(ছবি) দুর্গাপুজো স্পেশ্যাল : বিরিয়ানির ইতিহাস-ভূগোল
বাঙালির অনেক ভাললাগা বা বলা ভাল ভালবাসার মধ্যে অন্যতম হল বিরিয়ানি। বিরিয়ানি নাম শুনলে যেন নিজেকে ধরে রাখা যায় না। আর দুর্গাপুজোতে তো বিরিয়ানি মাস্ট । বিরিয়ানি না হলে পুজোই নয়। তবে বিরিয়ানি নিয়ে যতই বড়াই করুন না কেন অনেকেই কিন্তু জাননে না বিরিয়ানির ইতিহাস। সবথেকে মজার বিষয় অনেকে ভাবেন বিরিয়ানি উদ্ভাবন বাঙালি হেঁশেলেই বুঝি।
তবে যে বাবুমশাইরা জানেন না বিরিয়ানির আদিম পরিচয় তাঁরা শুনলে মর্মাহত হতে পারেন যে বিরিয়ানি আবিষ্কারে বাঙালির কোনওভাবেই কোনও হাত ছিল না। তবে বিরিয়ানি মুঘলাই রসনা বলেই মূলত জনপ্রিয়। তবে বিরিয়ানির জন্ম ঠিক কোথায় তা নিয়ে এখনও দ্বিমত রয়েছে। উত্তর ভারতের ক্ষেত্রে দিল্লিতে যেমন বিরিয়ানি বলতে মুঘলাই রসনাই বোঝে। তেমন আবার লখনওতে বলা হয় বিরিয়ানি আসলে আওয়াধি হেঁশেলেই প্রথম তৈরি হয়েছিল। এদিকে আবার দক্ষিণ ভারতের ক্ষেত্রে বিরিয়ানি হায়দরাবাদী রন্ধনপ্রণালী।
বিরিয়ানি রান্নার কোথা থেকে উদ্ধব হয়েছে তা নিয়ে খচখচানি থাকলেও বিরিয়ানি শব্দটি যে ফার্সি ভাষা তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। ফার্সি শব্দ 'বিরিঞ্জ' (যার অর্থ ভাত) থেকে বিরিয়ানি শব্দটি এসেছে। তবে অনেক ভাষা বিশেষজ্ঞের মতে বিরিয়ানি শব্দের জন্ম 'বিরয়ান' বা 'বেরিয়ান' (যার অর্থ ভাজা বা রোস্ট) থেকে।
বিভিন্ন প্রদেশে বিরিয়ানির প্রণালীতেও বৈচিত্র দেখা যায়। দম বিরিয়ানি, কচ্চি বিরিয়ানি, বম্বে বিরিয়ানি, হায়দরাবাদী বিরিয়ানি, লখনউ বিরিয়ানি আর অবশ্যই কলকাতা বিরিয়ানি। অন্যান্য বিরিয়ানি থেকে কলকাতা বিরিয়ানির সবচেয়ে বড় পার্থক্য 'আলু'। কলকাতা বিরিয়ানিতে মাংসের সঙ্গে যে একটুকরো বড় আলু দেওয়া হয় তা অন্য কোনও বিরিয়ানিতে থাকে না। আর সেই আলুর যা স্বাদ আহা..
সে সব থাক, এখন বিষয়টা হল পুজোতেতো বিরিয়ানি খেতেই হবে। কলকাতায় যে হারে ব্যাঙের ছাতার মতো বিরিয়ানির দোকান গজিয়ে উঠেছে তাতে অনেকেই বিভ্রান্ত হতে পারেন কোথায় খাবেন আর কোথায় খাবেন না তা ভেবে। কোথায় খাবেন না সে আমরা বলছি না। কিন্তু কোথায় খাবেন তা অবশ্যই বলতে চাই। সবাই নামগুলো জানেন তাও একবার মনে করিয়ে দেওয়া আর কী।
১.
আরসালান
আরসালানের
বিরিয়ানিকে
শুধু
জনপ্রিয়
বললে
কম
বলা
হবে।
অত্যন্ত
সযত্নে
বানানো
এই
বিরিয়ানি
খেলে
আপনার
শারীরিক
কোনও
গোলোযোগ
হবে
না।
মানে
বিরিয়ানি
তো
অত্যন্ত
গুরুপাক
খাবার।
অনেকেরই
খাওয়ার
পর
বিরিয়ানির
একটা
চোঁয়া
ঢেকুর
উঠতে
থাকে।
কিন্তু
স্বাদের
সঙ্গে
কোনওরকম
আপোশ
না
করেই
এত
হাল্কা
এই
বিরিয়ানি
বানানো
হয়
যে
শরীর
খারাপ,
আইঢাই
ভাব,
বা
চোয়া
ঢেকুর
কিচ্ছু
হবে
না।
আর
সেই
কারণেই
এত
জনপ্রিয়তা
আরসালানের।
এখানকার
বিরিয়ানি
ইয়াখনি
বিরিয়ানি।
মটনের
জুসে
চাল
ও
আলু
মিশিয়ে
তৈরি
করা
হয়
এই
বিরিয়ানি।
পার্ক
সার্কাসের
আরসালানটিই
সবচেয়ে
বেশি
জনপ্রিয়
তবু
সার্কাস
অ্য়াভেনিউ,
বিধানসরণী
ও
অন্যান্য
আউটলেটগুলিও
কোনও
অংশে
কম
যায়
না।
২.
