বেরিয়ে পড়েছে চা বাগানের কঙ্কালসার ছবি, দায় এড়াতে পারে কি মমতার সরকার?
সবে উত্তরবঙ্গে ঘর গোছাতে শুরু করেছে শাসকদল। এরই মধ্যে চা-বাগানের এক নিবন্ধ 'দিশেহারা' করে ছেড়েছে বাংলার উন্নয়নের কাণ্ডারিকে। উন্নয়নের কাণ্ডারি সেই উন্নয়ন-প্রশ্নেই বেজায় অস্বস্তিতে। গোষ্ঠীকোন্দল তো মাথাচাড়া দিয়েইছে, হাটে হাঁড়ি ভেঙে যাওয়ায় গর্তে ঢুকে যাওয়া বিরোধীদের হাতে এসে পড়েছে মোক্ষম এক অস্ত্র। সেই অস্ত্রে শান দিয়ে পুজো মিটলেই হয়তো ঝাঁপিয়ে পড়বে কংগ্রেস-সিপিএম।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মমতার সরকারের ক্যাচ লাইন হয়ে উঠেছিল, 'পাহাড় হাসছে, জঙ্গলমহল হাসছে'। কোনও সন্দেহ নেই, পাহাড় থেকে জঙ্গলমহলের উন্নয়নে দিশা দিয়েছেন তিনি। পাহাড় ও জঙ্গলমহলে হাসি ফুটিয়েছেন তিনি। বিগত পাঁচ বছরে দুই ক্ষেত্রেই উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছেন। কিন্তু প্রদীপের নীচেও তো থাকে ঘন অন্ধকার। এবার শারদ উৎসবের আগে সেই অন্ধকার আবার প্রকট হয়ে উঠেছে। আর সেই অন্ধকারকে প্রকট করার হোতা শাসক দলেরই মুখপত্র।
সম্প্রতি শাসকদলের মুখপত্রের শারদ সংখ্যায় একটি নিবন্ধে প্রকাশিত হয়েছে চা বাগানের শ্রমিকদের দুর্দশার কথা। 'শ্রমের চা পাতায় গুঁড়ো হওয়া শ্রমিকের প্রাণকথা' শীর্ষক একটি নিবন্ধ'। সেখানে বর্ণিত হয়েছে চা বাগান শ্রমিকদের অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটানোর চিত্র। আদতে প্রকাশ হয়ে পড়েছে, বিগত সরকারের আমলে যে দুর্দশা ছিল, উন্নয়নের ধ্বজাধারী সরকার সেই ঘায়ে এতটুকু মলম লাগাতে পারেনি। এতদিন অস্বীকার করে এসেছে তৃণমূল, অস্বীকার করে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু দলের মুখপত্রেই সেই চরম সত্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আর লজ্জা লুকোবে কোথায়।
উপায় না দেখে ভুলবশতঃ নিবন্ধটি ছাপা হয়ে গিয়েছে বলে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছে তারা। না, শুধু ভুল স্বীকার করেই ক্ষান্ত থাকেনি তৃণমূল। আসরে নামতে হয়েছে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তড়িঘড়ি চা ডিরেক্টরেট ভেঙে দিয়েছেন মমতা। ডিরেক্টরেটের মাথা থেকে সৌরভ চক্রবর্তীকে সরিয়ে দিয়ে, বসিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু তা করেই কি এই কাটা ঘায়ে মলম দেওয়া যাবে? বরং একটা ক্ষত লুকোতে গিয়ে বেরিয়ে পড়ল আর একটা ক্ষত। সৌরভ চক্রবর্তী, যাঁকে ঘটা করে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আনা হয়েছিল, তিনি যে এখন গুডবুকে নেই, তিনি যে ক্রমেই সাইডে চলে যাচ্ছেন, তা স্পষ্ট হয়ে গেল। এরপর কি বিরোধীরা চুপ করে বসে থাকবে। এই ইস্যুকে অস্ত্র করবে না আন্দোলনে।
