বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ‘অশনি’, তালিকা মেনে ‘অপেক্ষা’য় যে সমস্ত ঝড়
২০১৯ থেকে ২০২১ পর পর তিন বছর বঙ্গোপসাগরের পূর্ব উপকূলে এই মে মাসে হানা দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড় ফণী থেকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও ইয়াস সংঘাতিক রূপ নিয়ে আছড়ে পড়েছিল উপকূলে।
২০১৯ থেকে ২০২১ পর পর তিন বছর বঙ্গোপসাগরের পূর্ব উপকূলে এই মে মাসে হানা দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড় ফণী থেকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও ইয়াস সংঘাতিক রূপ নিয়ে আছড়ে পড়েছিল উপকূলে। এবারও আন্দামান সাগর ও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় অনুকূল আবহাওয়া পেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন আবহবিদরা।
মার্চের পর মে মাসে ফের একটি ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা
এবার মার্চেই একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল আন্দামানে। তা অশনি নাম নিয়ে বাংলাদেশ ও মায়ানমার উপকূলে আছড়ে পড়ার কথা ছিল। কিন্তু উপকূলে পৌঁছনোর আগেই তা শক্তি হারিয়ে ফেলে। আবহবিদরা মনে করেছিলেন এবার ৯৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে মার্চেই আছড়ে পড়তে চলেছে বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড় অশনি। কিন্তু তা সাগরেই বিলীন হয়ে যায়। এবার মে মাসে এসে ফের একটি ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড় হবে অশনি
আন্দামান সাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ গভীর হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে চলেছে এবার। এটিই অশনি নাম নিয়ে বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড় রূপে আছড়ে পড়তে পারে। ২০২১-এর শেষ ঝড় হিসেবে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ভারতের উপকূলে ধেয়ে এসেছিল। বাংলা ও ভারতের উপকূল মিলিয়ে মোট পাঁচটি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল। ২০২২-এ এখন পর্যন্ত কোনও ঘূর্ণিঝড় হয়নি। এবার সেই সম্ভাবনা ঘনিয়ে এগিয়ে আসতে পারে বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড় অশনি।
বছরের সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ছিল জাওয়াদ
বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর দিয়ে ২০২১ সালে মোট পাঁচটি ঝড় বয়ে গিয়েছে। বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আছড়ে পড়েছিল তাউটে বা তাউকটে। তার পথ ধরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, ঘূর্ণিঝড় গুলাব, ঘূর্ণিঝড় শাহিন আর সবশেষে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ বয়ে গিয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশীয় অঞ্চলের উপকূল দিয়ে। এ বছরের সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ এই ডিসেম্বরেই শঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছিল ওড়িশা থেকে বাংলার উপকূলে।
ব্যতিক্রমী ঘূর্ণিঝড় হয়ে ডিসেম্বরে ধেয়ে আসে জাওয়াদ
ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম প্রতি বছর মার্চ মাসে শুরু হয়। প্রথম দফায় চলে জুন মাস পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাসে চলে নভেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা থাকে। ২০২১-এ তার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে ডিসেম্বরে ধেয়ে আসে ঘূর্ণিঝড়। ভারতীয় উপকূল অভিমুখে হানা দেয় ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ।
প্রথম সারির মোট ৯টি নাম ব্যবহার হয়ে গিয়েছে
২০২২-এ যে ঝড় প্রথম ধেয়ে আসবে, তার নাম হবে অশনি। এই নাম ২০২০ সালে যে তালিকা তৈরি হয়েছিল তার প্রথম সারির ১০ নম্বর নাম। এই প্রথম সারির মোট ৯টি নাম ব্যবহার হয়ে গিয়েছে ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ছিল ২০০৮ সালে তৈরি আট সারি তালিকার শেষ ঝড়। তারপর ২০২০ সালে প্রকাশিত ১৩ সারি তালিকার নাম ব্যবহার করে হচ্ছে।
প্রথম সারির চারটি ঝড় অপেক্ষায় রয়েছে
নতুন তালিকার ন'টি ঝড় ইতিমধ্যেই বয়ে গিয়েছে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর দিয়ে। ২০২০ সালেও আম্ফান-সহ পাঁচটি ঝড় বয়ে যায়। অর্থাৎ আম্ফান বাদে বাকি চারটি ঝড়ের নামকরণ হয় নতুন তালিকা থেকে। আর ২০২১ সালে বয়ে যাওয়া পাঁচটি ঝড় নিয়ে মোট ৯টি নাম ব্যবহার হল ২০২০-র তালিকা থেকে। তালিকার প্রথম সারির চারটি ঝড় অপেক্ষায় রয়েছে।
তালিকা মেনে বছরের প্রথম ঝড় হবে ‘অশনি'
২০২২-এ ঝড়ের মরশুম শুরু হওয়ার পর প্রথম ঝড় তৈরি হতে চলেছে বঙ্গোপসাগরের বুকে। রবিবারের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয় কি না। আবহবিদদের পূর্বাভাস ছিলই মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত দু-তিনটি সাইক্লোন বাসা বাঁধবে বঙ্গোপসাগরের বুকে। তা মিলে যেতে চলেছে এবার। এই মে মাসে তৈরি ঝড়টির সেই তালিকা মেনে নামকরণ হবে 'অশনি'।
তালিকার প্রথম সারির দশম নাম অশনি
২০২০ সালে তৈরি তালিকার প্রথম সারির দশম নাম অশনি। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তার নাম হবে অশনি। এরপর এই তালিকায় বাকি তিন নাম সিতরং, ম্যানডৌস ও মোচা। অশনি নামটি দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাকি তিন নাম যথাক্রমে থাইল্যান্ড, আরব আমিরশাহী ও ইয়েমেনের। তারপর শুরু হবে দ্বিতীয় সারির নামের ব্যবহার।
যে নিয়ম মেনে হয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ
নামকরণের নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে তালিকার উপরে। তারপর একে একে ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, আরব আমিরশাহী ও ইয়েমেনের পালা নাম দেওয়ার। ২০২০-তে তৈরি তালিকার দ্বিতীয় সারিতে ১৩টি দেশ যে নামের তালিকা তৈরি করেছেতা হল- বিপর্যয়, তেজ, হামুন, মিধিলি, মিচাউঙ্গ, রিমাল, আসনা, দানা, ফেঙ্গাল, শক্তি, মোনথা, সেনইয়ার ও দিতোয়া।