পুজো স্পেশ্যাল: আশ্বিনেই নবান্ন, বাংলার মাটির ডাকে শস্যশ্যামলা অজেয় সংহতি
কাশের বনে দোলা লাগিয়ে শরৎ আসে। শরতের শিউলির গন্ধেই বাতাস মুখরিত হয় শারদ বন্দনায়। এবার কিন্তু শরতের আগমনে কাশের সঙ্গে দোলা লেগেছে ধানের শিসেও। একটি ধানের শিসের উপর এখনও যাঁদের একটি শিশির বিন্দুর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের নান্দনিক দৃশ্য দেখা হয়নি, তাঁদের এবার ডাকছে অজেয় সংহতি। গোলা ভরা ধানে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে হরিদেবপুরের অজেয় সংহতির মণ্ডপ। ওঁরা যে এবার মাটির ডাক পেয়েছেন, গোলা তো ভরে উঠবেই।
বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ। হাওয়ায় লেগেছে হিমের পরশ। তাহলে সকালে উঠেই ধানের শিসের উপর শিশিরের দেখা মিলবে না, এ কেমন কথা। তার জন্য শুধু চাই ধানক্ষেত। গ্রামের মানুষের কাছে যা খুব সহজলভ্য, তা দেখা শহরের মানুষের দুসাধ্য। কিন্তু এবার সেই সৌভাগ্য মিললে চলেছে শহরবাসীর। এতদিন পর শহরবাসীর কাছে প্রকৃতির সেই অপরূপ শোভা সাজিয়ে উপস্থিত হরিদেবপুর অজেয় সংহতির পুজো উদ্যোক্তারা। খাস কলকাতার বুকেই এবার ধানের চাষ করে অজেয় সংহতি বাংলা মায়ের শস্য-শ্যামল রূপ তুলে ধরেছে তাদের পুজোর থিমে।
থিম পুজোয় বরাবরই অজেয় সংহতি এক অনন্য সৃষ্টির পরিচয় রাখে। এবার তাদের শারদ বন্দনায় থিম 'মাটি তোদের ডাক দিয়েছে'৷ আর এই মাটির ডাক পেয়েই শহরের কংক্রিটের জঙ্গলে ধান ফলিয়ে ছেড়েছেন উদ্যোক্তারা। যাকে বলে একেবারে আসাধ্যসাধন। থিমমেকার অনির্বাণ দাস, যাঁর সৃজনে শহরের দর্শনার্থীরা এবার পাবেন মাটির গন্ধ। আর এই কৃষ্টির নেপথ্যে কৃষকদের রক্ত জল করা পরিশ্রম৷
শহরের অনুর্বর মাটি চষে ধান ফলানো তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। পৌষের ডাক আসার আগেই যে নবান্নে ভরাতে হবে অজেয় সংহতির ধানের গোলা। তাও আবার এই আশ্বিনেই। কী চ্যালেঞ্জটাই না নিতে হয়েছে তাঁদের। গ্রাম বাংলার মাটিতে হয়, তাও না হয় একটা কথা ছিল। একেবারে শহরের বুকে আশ্বিনের শারদপ্রাতে শস্য ফলিয়ে দেখিয়ে দিলেন কৃষকরা।
শুধু ধানচাষ বা ধানের গোলা নয়, অজেয় সংহতির ৫৬তম বর্ষের পুজো পুরোটাই গ্রামবাংলার মাটিকেন্দ্রিক। ধান, ধানের গোলা, চাষি তো আছেই, সেইসঙ্গে রয়েছে খড়ের চালা, মাটির বাসনপত্র, পোড়ামাটির গন্ধ। গ্রামবাংলার সব দানই সবই জায়গা করে নিয়েছে হরিদেবপুরের অজেয় সংহতির থিমে৷
গত বছর গ্রাম্য সংস্কৃতির এক অনন্য উপস্থাপনা ছৌ-নৃত্য উঠে এসেছিল অজেয় সংহতির থিমে৷ এবার শিল্পী হাজির আশ্বিনেই বাঙালির ঘরে নবান্নের স্বাদ দিতে। তিনি যে বাঙালির ঘরে ঘরে পৌষের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রকৃত অর্থেই নবান্ন আসার গল্পই বলতে ছেয়েছেন তাঁর সৃজনে। গোটা পুজোপ্রাঙ্গণ জুড়েই তাই ধানের ক্ষেত। আর মণ্ডপটি, যেখানে 'মা অন্নপূর্ণা'র অধিষ্ঠান, সেটাকে করেছেন ধানের গোলা। পাশেই মাটির ঘর। খড়ের উপর মাটির হাঁড়ি, মাটির প্রদীপ দিয়ে তৈরি পুরো মণ্ডপ৷ হাঁড়িগুলো ধান্যেভরা। পুজো উদ্যোক্তাদের ব্যাখ্যায়, মাটির প্রদীপ এখানে দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক৷ ধান তো চাষিদের কাছে লক্ষ্মীর দান। সেই লক্ষ্মীর দানেই অজেয় সংহতি রূপ নিয়েছে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরায়। প্রতিমাতেও রয়েছে বিশেষত্ব৷ এখানেও গ্রামবাংলার পোড়ামাটির মূর্তির আদলে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা।