স্যাম পিত্রোদাকে ৮৪-র মন্তব্য নিয়ে ক্ষমা চাইতে বলে রাহুল গান্ধী দেখালেন তিনি এখন অনেক পরিণত
কংগ্রেস নেতা স্যাম পিত্রোদার উনিশশো চুরাশি সালের শিখ নিধন যোগ্য প্রসঙ্গে "হয়েছিল তো হয়েছিল" মন্তব্যে চারদিকে বিতর্কের ঢেউ খেললে ব্যাট হাতে নেমে পড়েন স্বয়ং দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী।
কংগ্রেস নেতা স্যাম পিত্রোদার উনিশশো চুরাশি সালের শিখ নিধন যোগ্য প্রসঙ্গে "হয়েছিল তো হয়েছিল" মন্তব্যে চারদিকে বিতর্কের ঢেউ খেললে ব্যাট হাতে নেমে পড়েন স্বয়ং দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী। একটি ফেসবুক পোস্টে রাহুল বলেন যে পিত্রোদার মন্তব্য কোনঅমতেই সমর্থনযোগ্য নয় এবং তাঁর ওই মন্তব্যের জন্যে তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত। ইন্ডিয়ান ওভারসিজ কংগ্রেস-এর অধ্যক্ষ পিত্রোদা পরে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলেন যে তিনি বলতে চেয়েছিলেন যে অতদিন আগের কথা এখন না মনে করে সামনের দিকে তাকানো উচিত। তিনি বলেন যে তাঁর বক্তব্যকে নিয়ে অযথা জলঘোলা করা হয়েছে।
এখানে অবশ্য বিষয় পিত্রোদা নয়। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানাসময়ে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করেই থাকেন কিন্তু এখানে উল্লেখযোগ্য যেভাবে রাহুল গান্ধী ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলেছেন।
এই শিখ দাঙ্গার প্রসঙ্গে ২০১৪ সালে অর্ণব গোস্বামীর সাক্ষাৎকারে মিনমিন করেছিলেন রাহুল
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে তৎকালীন কংগ্রেসের সহ-অধ্যক্ষ রাহুল গান্ধী সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেটিই ছিল তাঁর প্রথম কোনও সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকার। সেই সাক্ষাৎকারে অর্ণব তাঁকে বারবার শিখ দাঙ্গা নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রতিবারই আকুল পাথারে পড়েন রাহুল। তাঁর বক্তব্যের কোনও সঠিক দিশা পাওয়া যায় না; চুরাশির দাঙ্গায় কংগ্রেসের হাত ছিল কী না সেই প্রশ্নে তাঁর উত্তর ছিল অপরিষ্কার। মিনমিনে গলায় তিনি যে উত্তর দিয়েছিলেন, তা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি কারওরই।
চোদ্দোর রাহুল ঊনিশে অনেক আত্মবিশ্বাসী এবং পরিণত
কিন্তু এবারে রাহুল এই বিষয়ে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখাননি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ বিপক্ষের নানা নেতা এমনকী, কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং এই ব্যাপারে উষ্মাপ্রকাশ করেন। পিত্রোদার মন্তব্যকে নিয়ে অহেতুক তর্কাতর্কিতে না গিয়ে রাহুল সোজা মেনে নিয়েছেন যে এই মন্তব্য অসংবেদনশীল এবং এর জন্যে ক্ষমাপ্রার্থনা জরুরি।
স্যাম পিত্রোদার একটি ছেঁদো উক্তিটি রাহুলের কাছে বড় নয়
আসলে ২০১৪ সালের তুলনায় রাহুল এখন অনেক পরিণত। তিনি জানেন যে পিত্রোদার একটা ছেঁদো বক্তব্য নিয়ে শুধুশুধু হৈচৈ করার কোনও মানে হয় না। কয়েকদিন আগেই পশ্চিমবঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে রাহুল বলেছিলেন যে আপাতত তাঁর পাখির চোখের নিশানা মোদী ও বিজেপিকে হারানো এবং তিনি সেই নিয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পাশাপাশি, বিজেপির ক্রমাগত আক্রমণের মুখে রাহুলের কৌশল পাল্টাক্রমণ নয়; বরং সহনশীলতার অবস্থান নেওয়া। সারা দেশজুড়ে যেখানে অসহনশীলতার পারদ ক্রমেই বেড়ে চলেছে, পিত্রোদাকে ক্ষমা চাইতে বলে রাহুল অন্তত প্রতিপক্ষের আক্রমণের মুখ ভোঁতা করে দিতে পারলেন। প্রবল মেরুকরণের রাজনীতিতে এমনতরো অবস্থান নেওয়া বোধহয় খুব অযৌক্তিক কাজ নয়।