ঠিক নির্বাচনের মুখে এফবিআই প্রধানের ইমেল তদন্তের কথা ধাক্কা দিল হিলারিকে
ঠিক যখন মনে হচ্ছিল হিলারি ম্যাচ বের করে নিয়ে যাচ্ছেন, তখনি এফবিআই প্রধানের ইমেল বিতর্কের নতুন তদন্তের কথা ফের খেলার মোড় ঘোরাল
এ যেন ঢেঁকিকলের খেলা। একবার এ ওঠেন তো পরের মুহূর্তেই ও নামেন। এখনও পর্যন্ত এবছরের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউই কাউকে জমি ছাড়ছেন না।
গত মাসে হওয়া তিনটি রাষ্ট্রপতি বিতর্ক দেখে মনে হয়েছিল রিপাবলিকান পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ডেমোক্র্যাট প্রতিপক্ষ হিলারির থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন - এলোপাথাড়ি মন্তব্য, আয়কর, মহিলা সংক্রান্ত নানা বিষয়ের দরুন।
কিন্তু ট্রাম্প যে লড়াই থেকে ছিটকে যাননি তা ফের প্রমাণিত হল নির্বাচনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে। গত রবিবার (অক্টোবর ৩০) ট্রাম্প শিবিরকে স্বস্তি দিয়ে এই দুই প্রার্থীর মধ্যে ফারাক কমে আসে অনেকটাই। কারণ: একদিকে হিলারির ইমেল সংক্রান্ত বিতর্কে এফবিআই-এর পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব এবং অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমি রাজ্যগুলিতে ট্রাম্পের নতুন উদ্যোগে প্রচার।
এবিসি এবং ওয়াশিংটন পোস্ট-এর একটি সাম্প্রতিকতম জনসমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে হিলারি এই মুহূর্তে ট্রাম্পের থেকে এগিয়ে রয়েছেন বটে, কিনতু দু'জনের মধ্যে ব্যবধান মাত্র এক পয়েন্টের। অথচ কয়েক সপ্তাহ আগেও হিলারির পক্ষে ব্যবধান ছিল বেশ উল্লেখযোগ্য।
আরও একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, ফ্লোরিডার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ট্রাম্প গত সেপ্টেম্বরে চার অঙ্কের ব্যবধানে হিলারিকে পিছনে ফেলে দেন। রবিবার হিলারিও জোর কদমে তাঁর অন্তিম লগ্নের প্রচার শুরু করেন ফ্লোরিডাতে -- সমকামী নাইটক্লাব, ব্যাপ্টিস্ট গির্জা ইত্যাদি নানা জায়গায় তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করেন। আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এই রাজ্যে হিলারি এই দফায় পাঁচটি জায়গায় প্রচার সারেন। লক্ষ্য, ট্রাম্পকে কোনও সুবিধা না দেওয়া।
ফ্লোরিডায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে হিলারি প্রতিপক্ষকে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি। একটি সভায় তিনি বলেন: "আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। আর এব্যাপারে আত্মসংযমহীন কাউকে ভরসা করা মূর্খামি," জানাচ্ছে এএফপি সংবাদ সংস্থা।
অবশ্য মুখে ট্রাম্পের ব্যক্তিত্ব নিয়ে কটাক্ষ করলেও হিলারি ভালোই জানেন যে এফবিআই যে এই শেষ মুহূর্তে তাঁর ইমেল বিতর্কের চাকে নতুন করে ঢিল ছুঁড়ল, তা আগামী আট তারিখে তাঁর জেতার সম্ভাবনাকে যথেষ্ট প্রভাবিত করতে পারে।
আর জানেন বলেই তিনি গত শনিবার (অক্টোবর ২৯) ফ্লোরিডা সফরকালীনই এফবিআই প্রধান জেমস কোমেকে তীব্র আক্রমণ করে বসেন। বলেন নির্বাচনের ঠিক মুখে কোমের নতুন করে ইমেল বিতর্কের পুনর্বিবেচনা করার কথা তোলা "অভূতপূর্ব"।
পাশাপাশি, এই ইস্যুটিকে হাতিয়ার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ তোলেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধেও। হিলারির প্রচার দলের তরফ থেকেও কোমের সমালোচনা করা হয়।
যেখানে এই কোমেই কয়েক মাস আগে হিলারির এই ইমেল বিতর্কের ব্যাপারে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা উচিত নয় বলে রিপাবলিকান শিবিরকে চটিয়েছিলেন, নির্বাচনের ঠিক মুখে দাঁড়িয়ে তাঁর এই ভোলবদলে বিস্মিত করেছে ডেমোক্র্যাটদের। তবে, আশার সঞ্চার করেছে ট্রাম্প এবং তাঁর সমর্থকদের মনে। এবারে বুঝি খেলা ঘুরল।
ট্রাম্প রবিবার নেভাদা, কোলোরাডো এবং নিউ মেক্সিকোতে নির্বাচনী প্রচারে হিলারির বিরুদ্ধে নতুন উৎসাহ নিয়ে আক্রমণে যান। নেভাদার লা ভেগায়, যেখানে কয়েক সপ্তাহ আগে তৃতীয় রাষ্ট্রপতি বিতর্কসভায় "নির্বাচনের ফল মেনে নেওয়ার ব্যাপারে যা বলার পরে বলব" মন্তব্য করে তুমুল সমালোচিত হয়েছিলেন ট্রাম্প, সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন হিলারির "অপরাধ ইচ্ছাকৃত"।