ট্রাম্প ভারতের অগ্রগতির কথা বললেন, তার জন্য ধন্যবাদ; কিন্তু ওনার কি হিংসা হচ্ছে?
ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন: "ভারতের অর্থনীতি ৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, চিনের ৭ শতাংশ হারে। আর আমরা বাড়ছি এক শতাংশ হারের আশেপাশে। আর আমার মনে হয় আমরা এমন কিছু ভালো করছি না।"
বুধবার (অক্টোবর ১৯) মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তৃতীয় এবং অন্তিম বিতর্কসভায় রিপাবলিকান পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত এবং চিনের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা তুলে নিজের দেশকেই খোঁচা দেন।
ডেমোক্র্যাট প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিন্টনের বিপক্ষে লা ভেগার নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে সঞ্চালক ক্রিস ওয়ালেস যখন তাঁকে প্রশ্ন করেন নিজের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সম্বন্ধে (ট্রাম্প মার্কিন অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ৪ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন), তখন ট্রাম্প বলেন: "ভারতের অর্থনীতি ৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, চিনের ৭ শতাংশ হারে। আর আমরা বাড়ছি এক শতাংশ হারের আশেপাশে। আর আমার মনে হয় আমরা এমন কিছু ভালো করছি না।"
ভারত সম্পর্কে এই উচ্চ ধারণা পোষণ করার জন্য আমরা আম ভারতবাসী ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাতেই পারি কিন্তু প্রকৃত চিত্রটি এটা নয়। যদিও অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য অনুযায়ী এই বছরে আমেরিকার উন্নয়নের হার ১ শতাংশের আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করবে, কিন্তু ভারতের আট বনাম আমেরিকার এক -- হিসেবে ব্যাপারটা দেখা ঠিক হবে না।
কারণ অর্থনীতি হিসেবে ভারতের যাত্রা শুরু আরও নিচু থেকে এবং তার ফলে ভারতের উন্নয়নের সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। কিন্তু পাশাপাশি এটা ভুলে চলবে না যে ভারতের অর্থনীতি এখনও অনেক পরিপ্রেক্ষিতেই দেশের মানুষের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে সফল হয়নি স্বাধীনতার প্রায় ৭০ বছর পরেও। দারিদ্র্যর মতো সামাজিক সমস্যা থেকে আজও মুক্তির পথ খুঁজে পায়নি এই দেশ। দুনিয়াতে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী সবথেকে বেশি মানুষের সংখ্যাও এই ভারতেই।
চিনের সম্পর্কে অবশ্য ট্রাম্পের হিসেবে ঠিক আছে। ওই দেশটির অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার গতবছরে ছিল ৬.৯ শতাংশ, গত সিকি শতাব্দীতে সবচেয়ে কম। অর্থনীতিবিদরা তারও নানা কারণ দেখিয়েছেন।
আসলে ট্রাম্প অন্যান্য দেশের পরিসংখ্যানগুলি নিখুঁত না জানলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া রাজনীতিতে সেগুলিকেই অস্ত্র করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে চলেছেন। এটি তাঁর তথা এবারের পুরো মার্কিন নির্বাচনী প্রচারেরই একটি বিশেষ দিক।
ট্রাম্পের উত্থানের পিছনে রিপাবলিকান শিবিরের শেতাঙ্গ রক্ষণশীলতার আন্দোলনের বড় ভূমিকা রয়েছে নিঃসন্দেহে এবং এই রক্ষণশীলতা মার্কিন অর্থনীতি-রাজনীতি এবং সমাজনীতি সম্পর্কেই বেশি ভাবিত। বিদেশনীতির প্রভাব এবারের মার্কিন নির্বাচনে অপেক্ষাকৃত কম। কারণ দু'টি। এক, কৃষ্ণাঙ্গ বারাক ওবামা রাষ্ট্রপতি হওয়ার কারণে একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে মার্কিন মুলুকের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে গত আট বছরে যার ফলে ঘরোয়া ইস্যু নিয়েই তর্ক বেশি চলছে এবং দুই, ওবামা প্রশাসন যেহেতু স্বাভাবিক কারণেই যুদ্ধবাজ বিদেশনীতির পথে হাঁটেনি, তাই বিদেশনীতির প্রভাব এবারে কম পড়েছে।
উল্টে বরং প্রশ্ন উঠেছে সিরিয়া প্রশ্নে ওবামা প্রশাসনের অক্রিয়তা নিয়ে।
কিন্তু ট্রাম্প যখন অন্য দেশের অর্থনৈতিক প্রগতির কথা তুলে 'ইন্টারনালাইজেশন অফ দ্য এক্সটার্নাল' করার চেষ্টা করেন প্রতিপক্ষকে ঢিট করতে, তখন বোঝা যায় বহির্বিশ্বের গুরুত্ব মার্কিন নির্বাচনে ঠিক কতখানি।
কিনতু তাতে ট্রাম্প ভারত বা চিনের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া'র কথা বলে কতদূর সুবিধা করতে পারবেন? এক তো ব্যক্তি হিসেবে তাঁর কান্ডকারখানা লোকমুখে দাবানলের মতো ছড়িয়ে তাঁর অবস্থানকেই নড়বড়ে করেছে আর দ্বিতীয়ত, ওবামার আগে জর্জ বুশ জুনিয়র রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন একের পর এক যুদ্ধে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের অর্থনীতির যে ক্ষতি করেছিল, তার নৈতিক দায়িত্ব নিতে হবে ট্রাম্পের নিজের দলকেই কারণ ক্ষমতায় তখন তারাই ছিল।