বিজেপির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে লড়াইয়ে মমতাই সেরা মুখ, ধারেকাছে আর কেউ নেই
বিজেপির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে লড়াইয়ে মমতাই সেরা মুখ, ধারেকাছে আর কেউ নেই
সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস সম্প্রতি বেশ কয়েকটি রাজ্য বিস্তার ঘটানোর লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। তার মধ্যে যেমন রয়েছে দক্ষিণের রাজ্য, তেমনই রয়েছে উত্তর-পশ্চিম তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি। অর্থাৎ শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তৃণমূল কংগ্রেস এখন শুধু খাতা-কলমে সর্বভারতীয় দল না থেকে প্রকৃত অর্থেই সর্বভারতীয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। ঘটনা হল, এই প্রচেষ্টার মধ্যে খারাপ কিছু নেই। দল হিসেবে সারা দেশে প্রচার এবং প্রসার একটি সহজাত অবস্থা। যে কোনও দল বা তার সুপ্রিমো এটাই চাইবেন। এর মধ্যে অন্যায় কিছু নেই।
সারা দেশে ছড়িয়ে যাওয়াই উদ্দেশ্য
২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক ব্যবধানে জয়লাভের পরই তৃণমূলের তরফে ভবিষ্যতে রূপরেখা কার্যত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারেবারে বলেছেনও, এবার রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে আক্ষরিক অর্থেই তৃণমূল কংগ্রেস সর্বভারতীয় দল হয়ে উঠবে।
মমতাকে সামনে রেখে এগোচ্ছে তৃণমূল
তৃণমূল কংগ্রেসের এমন করার পিছনে নিশ্চিতভাবেই কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইমেজ। তিনি যেভাবে বাংলায় একের পর এক প্রকল্প রূপায়ণ এবং বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে গিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে চমকপ্রদক। কেন্দ্র সরকারের তরফেও বিভিন্ন সময়ে রাজ্য সরকারের প্রশংসা করা হয়েছে। এমনকী বাংলার প্রকল্পগুলি দেশি-বিদেশি একাধিক পুরস্কারও জিতেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কাজকেই সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস অন্য রাজ্যে ডালপালা মেলতে শুরু করেছে।
প্রথম টার্গেট ত্রিপুরা
তৃণমূল কংগ্রেস সবার প্রথমে টার্গেট করেছিল বাংলাভাষী ত্রিপুরাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে বাংলায় উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেটাকেই ত্রিপুরার মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। আর তাতে কিছুটা যে সাড়া পড়েছে তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। কারণ এই মুহূর্তে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে তৃণমূলকেই দেখা যাচ্ছে রাস্তাঘাটে। বামপন্থীরা কার্যত ব্যাকফুটে চলে গিয়েছেন। ফলে বাংলাকে সামনে রেখেই ত্রিপুরা জয় করার রণকৌশল তৈরি করেছে ঘাসফুল শিবির।
সুস্মিতাকে সামনে রেখে অসমে ছাপ ফেলার চেষ্টা
উত্তর-পূর্বের আরও একটি রাজ্য অসমে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের সংগঠন তৈরি চেষ্টা করছে। সেরাজ্যে এখনও বড় সংগঠন তৈরি করা না গেলেও সেখানকার বেশ কয়েকজন নেতা-নেত্রী তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ইতিমধ্যে পথ চলা শুরু করেছেন। যার মধ্যে অন্যতম হলেন সুস্মিতা দেব। তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এবং এই মুহূর্তে অসম তৃণমূলের প্রধান মুখ তিনিই। এই সুস্মিতাকে সামনে রেখেই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে অসমে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের লড়াই লড়বে।
মেঘালয়ে গেমচেঞ্জার তৃণমূল
উত্তর-পূর্বের একটি রাজ্যে এই মুহূর্তে বড় পালাবদল ঘটে গিয়েছে এবং কংগ্রেসকে সরিয়ে এই মুহূর্তে মেঘালয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মোট ১২ জন বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছেন। যার ফলে এই মুহূর্তে রাজ্যের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ হল তৃণমূল কংগ্রেস।
গোয়ায় হইচই ফেলেছে ঘাসফুল শিবির
উত্তর-পূর্ব ছেড়ে যদি পশ্চিমের দিকে তাকানো যায় তাহলে সেখানে দেখা যাবে গোয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যে হইচই ফেলে দিয়েছে। বেশ কয়েকজন বড় মাপের কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে কংগ্রেসে যোগদান করেছেন এবং রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন। ফলে সেখানেও শুরু থেকেই লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকী লিয়েন্ডার পেজের মতো বিশ্ব বিখ্যাত টেনিস খেলোয়াড়ও তৃণমূলের হয়ে ময়দানে নেমে পড়েছেন গোয়ায়।
কেরলে ডালপালা মেলছে তৃণমূল
একেবারে দক্ষিণের রাজ্য কেরলে তৃণমূল কংগ্রেস কয়েক মাস আগেই তাদের শাখা সংগঠন খুলেছে। খুব বড় সংগঠন না হলেও সেরাজ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। মানুষকে সচেতন করার কাজ করছেন। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের খারাপ দিকগুলিকে তুলে ধরছেন। এই সব জায়গাতেই তৃণমূল কংগ্রেস কিন্তু যথেষ্ট ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে।
দেশজুড়ে ছড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা
আগামিদিনে উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্য রাজ্য তথা উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের শক্তি বৃদ্ধি করবে নিঃসন্দেহে। আগামী উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনেও তৃণমূল কংগ্রেস তাদের শক্তি অনুযায়ী লড়াই করবে। যা নিঃসন্দেহে দলের শ্রীবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির বিরোধিতা করার মতো মুখ বলতে একমাত্র রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনটাই মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। আর তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইমেজকে কাজে লাগিয়েই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নেতৃত্বেই তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এবং আক্ষরিক অর্থেই দলকে সর্বভারতীয় করে তোলার প্রচেষ্টা করছেন।