বিহার: রাম মন্দির নিয়ে হাতাহাতি জেডিইউ, বিজেপির; জোর করে তেলে জলে মিল সম্ভব?
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে নরেন্দ্র মোদীর এনডিএ-র প্রধানমন্ত্রী মুখ হওয়া নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডিইউ প্রধান নীতীশকুমার।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে নরেন্দ্র মোদীর এনডিএ-র প্রধানমন্ত্রী মুখ হওয়া নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডিইউ প্রধান নীতীশকুমার। তিক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে শেষ পর্যন্ত এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে যান নীতীশ, ছিন্ন করেন এক দশকেরও বেশি পুরোনো সম্পর্ক। যদিও 'সাম্প্রদায়িক' মোদীর বিরুদ্ধে 'ধর্মনিরপেক্ষ' নীতীশের সেই লড়াই শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি; নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেন মোদী এবং নিজের গড় বিহারেও মুখ থুবড়ে পড়ে জেডিইউ। তারপর মুখ্যমন্ত্রীত্ব ত্যাগ, পুরোনো বৈরী লালুপ্রসাদের সঙ্গে হাত মেলানো এবং ২০১৫ সালে বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে নীতীশ-লালু-কংগ্রেসের মহাজোটের জয়লাভের পরেও দু'বছরের মধ্যে সেই জোট থেকে বেরিয়ে ফের বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানো -- নীতীশ প্রায় সবকিছুই করে দেখিয়েছেন গত পাঁচ বছরে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এবং রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টির (এলজেপি) সঙ্গে জোট বেঁধে জেডিইউ লড়ছে এবং বিজেপির মতোই তারাও ১৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। পাসোয়ানের দল প্রার্থী দিয়েছে ছয়টি আসনে।
সম্পর্ক আপাতভাবে ভালো মনে হলেও চোরাস্রোতও রয়েছে
এই দু'টি দলের সাম্প্রতিকতম মৈত্রীর মধ্যেও যে চোরাস্রোত বয়ে যাচ্ছে না এমন কথা বলা চলে না। বিহারে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রশাসন সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে বিজেপি অভিযোগ তুলেছে। আবার জেডিইউ বিজেপির উপরে চাপ সৃষ্টি করে বলেছে যে রাজ্যস্তরে তারাই বড় ভাই অতএব এই নির্বাচনে বিহারে নেতৃত্ব দেবেন নীতীশই। এই প্রসঙ্গে বিজেপি-জেডিইউ-র সম্পর্ক কতটা মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিবসেনার মতো হতে চলেছে তা এক্ষুনি বলা না গেলেও আড়ালে যে নেতৃত্বের প্রশ্ন নিয়ে রেষারেষি একেবারেই নেই তা ওই দুই দলের অতিবড় সমর্থকও বলবে না।
কিন্তু শুক্রবার রাজ্যের হাজিপুরে যে ঘটনা ঘটল তা সত্যিই বিস্ময়কর এবং চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে "দল এক হয়েছে, এবারে দিলও এক হবে" জাতীয় বক্তব্য আসলে কতটা ঠুনকো।
জেডিইউ-র মতো দল রাম মন্দির সমর্থন করলে ঘটবে রাজনৈতিক মৃত্যু
শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, দুই শরিকদলের ডজনখানেক সমর্থক হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। কারণ, রাম মন্দির ইস্যুতে তাদের তীব্র মতানৈক্য। রাম মন্দির এবারের নির্বাচনী প্রচারের মূল বিষয় হওয়া উচিত নয়, জেডিইউ নেতা সঞ্জয় বর্মা এমন মন্তব্য করলে প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে বিজেপি সমর্থকরা। এবং তা ক্রমশ মারামারির চেহারা নেয়। ওই পর্বে জেডিইউ এবং বিজেপির সমর্থকরা তাঁদের তৃতীয় শরিক এলজেপি-র প্রার্থীর জন্যে রণনীতি তৈরী করছিলেন আর সেখানেই হয় বজ্রপাত। এলজেপি প্রার্থী পশুপতি কুমার পরশ যিনি পাসোয়ানের ভাই পরে এই হাতাহাতির ঘটনাকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করলেও রাম মন্দির এবং সংবিধানের ধারা ৩৭০ এবং ৩৫এ-র মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলি নিয়ে বিজেপি এবং জেডিইউ-র মধ্যে দূরত্ব সহজে ঘোচার নয়, তা প্রমাণিত হল ফের। জেডিইউ-র এবারের নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশিত হওয়ার কথা আগামীকাল, ১৪ এপ্রিল, এবং রাম মন্দির কিংবা জম্মু ওর কাশ্মীরের তকমা বা নাগরিক বিল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিহারের মুখ্য শাসক দল কী বলে এবং বিজেপিরই বা কী প্রতিক্রিয়া হয়, সেটাই এখন দেখার।
বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে অসুবিধায় পড়েছে জাতি-সংখ্যালঘু রাজনীতি করা দলগুলি
বিহারের দুই শাসক শরিকের সমর্থকদের মধ্যে এই হাতাহাতি একটি বড় প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায় আমাদের। আমরা এর আগে ওডিশা এবং জম্মু ওর কাশ্মীরে দেখেছি বিজেপির সঙ্গে জোট গড়তে গিয়ে কীভাবে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল। কারণ একটাই, গেরুয়াবাহিনীর হিন্দু ভারত গড়ার মনোভাব যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা জাতি-সংখ্যালঘু রাজনীতি করা দলগুলির পক্ষে বেশ কষ্টকর। জেডিইউ-র ক্ষেত্রেও তার অন্যথা নয়। নিজের প্রধান ভোটব্যাঙ্ককে জিইয়ে রাখতে গেলে জেডিইউ-র পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয় বিজেপির বিতর্কিত রাম মন্দির বা নাগরিকপঞ্জীর মতো বিষয়গুলিতে সিলমোহর লাগানো। লালু ও কংগ্রেসকে দূরে রাখতে যদিও এই দু'টি দল একসাথে হয়েছে কিন্তু শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্যে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী আদর্শের মেলবন্ধন কতটা সম্ভব? নীতিশ ছয় বছর আগে স্বয়ং তা টের পেয়েছিলেন। এবারে তিনি কী করবেন?