সিরাজ
১৯৭০
সালে
পার্ক
সার্কাসের
মোড়ে
প্রথম
শুরু
হয়
সিরাজের
বিরিয়ানি।
বিরিয়ানি
নাম
শুনলে
প্রথমেই
মনে
পড়ে
সিরাজের
নাম।
সিরাজের
দৌলতেই
কলকাতায়
বিরিয়ানির
এত
রমরমা
একথা
বললেও
খুব
একটা
বাড়িয়ে
বলা
হবে
না।
সিরাজের
বিরিয়ানির
গন্ধটাই
যেন
আলাদা।
কলকাতাতে
পার্ক
সার্কাসের
পাশাপাশি
আরও
বেশ
কয়েকটি
আউটলেট
রয়েছে।
দুবাইতেও
রয়েছে
সিরাজের
শাখা।
প্রবাসী
এমন
অনেকেই
রয়েছেন
যারা
কলকাতায়
এলে
ফেরার
সময়
সিরাজের
বিরিয়ানি
প্যাক
করিয়ে
নিয়ে
যান।
৩.
নিউ
মার্কেট
আমিনিয়া
১৯৪৭
সালে
কলকাতায়
আমিনিয়ার
আগমন।
কলকাতা
বিরিয়ানির
আসল
স্বাদ
পেতে
আমিনিয়া
ভ্রমণ
অত্যন্ত
প্রয়োজন।
এখানকার
বিরিয়ানি
মশলা
তৈরি
করেন
মালিক
নিজেই।
পুজো
ছেড়ে
এমনি
সময়ও
যদি
সন্ধ্যায়
কলকাতা
কর্পোরেশন-এর
উল্টোদিকে
আমিনিয়া
চত্ত্বরে
যান
খাওয়ার
জন্য
কমপক্ষে
১৫-২০
মিনিট
অপেক্ষা
করতে
হবে।
এতই
তার
জনপ্রিয়তা।
তবে
নিউ
মার্কেট
ছাড়াও
গোলপার্ক,
শ্যামনগর
আরও
এনেক
জায়গাতেই
আমিনিয়ার
শাখা
রয়েছে।
এখানকার
বিরিয়ানি
আওয়াধি
বিরিয়ানি।
৪.
নিউ
আলিয়া
হোটেল
প্রায়
ন'দশক
আগে
বেন্টিঙ্ক
স্ট্রিটে
ছোট্ট
একটি
ঘরে
খুলেছিল
নিউ
আলিয়া।
যদিও
তখন
বিরিয়ানি
পাওয়া
যেত
না।
১৯৬৬
সাল
থেকে
নিউ
আলিয়ায়
বিরিয়ানির
পথ
চলা
শুরু
হয়।
এখানকার
বিরিয়ানি
একেবার
মুঘলাই
ঘরানার
বিরিয়ানি
কিন্তু
অবশ্যই
কলকাতার
ছোঁয়া
আছে।
বিরিয়ানির
স্বাদ
বজায়
রাখতে
আজও
বিহার
থেকে
আনানো
হয়
ঘি।
দেখনদারি
নেই।
রেস্তোরাঁ
ঝা
চকচকে
নয়,
তবু
শুধু
স্বাদের
জোরেই
রমরমিয়ে
চলছে
নিউ
আলিয়া।
৫.
রহমানিয়া
১৯৪৮
সালে
প্রথম
খোলে
রহমানিয়া।
আওয়াধি
নয়,
আখনি
নয়,
মুঘলাই
নয়,
হায়দরাবাদী
নয়,
রহমানিয়ার
বিরিয়ানি
একেবারে
আপাদমস্তক
কলকাতা
বিরিয়ানি।
চাল,
মাংস
ও
ভাতের
অনবদ্য
মেলবন্ধন।
দীর্ঘদিন
ধরে
বিরিয়ানির
এক
রেসিপি
দিয়েই
চলছে
রহমানিয়া।
আপাতত
রন্ধনপ্রণালীর
পরিবর্তনেরও
কোনও
কথা
ভাবছেন
না
কর্তৃপক্ষ।
কাশ্মীরি বিরিয়ানি
কাশ্মীরের বিরিয়ানি অনেকাংশেই ইয়াখনি হয়। আর তাতে মিষ্টির আধিক্য দেখা যায়।
ডিম বিরিয়ানি
যাঁরা মাছ-মাংস খান না অথচ ডিম খান তাঁর এতেই খুশি থাকুন।
আম্বুর বিরিয়ানি
দক্ষিণী এই বিরিয়ানিও ভারতবর্ষে যথেষ্ট জনপ্রিয়।
হায়দরাবাদী বিরিয়ানি
মূলত দক্ষিণ ভারতে বিরিয়ানি হায়দ্রবাদী ঘরানার।
লখনউ বিরিয়ানি
লখনউ বিরিয়ানি ঘরানার বিরিয়ানিও অত্যন্ত জনপ্রিয়।
দমপোখত বিরিয়ানি
দমপোখত হল বিরিয়ানি রান্নার এক প্রণালী।
আওয়াধি বিরিয়ানি
লখনউতে আওয়াধি বিরিয়ানির চল খুব বেশি।
কলকাতা বিরিয়ানি
কলকাতা বিরিয়ানির আলুতেই বাজিমাত।