
ঝড় হল সাইক্লোন! কিন্তু কে কবে প্রথম ব্যবহার করেন এই নাম, একনজরে খুঁটিনাটি
সাইক্লোন, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ঘূর্ণিঝড়। সমুদ্রে ঘূর্ণাবর্ত থেকে নিম্নচাপ, নিম্নচাপ গভীর হয়ে পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনে। আর প্রাক বর্ষা মরশুমে সেই সাইক্লোনের আগমনে দুর্যোগ চরম আকার নেয়। কিন্তু সাইক্লোন শব্দটি কোথা থেকে এল বা কে এই সাইক্লোন শব্দটি প্রথম ব্যবহার করলেন, তা নিয়েই এই প্রতিবেদন।


সাইক্লোন শব্দের উৎস কোথায়
সাইক্লোন কথাটির সৃষ্টি কিন্তু বহু আগে। অন্তত ১৮০ বছর আগে এই শব্দের উত্থাপন হয়েছিল। আবার সাইক্লোন শব্দের উৎসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কলকাতাও। কলকাতা থেকেই এই নামের উদ্ভব। দ্য জার্নাল অফ দ্য এশিয়াটিক সোসাইটিতে একটি গবেষণাপত্রে উঠে আসে এই নাম। এর প্রবক্তা অবশ্য কোনও বাঙালি নন।

কবে ঝড়ের নাম হয় সাইক্লোন
১৮৩৬ থেকে ১৮৫৫ সালের মধ্যে কলকাতা থেকে দ্য জার্নাল অফ দ্য এশিয়াটিক সোসাইটিতে একটি গবেষণাপত্রে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় নিয়ে ৪০ পাতার গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। এই গবেষণাপত্রেই গবেষণার প্রধান লেখক হেনরি পিডিংটন সাইক্লোন শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। মনে করা হয়, তারপর থেকেই চালু হয় ঝড়ের বিশেষ রূপকে সাইক্লোন বলে অভিহিত করা হয়।

সাইক্লোন শব্দটির কে প্রথম ব্যবহার করেন
হেনরি পিডিংটন ঝড়ের প্রকাণ্ডরূপকে সাইক্লোন বলে উল্লেখ করেছিলেন। ফলে তৈরি হয়েছিল নতুন এক শব্দ। কিন্তু ওই সাইক্লোন শব্দটির অর্থ কী? সাইক্লোন শব্দের অর্থ হল সাপের কুণ্ডলী। জানা গিয়েছে, ১৮৪২ সালে হেনরি পিডিংটন নামের ওই গবেষক তাঁর ল্যান্ডমার্ক থিসিস 'লজ অফ দ্য স্টর্মস' নামে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন। সেখানে উল্লেখ করা হয় সাইক্লোন শব্দটিকে।

ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন কী এবং কেন
ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন হল ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রে সৃষ্ট বৃষ্টি, বজ্র ও প্রচন্ড ঘূর্ণি বাতাস সংবলিত আবহাওয়ার একটি নিম্নচাপ প্রক্রিয়া. যা নিরক্ষীয় অঞ্চলে উৎপন্ন তাপকে মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত করে। এর ফলে সৃষ্টি হয় ঝড়। বাতাস প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ছুটে চলে বলে এর নামকরণ হয়েছে ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণন উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে।

৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় প্রতি বছর
ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানলে যদিও দুর্যোগের সৃষ্টি হয়, কিন্তু এটি আবহাওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা পৃথিবীতে তাপের ভারসাম্য রক্ষা করে। গড়ে পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এর অধিকাংশই সমুদ্রে মিলিয়ে যায়, কিন্তু যে অল্প সংখ্যক উপকূলে আঘাত হানে তা অনেক সময় ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করে।

সাইক্লোন কেন, কেনই বা ঘূর্ণিঝড়
সাপের মতো কুণ্ডলী আকারে তা সমুদ্রের উপর বিস্তার লাভ করে এবং তীব্র গতিতে ঝড়ের সৃষ্টি করে। তাই একে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সাপের কুণ্ডলীর মতো পাকিয়ে পাকিয়ে আসে বলে সাইক্লোন। আর ঘূর্ণায়মান বলে ঘূর্ণি, সাধারণ কথায় এটাই বোঝানো হয় সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়কে।

সাইক্লোন শব্দটি কোথা থেকে এসেছে
আবহবিদরা জানান, সাইক্লোন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ কাইক্লোস থেকে, যার অর্থ বৃত্ত বা চাকা। এটা অনেক সময় সাপের বৃত্তাকার কুন্ডলী বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়। ১৮৪২ সালে হেনরি পিডিংটন তাঁর 'সেইলর'স হর্ণ বুক ফর দি ল'অফ স্টর্মস' বইতে প্রথম সাইক্লোন শব্দটি ব্যবহার করেন। তারপর থেকেই ঘূর্ণিঝড় বোঝাতে সাইক্লোন শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়।

সাইক্লোন, হারিকেন ও টাইফুন কি আলাদা
আবার সাইক্লোন, হারিকেন ও টাইফুনকে অনেকেই মনে করেন তিনটি পৃথক প্রজাতির ঝড়। তা কিন্তু নয়। আসলে এগুলো অঞ্চলভেদে ঘূর্ণিঝড়ের ভিন্ন ভিন্ন নাম। সাধারণভাবে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। যা হেনরি পিডিংটন ব্যবহার করেছিলেন ১৮০ বছর আগে। তা আজও একইভাবে ব্যবহার হয়ে চলেছে।

হারিকেন বা টাইফুনের উৎস সন্ধান
আটলান্টিক মহাসাগর এলাকা তথা আমেরিকার আশেপাশে ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ১১৭ কি.মি.-র বেশি হয়, তখন জনগণকে এর ভয়াবহতা বুঝাতে হারিকেন শব্দটি ব্যবহার করা হয়। মায়া দেবতা হুরাকান- যাকে বলা হত ঝড়ের দেবতা, তার নাম থেকেই হারিকেন শব্দটি এসেছে। তেমনিভাবে,প্রশান্ত মহাসাগর এলাকা তথা চিন, জাপানের আশেপাশে হারিকেনের পরিবর্তে টাইফুন শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এই টাইফুন একটি চিন শব্দ টাই-ফেং থেকে এসেছে, যার অর্থ প্রচন্ড বাতাস। অনেকে অবশ্য মনে করেন ফার্সি বা আরবি শব্দ তুফান থেকেও টাইফুন শব্দটি আসতে পারে।

সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণিবিভাগ
বাতাসের গতিবেগ অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়কে কতগুলি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। আটলান্টিক মহাসাগর এলাকার জন্য প্রাথমিক অবস্থায় বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার নীচে থাকে, তখন একে শুধু নিম্নচাপ বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটারের বেশি হলে এটিকে একটি নাম দেওয়া হয় এবং ঘণ্টায় ৬২ কি.মি. থেকে ১১৭ কিলোমিটার ব্যবধানে এটিকে একটি ঝড় বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ১১৭ কিলোমিটারের বেশি হয়, তখন এটি হারিকেন পর্যায়ে উন্নীত হয়।

ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের প্রকারভেদ
বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতে ঘূর্ণিঝড়কে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তাকে ঘূর্ণিঝড় বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা 'সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম' বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা 'ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম' বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে 'সুপার সাইক্লোন' বলা হয়।
ঘূর্ণিঝড় অশনি তো কোন ছার, ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্যোগে ২০০ শতাংশ বিপদের মুখে