডেজ
প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ এ বছরের ২৯ জানুয়ারি ৮৮ বছর বয়সে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন রোগে ভুগছিলেন। দিল্লির ম্যাক্স হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। তিনি ছিলেন ভারতের প্রাক্তন শ্রমিক সংগঠনের নেতা, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, কৃষিবিদ এবং বিহারের রাজ্যসভার সদস্য। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত কারগিল যুদ্ধ যখন জেতে তখন তিনি ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তাই শেষ কয়েক বছর তাঁকে খুব একটা দেখা যায়নি। তাঁর মৃত্যুর আগে তাঁর সোয়াইন ফ্লুও হয়।