ইন্দিরার পর অটলই বাইরের নেতা হিসাবে এত ভালোবাসা পেয়েছেন বাংলায়
ইন্দিরা গান্ধীর পর আর কোনও বাইরের নেতা বা দেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলায় এত সম্মান ও ভালোবাসা পাননি যা পেয়েছিলেন বাজপেয়ী।
বিজেপি বাংলায় দুই দশক আগে সেভাবে প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও ডালপালা মেলতে শুরু করে দিয়েছিল। অটল বিহারী বাজপেয়ী ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই কলকাতায় আসতেন সময় পেলেই। বাংলার সংষ্কৃতি চর্চা যেন সাংষ্কৃতিক মননের বাজপেয়ীর বিশেষ পছন্দের ছিল। ইন্দিরা গান্ধীর পর আর কোনও বাইরের নেতা বা দেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলায় এত সম্মান ও ভালোবাসা পাননি যা পেয়েছিলেন বাজপেয়ী।
১৯৯৬ সালে ১৩ দিনের প্রধানমন্ত্রিত্ব যাওয়ার পরও তিনি কলকাতায় আসেন। মিটিং করে সেদিন কলকাতাকে অন্তত বোঝাতে পেরেছিলেন যে নম্বরের খেলায় কুর্সি গিয়েছে তাঁর। মূলত বাজপেয়ীর আমলেই বাংলায় বিজেপির মূলরূপে পথ চলা শুরু হয়। অচ্ছ্যুৎ তকমা ঝেড়ে ফেলে লোকসভা আসনে বিজেপি বাংলায় জয়লাভও করে ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে। তার পিছনে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে চলাও অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
[আরও পড়ুন:ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দুটি বিশেষ রেকর্ড গড়েছেন অটল বিহারী বাজপেয়ী]
বাংলার জন্যও অনেক করেছেন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী। সড়ক উন্নয়নে সারা দেশে তাঁর ভূমিকা ভোলার নয়। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে তৈরিতে তৎকালীন এনডিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর অবদান সবচেয়ে বেশি।
একসময়ে বামেদের সঙ্গে, বিশেষ করে জ্যোতি বসুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল বাজপেয়ীর। নানা সময়ে সিনিয়র জ্যোতি বসুর কাছ থেকে পরামর্শও নিয়েছেন বাজপেয়ী। পরে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া তৈরি হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন। ব্যক্তিত্বে এতটাই মহান ছিলেন যে বিরোধী নেতারাও বাজপেয়ীর সমালোচনা করার আগে থমকে যেতেন। গণতন্ত্রে চিরবিশ্বাসী ছিলেন। বিরোধীরা সমালোচনা করলে তা মাথা পেতে নিতেন। মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, গণতান্ত্রিক কাঠামোয় এটাই নিয়ম।
[আরও পড়ুন: বাজপেয়ীর প্রয়াণে কী বললেন পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান]
২০০০ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা গায়েত্রী দেবীকে দেখতে কালীঘাটের বাড়িতে আসেন। তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী। গায়েত্রী দেবীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছেন। মমতা সবসময়ই বাজপেয়ীজির প্রশংসা করেছেন। এমন মহান নেতা ভারতবর্ষে খুব কম জন্মেছে বলেও ব্যাখ্যা করেছেন। বিজেপির আদর্শে বিশ্বাসী না হয়েও বহু ভারতীয় বাজপেয়ীকে গুরু মেনেছেন। তার মধ্যে বাংলার বহু মানুষ রয়েছেন।
[আরও পড়ুন: 'বাজপেয়ী মহান নেতা', শোকবার্তা ভেসে এল ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা থেকেও ]
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর বিজেপির আচরণকে বর্বর বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন জ্যোতি বসু। পরে কলকাতার রাজভবনে এসে বসুর সঙ্গে বৈঠকের পর মনে করে কেন তিনি বর্বর বলেছিলেন তা জিজ্ঞাসা করেছিলেন বাজপেয়ী। উদ্দেশ্য বোধহয় ছিল, বিরোধী মত ও ভাবনাকে শুনে আত্মশুদ্ধি। আর তাই গেরুয়া শিবিরে থেকেও তিনি ধর্মের উর্ধ্বে উঠে আসল জননেতা হতে পেরেছিলেন। সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন অনায়াসেই।