চোদ্দতে চা-ওয়ালা, উনিশে চৌকিদার: ভোট জিততে নরেন্দ্র মোদীর 'সাব-অল্টার্ন' পরিচয় ধারণ
পাঁচ বছর আগে যখন নরেন্দ্র মোদী দিল্লির তখতে পাখির চোখ করছেন, তখন তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন 'চা-ওয়ালা'-র আশ্রয়।
পাঁচ বছর আগে যখন নরেন্দ্র মোদী দিল্লির তখতে পাখির চোখ করছেন, তখন তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন 'চা-ওয়ালা'-র আশ্রয়। কংগ্রেসের এক নেতা উন্নাসিকতার পরিচয় দিয়ে যখন মোদীর "চা-ওয়ালা"-র অতীত ধরে তাঁকে কটাক্ষ করেন, মোদী এবং তাঁর বিজেপি সেই সুযোগটিকে দু'হাতে লুফে নেন এবং ইতিহাস গড়েন।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে "চা-ওয়ালা" মোদী শরণাপন্ন হয়েছেন "চৌকিদার" মোদীর। প্রচারে বলছেন যে তিনিই জনগণের চৌকিদার -- দেশের সুরক্ষার চাবিকাঠি তাঁরই হাতে। এমনকী, মোদীকে অনুসরণ করে বিজেপির ছোট-বড়-মাঝারি নেতারাও সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেদের নামের আগে "চৌকিদার" আদ্যক্ষরটি যোগ করছেন, দেখাচ্ছেন যে প্রধানমন্ত্রীর মতো তাঁরাও দেশের সেবায় চৌকিদারিত্ব করতে পিছপা নন। সব মিলিয়ে, এক বড়সড় নাট্যরূপ মঞ্চস্থ করতে এই মুহূর্তে ব্যস্ত বিজেপি এবং তাঁদের শীর্ষ নেতা। লক্ষ্য, আগেরবারের "চা-ওয়ালা"-র মতো এবারের "চৌকিদার" স্লোগানের মাধ্যমে ভোটের বৈতরণী পার করা।
মোদীর এই "চৌকিদার" ন্যারেটিভ-এর বেশ কিছু তাৎপর্য রয়েছে এবারের নির্বাচনে। প্রথমত, আগেরবারের "চা-ওয়ালা"র আর্তি যদি ছিল একটিবার সুযোগ পাওয়ার জন্যে, এবারের "চৌকিদার"-এর আর্তি হচ্ছে আরেকটি বার নিজের কাজ করতে দেওয়ার সুযোগের জন্যে। অর্থাৎ, ২০১৪-র স্লোগান যদি ছিল প্রথমবার ক্ষমতায় আসার কথা ভেবে, এবারে তা হচ্ছে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার ভূতকে হারানোর লক্ষ্যে।
চা-ওয়ালা এবং চৌকিদারের মধ্যে কিছু মিল রয়েছে
তবে, দু'টি ক্ষেত্রেই একটি মিল রয়েছে। আর তা হল, "চা-ওয়ালা" এবং "চৌকিদার" দু'টি পরিচয়ই হচ্ছে সব-অল্টার্ন, অন্তত সামাজিক নিরিখে। এই দু'টি পরিচয় পরিধান করলে মোদী জনসমক্ষে নিজেকে এলিট রাজনীতির বিপরীত বিন্দুতে দাঁড় করাতে পারেন এবং যেহেতু এদেশে এলিট রাজনীতির অন্যতম বড় পরিচয় এখনও নেহেরু -গান্ধী পরিবার, তাই একটি সাব-অল্টার্ন পরিচয় তৈরি করতে পারলে আখেরে তা মোদীকে রাজনৈতিকভাবেই সাহায্য করে। বিজেপির এই নেতা বরাবরই প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের প্রাণকেন্দ্র ওই পরিবারকে পরিবারবাদের রাজনীতি করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন; কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে "শাহজাদা" এবং "নামদার" বলে কটাক্ষ করেছেন এবং এই ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করতে তাঁর "চা-ওয়ালা" এবং "চৌকিদার" বিশেষণের মতো কার্যকরী আর কিছু নেই।
নিজেকে চৌকিদার বলে মোদী দেখছেন দুর্নীতির প্রশ্নে তাঁর আপোসহীনতা
দ্বিতীয়ত, "নিজেকে "চৌকিদার" বলে মোদী নিজেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক অবতার হিসেবে ভারতী রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা দিতে চেয়েছেন। যেহেতু মোদী সরকারের পূর্বসূরি ইউপিএ ২ সরকার দুর্নীতির অভিযোগে আকণ্ঠ ডুবে ছিল এবং মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এখনও সেভাবে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি, অন্তত কংগ্রেস শিবিরের তরফ থেকে ছাড়া, তাই মোদী চাইছেন সেই ভাবমূর্তিকে অপ্রতিহত রাখতে যাতে ভোটবাক্সে ফায়দা তোলা যায়।
অবশ্য এত কিছু করেও মোদী এ ব্যাপারটিকে ঢাকতে পারেননি যে মুখে সাব-অল্টার্নদের কথা বললে বিজেপি আসলে সেই উচ্চবর্ণ-বানিয়াদের দল আর তাদের কাছে দলিত-গরিবদের কথা ভেবে রাজনীতি আসলে এক নির্বাচনী কৌশল। অন্তত যদ্দিন কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি শক্তিশালী নেতৃত্ব তুলে না আনতে পারছে, তদ্দিনে বিজেপির এই কৌশলের সামনে কোনও চ্যালেঞ্জ নেই।