ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হলেও চিনের ভয়ের কিছু নেই, জানাচ্ছে সেদেশের সংবাদমাধ্যম
যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবর চিনকে কড়া শাসানি দিয়ে এসেছেন, কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন চিনকে যথেষ্ট আশ্বস্ত করেছে
পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলি যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্ব নিয়ে বেশ শঙ্কিত, তখন স্বাভাবিকভাবেই চিন বেশ উৎসাহিত।
এমনিতেই সাম্প্রতিককালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে আমেরিকার পুরোনো মিত্র ফিলিপিন্স এবং মালয়েশিয়া চিনের দিকে ঝোঁকার ফলে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার 'এশিয়া পিভট' নীতি বেশ ধাক্কা খেয়েছে। দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে চিনের সঙ্গে আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশের পড়শী দেশের সংঘাত যখন তুঙ্গে, তখন ম্যানিলা এবং কুয়ালা লামপুরের নীতিবদল বেজিংকে আস্বস্ত করে। আর এবার তারা তাকিয়ে রয়েছে নতুন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প কী করেন।
ট্রাম্প এবছরের মার্কিন নির্বাচনের প্রচারে যেমন বারবার চিনের বিরোধিতা করে এসেছেন, তেমনি তাঁর "আগে আমেরিকার স্বার্থ দেখব" বচন খুব আস্বস্ত করেনি জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো পূর্ব এশিয়াতে মার্কিন মিত্র দেশগুলি যাদের নিজের নিরাপত্তার খাতিরে ওয়াশিংটনের উপর নির্ভর করে থাকতে হয়, তাদেরকেও।
অতএব,
ট্রাম্প
এখন
কোনদিকে
কী
করেন,
তার
উপর
চিন
খুব
সজাগ
দৃষ্টি
রেখেছে।
গত
বৃহস্পতিবার
(নভেম্বর
১০)
চিনের
'গ্লোবাল
টাইমস'
পত্রিকায়
প্রকাশিত
"চায়না
স্ট্রং
এনাফ
টু
কোপ
উইথ
ট্রাম্প
ভিক্ট্রি"
শীর্ষক
সম্পাদকীয়তে
বলা
হয়
যে
ট্রাম্প
আমেরিকার
রাষ্ট্রপতিত্ব
পেলেও
চিনের
খুব
একটা
ভয়
পাওয়ার
কারণ
নেই।
আর
তার
কারণ
অবশ্যই
ওই
অঞ্চলের
ছোট
দেশগুলি
ক্রমে
ওয়াশিংটন
নয়,
বেজিং-এর
দিকেই
ঝুঁকেছে।
ফিলিপিন্স এবং মালয়েশিয়া চিনের দিকে ঘেঁষেছে বলে বেজিং-এর উদ্বেগ অনেকটাই কম
ফিলিপিন্স এবং মালয়েশিয়ার পদক্ষেপ যেমন বেশ চোখে পড়েছে, কম্বোডিয়া এবং লেওসও একই নীতি নিয়েছে সূক্ষ্মভাবে হলেও। অর্থাৎ, চিনকে ঘেরাও করার যে নীতি আমেরিকার পরিকল্পনায় ছিল, তা বাস্তবায়নের পথে এখন বড় বাধা দেখা দিয়েছে।
গ্লোবাল টাইমস-এর প্রতিবেদনটি এও বলেছে যে মালয়েশিয়া যে তার প্রতিরক্ষা খাতে বিরাট কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আখেরে লোকসান হবে মার্কিনীদেরই কারণ কুয়ালা লামপুরের সঙ্গে ওয়াশিংটনের যে সামরিক প্রকল্প সম্পাদনের কথা ছিল, এর ফলে তা ব্যাহত।
মালয়েশিয়া চিনের দিকে ঝোঁকার ফলে কুয়ালা লামপুরের নিয়ন্ত্রণে থাকা অতি গুরুত্বপূর্ণ মালাক্কা প্রণালী, যার মধ্যে দিয়ে চিন তেল আমদানি করে, সুরক্ষিত থাকবে বলেও বেজিং হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। পাশাপাশি, গ্লোবাল টাইমস এও বলেছে যে ফিলিপিন্স বেঁকে বসাতে ভিয়েতনাম-ফিলিপিন্স-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে কৌশলগত অক্ষ তৈরি করার যে পরিকল্পনা করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনকে ঘিরতে, তাও ব্যর্থ হবে।
"মার্কিন সামরিক প্রভাবের কৌশল থেকে চিনের পরিকাঠামোগত প্রভাববিস্তারের কৌশল বেশি কার্যকরী"
চিনের সংবাদপত্রটি এও বলেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পমূলক অর্থনৈতিক প্রভাব এখন অনেকটাই স্তিমিত আর তার ফলে ফিলিপিন্সের মতো উন্নতিকামী দেশ এখন চিনের আশীর্বাদ পেতে বেশি আগ্রহী। তাতে বলা হয় যে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে প্রভাববিস্তারের কৌশলের থেকে চিনের পরিকাঠামো তৈরি করে প্রভাব বাড়ানোর কৌশল বেশি সফল।
ফিলিপিন্সে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি সেদেশের দারিদ্রমোচনে কোনও সাহায্যই করেনি কিনতু চিনের পরিকাঠামো তৈরির ফলে অনেক উপকৃত হবে এই গরিব দেশগুলি। গ্লোবাল টাইমস-এর মতে, চিনের এই কৌশল আফ্রিকায় সাফল্য পেয়েছে আর তাতে নড়েচড়ে বসে আমেরিকাও সেখানে আফ্রিকম তৈরি করেছে। লক্ষ্য, চিনের ক্রমশ বেড়ে চলা প্রভাব খর্ব করা।
জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ঠিক করুক তারা কার পক্ষে যাবে
পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াকেও বিঁধতে ছাড়েনি গ্লোবাল টাইমস। বলেছে আসিয়ান-এর সদস্য দেশগুলি যদি আস্তে আস্তে চিনের দিকে ঝোঁকে, তাহলে টোকিও এবং সিওল একঘরে হয়ে পড়বে। তাদেরও তখন ঠিক করতে হবে কার সঙ্গে থাকা বেশি সুবিধের: আমেরিকা না চিন।
গ্লোবাল টাইমস জানায় যে সম্প্রতি ফিলিপিন্সের মার্কিন-বিরোধী রাষ্ট্রপতি রদ্রিগো দুতার্তের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তাঁকে তাঁর মার্কিন বিরোধিতার জন্য কিছু বলেননি। চিনের পক্ষে সেটা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক বলে বোঝাতে চেয়েছে গ্লোবাল টাইমস।