কতটা
ফলপ্রসূ
হবে
সেই
আন্দোলন,
তা
ভবিষ্যৎ
বলবে।
কিন্তু
এটা
যে
মোক্ষম
অস্ত্র
হয়ে
পুজোর
পরই
প্রচারের
মোড়কে
হাতিয়ার
করেব
কংগ্রেস
ও
সিপিএম,
তা
বলাই
বাহুল্য।
এখন
থেকেই
তাল
ঠুকছে
তারা।
শুধু
পুজো
বলে
চুপ।
পুজো
মিটলেই
ঝড়
উঠবে।
উত্তাল
হবে
বিধানসভাও।
তা
বুঝে
এখন
থেকেই
অস্বস্তিতে
পড়েছে
শাসকদল।
উত্তরবঙ্গের
চা-বাগানগুলিতে
চা-শ্রমিকদের
বর্তমান
দুর্দশাগ্রস্থ
জীবনের
কথা
সরকার
অস্বীকার
করলেও,
তা
নির্মম
সত্য।
ওই
নিবন্ধেই
প্রতিবেদক
দাবি
করেছেন,
গত
দেড়
বছরে
অন্তত
চারশো
শ্রমিক
ও
তাঁদের
পরিবারের
সদস্য
অনাহারে-অপুষ্টিতে
মারা
গিয়েছেন।
বন্ধ চা বাগানে মৃত্যুমিছিল চলছে। সরকার রেশন বরাদ্দ করেছে ঠিকই, কিন্তু সেই রেশন চা বাগানের শ্রমিকদের পরিবারে পৌঁছছে না। আর এই রেশন অনিয়মিত ও অপরিমিত বলেও অভিযোগ রয়েছে। তারপর রাস্তাঘাটা, পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে একরাশ সমস্যা তো আছেই। এক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সংঘাত রয়েছে। কিন্তু সেই সংঘাতের বলি কেন হবে ওই গরিব মানুষগুলো, প্রশ্ন তো উঠবেই। আর এই প্রশ্নের উত্তর তো দিতে হবে রাজ্য সরকারকেই। কেননা এ রাজ্যেই তো অনাহারের ছবি, অনুন্নয়নের ছবি প্রকট হচ্ছে।
স্পষ্ট
হয়ে
উঠছে
গভীর
একটা
ক্ষত।
পাঁচ
বছর
তো
গেল,
কী
করলেন
তাহলে
মমতাময়ী
মুখ্যমন্ত্রী।
শুধুই
কি
আই-ওয়াশ।
তাহলে
এই
আই
ওয়াশ
করে
আর
কতদিন
কাটবে!
তার
প্রভাব
তো
অদূর
ভবিষ্যতে
পড়বেই
সরকারে,
তা
থেকে
রক্ষা
পাবে
না
শাসকদল।
অভিযোগ
উঠছে,
চা-বাগানগুলি
বন্ধ
হয়েছে।
বন্ধ
হয়েছে
ভাতা-অনুদান।
সরকারী
প্রতিশ্রুতিই
সার,
কোনও
বাস্তবায়ন
ঘটেনি।
চা-শ্রমিকদের
দিন
কাটছে
অনাহারে,
অবহেলায়,
বিনা
চিকিৎসায়।
তারা
ন্যূনতম
নাগরিক
পরিষেবা
থেকে
বঞ্চিত
তাঁরা।
যুগ যুগ ধরে তাঁরা শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের দলে। এত অভাব নিয়ে লড়াই করতে করতে তাঁরা এক এক করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। খাদ্য, বস্ত্র এবং স্বাস্থ্য তিনটিই ওখানে আজও অসুরক্ষিত। কিন্তু শ্রমিকদের স্বার্থে লড়াই করার অঙ্গীকার নিয়ে কেউ এগিয়ে আসছে না। তাই তো জঙ্গলমহল বা পাহাড়কে হাসানোর চেষ্টা হলেও, চাপা কান্না চা বাগানের অন্ধকারে।