মুখ্যমন্ত্রী হয়ে পার্টি অফিস 'পুনর্দখল' করছেন মমতা! এ কী দৃষ্টান্ত তিনি তৈরী করছেন রাজ্যে?
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নৈহাটিতে বিজেপির পার্টি অফিস 'পুনর্দখল' করে গেরুয়া রঙের উপরে নিজের দল তৃণমূলের প্রতীক এবং নাম লেখার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে জাতীয় সংবাদমাধ্যমে।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নৈহাটিতে বিজেপির পার্টি অফিস 'পুনর্দখল' করে গেরুয়া রঙের উপরে নিজের দল তৃণমূলের প্রতীক এবং নাম লেখার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে জাতীয় সংবাদমাধ্যমে। উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটী, কাঁচরাপাড়া, ভাটপাড়া ইত্যাদি জায়গায় লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই গণ্ডগোল চলছে এবং ওখানকার ব্যারাকপুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী দলেরই প্রাক্তন সদস্য অর্জুন সিং-এর কাছে হেরে যাওয়ার পরে মমতা স্বয়ং নৈহাটী পুরসভার সামনে বিক্ষোভ অবস্থান করেন। দাবি ছিল ওই অঞ্চলে বিরোধীদের দাপটে ঘরছাড়া তৃণমূল সমর্থকদের ফিরিয়ে আনা। এরই মধ্যে, মমতার সঙ্গে "জয় শ্রীরাম" স্লোগান দেওয়া কিছু লোকের সঙ্গেও ঝামেলা বাধে রাস্তার উপরে। নিজের কনভয় থেকে একাধিকবার নেমে ওই স্লোগানমুখী ভিড়ের দিকে তেড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী।
একজন মুখ্যমন্ত্রী অন্য পার্টির অফিস দখল করছেন, এ বড়ই দৃষ্টিকটু
কিন্তু রাজনৈতিক বাদানুবাদ যাই হোক না কেন, বিপক্ষের পার্টি অফিসে গিয়ে তার 'পুনর্দখল' নিচ্ছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী, এই দৃশ্য বড়ই কটু। বঙ্গের রাজনীতিতে পার্টি অফিস দখল-পুনর্দখলের খেলা নতুন কিছু নয় কিন্তু তাই বলে স্বয়ং রাজ্যের মুখ্য প্রশাসক যদি নেমে পড়েন এই দলীয় সংঘাতের মধ্যে, তাহলে রাজ্যবাসীর কাছে তা বিশেষ ভরসার কথা নয়।
লোকসভা নির্বাচনের আগে ও পরে মমতার আচার আচরণে যতটা না প্রশাসক, তার চেয়ে অনেক বেশি চোখে পড়ছে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়টি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্বন্ধে তিনি যেভাবে কথা বলছেন তাতে তাঁকে বিপক্ষের এক রাজনীতিবিদের বাইরে আর কিছু মনে করছেন না মমতা সেকথা পরিষ্কার। পাশাপাশি, হারানো জমির পুনরুদ্ধার করার যে হুমকি দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, তা দলীয় আধিকারিকদের মুখে মানায়। তিনি রাজ্যের সর্বেসর্বা হয়ে এমন ভাষার ব্যবহার করছেন কেন?
জাতীয় সংবাদমাধ্যমে নিজের ভাবমূর্তি নিজেই ছোট করলেন মমতা
এই কেন-র উত্তর মমতাদেবী নিজেই জানেন কিন্তু জনসমক্ষে তিনি যেভাবে বিপক্ষের পার্টি কার্যালয়ের পুনর্দখল করে এক বেনজির দৃষ্টান্ত তৈরী করলেন, তা রাজ্যের রাজনীতির ভবিষ্যতের পক্ষে শুভ ইঙ্গিত নয়। হয়তো সেই কার্যালয়টি একসময়ে তৃণমূলেরই ছিল কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নিজে পুনর্দখলের অভিযানের মধ্যমণি হয়ে সমস্ত সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে যেভাবে উঠে এলেন, তা একজন রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসকের শোভা পায় না। নির্বাচনে ভালো-খারাপ ফল হয়েই থাকে, কিন্তু মমতা যে রকম প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন ২৩ মে ফল বেরোনোর পরে, তাতে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না।