For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

যুবভারতীতে ব্রাজিলের মুখোমুখি আর্জেন্টিনা আর ওকি! এ যে দেখি তাপস পাল!!

  • By অমিতাভ প্রামাণিক
  • |
Google Oneindia Bengali News

neymar-and-tapas-pal
উফ, জ্বালিয়ে খেলে। রাত্রে ঘুমানোর জো আছে! এখনও সকাল হয়নি, আলো ফুটব ফুটব করছে, এখনই কে আবার পিঠে চিমটি মতন কাটছে আর কানের কাছে গজর গজর করছে উঠুন উঠুন করে। ভেতরে ঢুকলো কী করে, বাইরের ঘরের দরজায় ছিটকিনি দিই নি নাকি? বিরক্ত হয়ে চোখ না খুলেই বললাম, কে তুমি? কী চাই?

ইংরাজীতে উত্তর এল, আজ্ঞে স্যার, প্লীজ জলদি উঠুন, আপনাকে প্লেন ধরতে হবে।
- প্লেন? ফর হোয়াট?
- স্যার, আপনাকে স্টকহোম যেতে হবে। প্লীজ উঠে পড়ুন।
- স্টকহোম? আমি তো স্টক মার্কেটের দালালি করি না ভাই।
- না, না, সেজন্যে না। আপনাকে নোবেল দেওয়া হচ্ছে। আজ ডিসেম্বারের ন'তারিখ। কাল সন্ধ্যেয় প্রোগ্রাম, তার মধ্যেই আপনাকে স্টেজে হাজির করতে হবে। প্লীজ আর দেরি করবেন না।
- নোবেল? কীসের জন্যে?
- শান্তির জন্যে স্যার। আপনি যে এতবড় একটা দুর্ঘটনা ঘটার থেকে মানবজাতিকে সেভ করলেন, তার স্বীকৃতিস্বরূপ আপনাকে নোবেল দেওয়া হবে। দুহাজার ছাব্বিশের তো শান্তির জন্যে ক্যান্ডিডেটই পাওয়া যাচ্ছিল না। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, ইওরোপীয়ান ইউনিয়ানের হেড, বিশ্বব্যাঙ্কের সি ই ও - এরা সবাই পেয়ে গেছে। লাস্ট মোমেন্টে আপনি যে কীর্তিটি করে দেখালেন, তার জন্যেই ক্যান্ডিডেট পাওয়া গেল। কাল রাত্রের জরুরী বৈঠকে আপনার নাম প্রস্তাব হতেই উইদাউট কনটেস্টে সিলেক্টেড।
- ধুর, আর প্রাইজ টাইজ নিতে ভাল্লাগে না। রোজ রোজ প্রাইজ নিতে নিতে বোর হয়ে গেছি। প্রতি সপ্তাহে নবান্নে ডাক পড়ে - এই প্রাইজ নিয়ে যাও, ওই প্রাইজ নিয়ে যাও। বঙ্গশ্রী, বঙ্গভূষণ, বঙ্গবিভূষণ, বঙ্গরত্ন, বঙ্গবীরচক্র, বঙ্গতিলক, বঙ্গসেয়ানা, সব পেয়ে গেছি। স্রেফ বঙ্গলিপি খাতা, বঙ্গবাসী কলেজ, বঙ্গলক্ষ্মী লটারী, বঙ্গোপসাগর - এইসব নামে আগে থেকে কয়েকটা জিনিস ছিল বলে ঐ নামে আমাকে কোন প্রাইজ দেয় নি।
- তা হোক স্যার। এ হচ্ছে নোবেল। দ্য বস অফ অল প্রাইজেস।
- আরে ছাড়ো! দেবে তো ঐ কটা ক্রোনার না ইউরো। এখানে গড়িফাতে আমার নামে স্ট্যাচু বসাবে বলে তেত্রিশ হাজার কোটি টাকা স্যাংশন হয়েছে পার্লামেন্টে। বুর্জ খলিফার বিশগুণ সাইজ হবে ওটা। দুবাই থেকে দেখা যাবে।
- তা হোক স্যার। নোবেল ইজ নোবেল।
- বার বার নোবেল নোবেল করো না তো! বেল না বাজিয়ে তো ঘরে ঢুকে পড়েছ! দরজা খুললে কী করে? তোমাকে পাঠালো কে?
- আজ্ঞে স্যার অ্যামাজন ডট কম। আমি ড্রোন এয়ারক্রাফটে এসেছি স্যার, সোজা আপনার ব্যালকনিতে ল্যান্ড করেছি। দরজা খোলার দরকারই হয়নি। প্লীজ উঠুন।
- কী এমন অপরাধ করেছি বাপু যে এই ভোরের কাঁচা ঘুমটা আমার ভাঙালে?
- দারুণ অপরাধ স্যার। আপনি সাড়ে সাত লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচালেন না?

