মহারাষ্ট্র, গুজরাতে জিতে বিজেপির এত পুলকিত হওয়ার কারণ আছে কি?
২০১৭ সালের গুজরাত বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপির কম চিন্তা ছিল না। প্যাটেলদের প্রতিবাদ এবং তার মোকাবিলায় মোদীর উত্তরসূরি আনন্দীবেন প্যাটেলের ব্যর্থতা, আম আদমি পার্টির প্রবেশ এবং সম্প্রতি নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুজরাতে গিয়ে মোদীকে চ্যালেঞ্জ করার পরিকল্পনা এবং পতিদের আন্দোলনের নেতা হার্দিকের তাঁর সঙ্গে হাত মেলানোর সম্ভাবনা -- ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে চিন্তায় ছিল কেন্দ্রের শাসকদল।
কিনতু গত রবিবার (নভেম্বর ২৭) গুজরাতে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পুর এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির বিশাল জয়ের (১২৩টি আসনের মধ্যে ১০৭টি দখল করে গেরুয়া বাহিনী) পরে যে মোদী এবং তাঁর সেনাপতি অমিত শাহকে অনেকটাই চিন্তা মুক্ত করল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি তো বলেই দিয়েছেন যে এই ফলাফলই বলে দেয় যে মোদী সরকারের দু'টি সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে -- নিয়ন্ত্রণরেখায় সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এবং ডিমেনটাইজেশন -- মানুষ ভালো চোখেই দেখেছে।

রবিবারের দু'টি পুরসভা এবং একটি তালুক পঞ্চায়েত ছাড়াও জেলা পঞ্চায়েতের নির্বাচনে বিজেপি জয়লাভ করে। নির্বাচনগুলির ফল প্রকাশিত হয় মঙ্গলবার (নভেম্বর ২৯)।
অন্যদিকে, দু'দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যে ক্ষমতার বাইরে থাকা কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ১৬টি আসন।
গুজরাতের আগে মহারাষ্ট্রতেও পুরভোটে সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। আর স্বভাবতই উছ্বসিত বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী মোদীও গুজরাতের ফলের পরে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে অভিবাদন এবং রাজ্যের মানুষকে ধন্যবাদ জানান তাঁর দলের উপরে "আস্থা" দেখানোর জন্য। একগুচ্ছ টুইট করে মোদী বলেন সম্প্রতি দেশজুড়ে হওয়া বিভিন্ন নির্বাচনে বিজেপি ভাল ফল করেছে এবং তার জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন দেশের মানুষকে।
বিজেপি মুখপাত্র ভরত পান্ড্য এই ফলের পরে বিরোধী কংগ্রেসকেও একহাত নেন কালো টাকার ইস্যুতে নেতিবাচক অবস্থান নেওয়া জন্য। নিজেদের হার স্বীকার করে নিলেও রাজ্য কংগ্রেস অবশ্য বলেছে এই স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফলে কিছুই প্রমাণিত হয় না।
কংগ্রেসের পাশাপাশি বিজেপি সমালোচনা করেছে মমতারও। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার যে হুমকি দেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি বলে দেশের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেটা ঠিক করার দায়িত্ব তৃণমূল নেত্রীর নয়, দেশের মানুষের।
মমতাকে কটাক্ষ করে তারা বলে যে জাতীয় স্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও প্রভাব নেই। মোদী গত লোকসভা নির্বাচনে জেতার আগেও তাঁর অনেক বিরোধীকে "মোদী জিতলে দেশ ছেড়ে চলে যাব" বা "রাজনীতি ছেড়ে দেব" জাতীয় মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল। বিজেপির পাল্টা: তাঁরা কেউই তাঁদের কথা রাখেননি।
স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যখন বক্তব্য রাখেন, তখন বুঝতে হয় নোট বাতিলের ইস্যুতে কতটা চাপে তিনি এবং তাঁর দল রয়েছে। একটা নির্বাচনের ফল তাঁদের পক্ষে গেলেই তাঁরা নিশ্চিন্ত বোধ করছেন। কিনতু মোদীর ব্রিগেডকে এটা মাথায় রাখতে হবে যে গুজরাত বা মহারাষ্ট্র প্রায় বিরোধীশূন্য রাজ্য।
মহারাষ্ট্রে বিরোধিতার ভূমিকায় রয়েছে বিজেপিরই জোটসঙ্গী শিবসেনা যারা নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। আর গুজরাতে কংগ্রেসের থেকে হার্দিক প্যাটেল বা আপ-এর প্রতিবাদ বরং বেশি চোখে পড়ে। অতএব, কংগ্রেসের মতো দুর্বল সংগঠনের দলকে হারিয়ে বিজেপির জয়োল্লাস বিশেষ কিছু নজির কিনতু গড়েনি। আর তাছাড়া, পশ্চিমের এই দু'টি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ রাজ্যে দক্ষিণপন্থী রাজনীতির বড় প্রভাব রয়েছে। সেখানে যে বিজেপি জিতবেই, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই।
মোদী এবং তাঁর দল আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন কিনতু লড়াই জিতে গিয়েছেন তা বলা চলে না কিছুতেই।