হাতির হানা রুখতে ঔষধি চাষে জোর দিয়েছেন বনাধিকারিকরা, পরীক্ষামূলক চাষ চলছে মেদিনীপুরে
ধান, আলু চাষের পরিবর্তে ঔষধি গাছের ক্ষেত তৈরি করলে হাতি লোকালয়ে আসা কমিয়ে দেবে। সেই কারণে পরীক্ষামূলকভাবে নিজেরাই ঔষধি গাছ চাষ করেছেন বনাধিকারিকরা
হাতির হানা রুখতে হিমশিম বনাধিকারিকরা এবার বিকল্প রাস্তায় হেঁটে ঔষধি গাছ লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। ধান, আলু চাষের পরিবর্তে ঔষধি গাছের ক্ষেত তৈরি করলে হাতি লোকালয়ে আসা কমিয়ে দেবে। সেই কারণে পরীক্ষামূলকভাবে নিজেরাই ঔষধি গাছ চাষ করেছেন। এই কাজে সফল হয়ে এলাকাবাসীকে শস্য চাষ ছেড়ে ঔষধি চাষে মনোনিবেশ করতে পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
সম্প্রতি জঙ্গলমহলে প্রতিদিন হাতির হানায় মৃত্যু ঘটছে। গত ১৫ দিনে ১০ জন সাধারণ নাগরিক হাতির হানায় প্রাণ হারিয়েছেন। একটি গাড়িকে উল্টে দিয়েছে হাতির পাল। তারপর হাতির তাণ্ডবে শস্যহানি, ক্ষয়ক্ষতি তো লেগেই রয়েছে। বনাধিকারিকদের অভিমত, পর্যাপ্ত পরিমাণে পছন্দমতো খাবার পেয়ে যাওয়ায় আকছার হাতি চলে আসছে লোকালয়ে। তাই হাতির পাল যাতে না লোকালেয় ঢুকে ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে তার জন্যই বিকল্প ব্যবস্থার পথে হাঁটছেন তাঁরা।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই বন দফতরের আধিকারিকরা স্থির করেন, জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় শস্য চাষ না করে ঔষধি গাছ, হলুদ, আদা, লঙ্কা চাষ শুরু করবেন তাঁরা। সে জন্য নিজেদের ১৫ একর জায়গা তাঁরা বেছে নেন মেদিনীপুরের নয়াগ্রামে। সেখানে ঔষধি গাছ অর্থাৎ আমলকি, বহেড়া, হরিতকির চাষ করা হয়। একেবারে হাতেনাতে ফল পান তাঁরা। দেখা যায়, আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক শস্যহানি করলেও, ওই ঔষধি গাছের কোনও ক্ষতি করেনি হাতির দল। এমনকী ওই ক্ষেতে তারা ঢোকেওনি।
তাই বিকল্প হিসেবে ঔষধি চাষকে গুরুত্ব দিতে চাইছে বন দফতর। জঙ্গলমহলের মানুষের কাছে তাঁরা এই বার্তা ইতিমধ্যেই পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সে ভাবে সাড়া পড়েনি জনমানসে। তাই এবার মেদিনীপুরের চারটি ডিভিশনে ১২৫ হেক্টর জমিতে ঔষধি গাছের চাষ শুরু করছে বন দফতরই। গ্রামের মানুষের মধ্যে বিকল্প চাষে আগ্রহ সৃষ্টির জন্যই বন দফতর এই উদ্যোগ নিয়েছে। বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে নিয়েই বন দফতর নিজেদের জমিতে ঔষধি গাছ লাগাচ্ছে। মেদিনীপুর, খড়গপুর, গড়বেতা, শালবনী ডিভিশনে এই মেডিসিনাল প্ল্যান্ট লাগানো হচ্ছে। পরে জঙ্গলমহলের অন্য জেলাগুলিতেও এই চাষ করা হবে।
নিজেদের জমিতে চাষ করে ফসল বিক্রির লভ্যাংশ বন সুরক্ষা কিমিটির সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে গ্রামের মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে চান তাঁরা। দেওয়ার আমলকি, বহড়া, হরিতকি, অ্যালোভেরা, হলুদ চাষের পর উৎপাদিত ফসল বিভিন্ন ভেষজ প্রস্তুতকারক সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ওই সংস্থা গ্রামে এসে ওইসব ঔষধি ফসল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এখন সমস্ত মানুষ যদি এই ধরনের ঔষধি চাষের দিকে ঝোঁকেন, তাহলে হাতি খাবার না পেয়ে লোকালয়ে কম আসবে। কৃষকদের লাভও হবে পর্যাপ্ত।
লোকালয়ে এলে হাতি আর ফিরে যেতে চাইছে না, তার একটা কারণ হল পর্যাপ্ত খাবার। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের মাঠে পছন্দমতো খাবার সহজেই পেয়ে যাচ্ছে হাতির দল। সেই পথটাই এবার বন্ধ করে দিতে হবে। সে জন্য সাধারণ মানুষের সাহায্য জরুরি। তাহলেই হাতি আসার সংখ্যা কমে যাবে। দলমা পাহাড়ে ফিরে যাওয়ার পথ সুগম হবে।