বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেই কন্যাভ্রুণ হত্যার হার বেশি, দেখুন বাংলা সহ অন্য রাজ্যে কী অবস্থা
দেশের অপেক্ষাকৃত গরিব রাজ্যগুলিতে বেশি পরিমাণে কন্যা সন্তান জন্মাচ্ছে। কেন্দ্রীয় রিপোর্টে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
দেশের উচ্চবিত্ত রাজ্যগুলিতেই কন্যা সন্তানের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হয় বেশি। বিশেষ করে উত্তর ও পশ্চিম ভারতে সেই হার সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। দেশের অপেক্ষাকৃত গরিব রাজ্যগুলিতে বেশি পরিমাণে কন্যা সন্তান জন্মাচ্ছে। কেন্দ্রীয় রিপোর্টে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। পিছিয়ে পড়া গরিব রাজ্য বলে যেগুলিকে অবহেলা করা হয়, সেই রাজ্যগুলির প্রকারান্তরে নারী স্বতন্ত্রতা ও অধিকারের লড়াইয়ে ধনী রাজ্যগুলিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।
পিছিয়ে উত্তর ও পশ্চিম ভারত
নয়টি রাজ্য়ের মধ্যে সাতটি রাজ্যে পুরুষ ও মহিলার জন্মের হার জাতীয় গড়ের অনেক নিচে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা উত্তর ভারত ও পশ্চিম ভারতের। হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, গুজরাত মেয়েদের জন্মের হারে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। অথচ এই তিনটি রাজ্য দেশের সবচেয়ে ধনী প্রথম দশটি রাজ্যের মধ্যে রয়েছে।
নিকৃষ্টতম স্থানে হরিয়ানা
হরিয়ানা (২০১৫-১৬ সালের হিসাবে) ভারতের চতুর্থ ধনী রাজ্য। অথচ সবচেয়ে নিকৃষ্ট লিঙ্গের অনুপাত এই রাজ্যের। ১ হাজার পুরুষের মধ্যে মহিলার সংখ্যা ৮৩১ জন। তারপরে রয়েছে উত্তরাখণ্ড। সেখানে প্রতি ১ হাজার পুরুষে নারীর সংখ্যা ৮৪৪ জন। দেশের দশম ধনী রাজ্য গুজরাতে প্রতি ১ হাজার পুরুষে ৮৫৪জন মহিলা জন্ম নিচ্ছে।
নীতি আয়োগের রিপোর্ট
লিঙ্গের অনুপাত সমাজের ভাবনা প্রতিফলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। কোন রাজ্য লিঙ্গ নির্ধারণ করে সন্তানের জন্মে উৎসাহী হচ্ছে তা দেখে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা নীতি আয়োগ ২০১৮ সালে লিঙ্গের অনুপাত ও বৈষম্য নিয়ে রিপোর্ট পেশ করেছে।
হু-র নির্দেশিকা
সাধারণভাবে ১ হাজার পুরুষে ৯৪৩-৯৮০জন মহিলার জন্ম হলে তা স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী এই সংখ্যা স্বাভাবিক। কারণ পুরুষদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি থাকে। তবে এই সংখ্যার নিচে হলেই তা আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
শেষ দশ রাজ্য
হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড ও গুজরাতের পরে ১ হাজার পুরুষ প্রতি মহিলার হারে নিকৃষ্ট স্থানে রয়েছে রাজস্থান (৮৬১জন), দিল্লি (৮৬৯ জন), মহারাষ্ট্র (৮৭৮ জন), উত্তরপ্রদেশ (৮৭৯ জন), পাঞ্জাব (৮৮৯ জন), জম্মু ও কাশ্মীর (৮৯৯ জন)। আর ভারতের গড় প্রতি ১ হাজার পুরুষে ৯০০ জন মহিলা।
এগিয়ে গ্রাম
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মেয়েদের জন্মের হারের বিচারে শহরকে পিছনে ফেলেছে গ্রাম। শহরে প্রতি হাজার পুরুষে যেখানে ৯০২জন নারীর জন্ম হয় সেখানে গ্রামে ৯২৩টি শিশুকন্যা জন্মগ্রহণ করে।
বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্ট
লিঙ্গের অনুপাতে ভারতবর্ষ ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে বলেও বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৫১ সালে ১ হাজার পুরুষে মহিলার অনুপাত ছিল ৯৪৬ জন। সেখানে ২০৩১ সালে সেই সংখ্যা কমে ৯৩৬ জনে এসে দাঁড়াবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।
গুজরাত অনেক পিছিয়ে পড়ছে
নীতি আয়োগের সাম্প্রতিকতম ২০১৮ সালের রিপোর্ট বলছে, ২১টি বড় রাজ্যের মধ্যে ১৭টিতে গত দুই বছরে লিঙ্গের অনুপাত অনেক বেড়ে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি গড়ে ৫৩জন হারে বেড়েছে গুজরাতে।
জাতীয় গড়ের চেয়ে এগিয়ে বাংলা
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতে প্রতি ১ হাজার পুরুষে মহিলার সংখ্যা ৯৪০ জন। পশ্চিমবঙ্গে সেই গড় ৯৫০ জনের। মহিলাদের সংখ্যায় কেরল, পুদুচ্চেরির মতো রাজ্য অনেক এগিয়ে। সেখানে পুরুষের চেয়ে মেয়েরা অনুপাতে এগিয়ে রয়েছেন।