এরা যে কী! সংখ্যা এদের মাথায় ঢুকবে না। সাত লক্ষ তিপ্পান্ন হাজার দুশো ঊননব্বইকে অবলীলায় এরা সাড়ে সাত লক্ষ বলে চালিয়ে দিল এই দু হাজার ছাব্বিশ সালে। ফুটবল বিশ্বকাপের দায়িত্ব পেল ভারত, গত পরশু তার ফাইনাল খেলা ছিল কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। মুখোমুখি ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা। ফাইনালের আগের দিনই বের হল আমার পেপার, যাতে আমি হিসেব করে দেখিয়েছিলাম বৃহত্তর কলকাতায় এখন আটষট্টি লক্ষ বাহাত্তর হাজার ছশো পনের জন ব্রাজিলের সাপোর্টার, আর আর্জেন্টিনার সাপোর্টার তার থেকে তিনশো তেষট্টি জন বেশি। সেটা পড়ে একজন প্রশ্ন পাঠিয়েছিল, আর বাকি ছশো সাতান্ন জন? আমি উত্তর দিলাম, ওরা এখনও মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল।

ফাইনালে স্টেডিয়ামে যথারীতি হলুদ আর নীল-সাদা প্রায় সমানে সমানে। দুপক্ষই ঊর্ধশ্বাসে চ্যাঁচাচ্ছে। বল একবার এদিকে যায় তো পরক্ষণেই এদিকে। নির্দিষ্ট সময়ে ফলাফল ৩-৩। এক্সট্রা টাইমে ১-১। টাইব্রেকার। পাঁচটা করে মোট দশটা শট, নটা হয়ে গেছে। দুই গোলকীপারই একটা করে সেভ করায় ফল এখন ব্রাজিলের অনুকূলে ৪-৩। লাস্ট শট মারবে আর্জেন্টিনা। সেভ হলেই ব্রাজিলের জিত। টান টান টেনশন। আমার কাছে খবর এসেছে যে পক্ষ হারবে, তারা ব্যাপক ঝুটঝামেলা বাধানোর জন্যে রেডি হয়েই আছে। এসে গেছে সেই মুহূর্ত। এক পক্ষ তো হারবেই। শুরু হয়ে যাবে দক্ষযজ্ঞ। রেফারি লাস্ট শটের বাঁশি বাজানোর জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে।

কিছু করার ছিল না। এয়ারব্যাগ টেকনোলজিতে বানানো আমার নাইট্রোজেন বেলুন ফুলতে সময় লাগলো কয়েক মাইক্রোসেকেন্ড। একটা সুইমিং পুলের সাইজের বেলুন। চোখের নিমেষে উড়ে গেল মাঠের ওপরের আকাশে। তার সঙ্গে লাগিয়ে দিয়েছিলাম একটা পুরনো সন্তোষ টেপরেকর্ডার। তা থেকে বজ্রনির্ঘোষে বাজতে লাগলো রেকর্ড করা সেই বাণী - আমার ছেলেদের গায়ে হাত দিলে ছেড়ে দেব না, পকেট থেকে রিভলবার বের করে শ্যুট করে দেব। আমি কলকাতার মাল না, চন্দননগরের মাল। আমার ছেলেদের লেলিয়ে দেব, রেপ করে চলে যাবে...

রবি ঠাকুরের জনগণমন যেমন ন্যাশনাল অ্যান্থেম, বঙ্কিমের বন্দেমাতরম্‌ যেমন ন্যাশনাল সং, এই অডিওটা এখন ন্যাশনাল অ্যালার্টের স্বীকৃতি পেয়েছে। জনগণমন শুনলে যেমন উঠে দাঁড়াতে হয়, এই বাণী কানে গেলেই নিয়ম হচ্ছে উঠে দাঁড়িয়ে চুপচাপ নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হয়। রেফারি এই নিয়ম না মেনে চোঁ চাঁ দৌড় লাগালো দমকল অফিসের দিকে। পরে জানা গেল, উনি বাঙালি, যৌবনে কৃষ্ণনগরের কোন পাড়ার ছেলে ছিলেন। যারা বাড়িতে টিভিতে খেলা দেখছিল, তারা উঠে দাঁড়িয়ে বাথরুমে বা বেডরুমে চলে গেল। যারা গাড়ির মধ্যে এফ এমে খেলার ধারাবিবরণী শুনছিল, তারা চটজলদি রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করে হাতে হাত ধরে মানবশৃংখল বানিয়ে ফেলল। মাঠ তিন মিনিটে খালি হয়ে গেল। সল্টলেক-গড়িয়া মিনিবাস রাস্তা খালি পেয়ে ছুটতে লাগলো ফোর্থ গিয়ারে।

খেলোয়াড়েরা খানিকক্ষণ হতভম্ব হয়ে গেছিল। মিনিট তিনেক পরে ফিফার নির্দেশ শোনা গেল - যুগ্মবিজয়ী।

দশই ডিসেম্বারের সন্ধ্যের প্রোগ্রামে আমাকে জানানো হল, আমি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচিয়ে দিয়েছি। মেডেলটা নিয়ে ফিরছি, দিল্লী থেকে ফোন - আপনার জন্যে মশাই স্ট্যাচুর বাজেট বেড়েই চলেছে। স্ট্যাচুতে এই নোবেলের মেডেলের প্রতিলিপি ঝোলাতে ওরা এখন আরো দুশো কোটি বেশি চাইছে।

চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X