বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চল, একটানা ৪০০ বছরেরও বেশি বৃষ্টি হয়নি! প্রকৃতির বিস্ময়
বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চল, একটানা ৪০০ বছরেরও বেশি বৃষ্টি হয়নি! প্রকৃতির বিস্ময়
এই পৃথিবীতেই এমন এক জায়গা আছে যেখানে কোনওদিনও বৃষ্টির ফোঁটা পড়েনি। এমন একটা সময় গিয়েছে যখন একটানা চারশো বছর ওই এলাকায় এক ফোঁটা বৃষ্টি পর্যন্ত পড়েনি। এও এক বিস্ময়। মঙ্গলে নয়, এমন পরিবেশ রয়েছে পৃথিবীতেই। সেটা একটা মরুভূমি অঞ্চল। নাম তার আতাকামা মরুভূমি। এই মরুভূমিকেই বিশ্বের সবথেকে শুষ্ক অঞ্চল বলে ধরা হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্কতম মরুভূমি
দক্ষিণ আমেরিকার এই আতাকামা মরুভূমি আন্দিজ পর্বতমালার পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত। প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার ভূমি জুড়ে এর বিস্তৃতি। আতাকামা মরুভূমি হল বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্কতম মরুভূমি। মেরু প্রদেশের এই মরুভূমি অঞ্চল বিশ্বের মধ্যে সবথেকে শুষ্ক অঞ্চল বলে গণ্য করা হয়।
মঙ্গল অভিযানের পরীক্ষামূলক সাইট
ওই অঞ্চলের পরিবেশ প্রকৃতি এমনই যে মঙ্গল অভিযানের সিমুলেশনের জন্য পৃথিবীতে পরীক্ষামূলক সাইট হিসাবে ব্যবহৃত হয় আতাকামা মরুভূমি। ১০৫ হাজার মরুভূমির অধিকাংশই পাথুরে ভূখণ্ড, লবণের হ্রদ (সালারেস), বালি এবং ফেলসিক লাভা দ্বারা গঠিত। আন্দিজ পর্বতমালার দিকে থেকে তা প্রবাহিত হয়ে এসেছে।
দ্বিমুখী বৃষ্টিচ্ছায়া অঞ্চল এই মরুভূমি
উত্তরে প্রবাহিত হামবোল্ট মহাসাগরের স্রোতের কারণে এবং শক্তিশালী প্রশান্ত মহাসাগরীয় অ্যান্টিসাইক্লোনের উপস্থিতির কারণে মরুভূমিটি চরম শুষ্ক অঞ্চল হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত তাপমাত্রার পরিবর্তনই এ জন্য দায়ী। আতাকামা মরুভূমির সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চলটি প্রশান্ত মহাসাগর বা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে আর্দ্রতা রোধ করার জন্য যথেষ্ট উচ্চতার দুটি পর্বতমালা-আন্দিজ এবং চিলির উপকূল রেঞ্জের মধ্যে অবস্থিত। এটি দ্বিমুখী বৃষ্টিচ্ছায়া অঞ্চল।
সম্পূর্ণরূপে গাছপালা বর্জিত মরুভূমি
আতাকামা মরুভূমিকে সম্পূর্ণরূপে গাছপালা বর্জিত। প্রাক-কলম্বিয়ান এবং ঔপনিবেশিক সময়ে পাম্পা দেল তামারুগাল নামে পরিচিত একটি বিশাল সমতল ভূমি ও একটি বনভূমি ছিল। কিন্তু ১৮ ও ১৯ শতকে রূপালি এবং সল্টপিটার খনির সঙ্গে যুক্ত জ্বালানী কাঠের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। তখনই বন উজাড় হয়ে যায়।
আতাকামা মরুভূমির বিন্যাস
আতাকামা মরুভূমির ইকোরিজিয়ন চিলির উত্তর তৃতীয়াংশের সংকীর্ণ উপকূল বরাবর প্রায় ১৬০০ কিমি বিস্তৃত। আরিকা থেকে শুরু করে দক্ষিণে লা সেরেনা পর্যন্ত তার বিস্তার। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি দক্ষিণ পেরুর উপকূলীয় এলাকাকে আতাকামা মরুভূমির অংশ হিসেবে বিবেচনা করে এবং পেরুর আইকা অঞ্চলের দক্ষিণাংশকেও মরুভূমি অন্তর্ভুক্ত করে।
আতাকামা মরুভূমির সীমানা
আতাকামা মরুভূমির উত্তরের সীমানায় পেরু এবং দক্ষিণে চিলির ম্যাটোরাল ইকোরিজিয়ন হল তার সীমানা। পূর্বে কম শুষ্ক সেন্ট্রাল অ্যান্ডিয়ান শুষ্ক পুনা ইকোরিজিয়ন রয়েছে। এই ইকোরিজিয়নের শুষ্ক অংশ লোয়া নদীর দক্ষিণে সমান্তরাল সিয়েরা ভিকুনা ম্যাকেনা এবং কর্ডিলেরা ডোমেইকোর মধ্যে অবস্থিত। লোয়ার উত্তরে পাম্পা দেল তামারুগাল অবস্থিত।
উপকূলের প্রধান টপোগ্রাফিক বৈশিষ্ট্য
চিলির উপকূল রেঞ্জের পশ্চিমে উত্তর চিলির উপকূলীয় ক্লিফ হল উপকূলের প্রধান টপোগ্রাফিক বৈশিষ্ট্য। আতাকামা মরুভূমি একটি দৈত্যাকার ছাদের মতো। মধ্যবর্তী উপত্যকা বা সেন্ট্রাল ভ্যালিক দক্ষিণে আটাকামা মরুভূমির বেশিরভাগ অংশে এন্ডোরহেইক অববাহিকাগুলির একটি সিরিজ গঠন করে। এর উত্তরে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবাহিত হয়।
আতাকামা মরুভূমির জলবায়ু
আতাকামা মরুভূমিতে বৃষ্টিপাত প্রায় হয়ই না। বৃষ্টিপাতের অভাবে সম্পূর্ণ শুষ্ক এলাকা। ২০১২ সালে শীতকালে সান পেড্রো দে আতাকামায় বন্যা হয়। ২০১৫-র ২৫ মার্চ ভারী বৃষ্টিপাত আতাকামা মরুভূমির দক্ষিণ অংশ প্রভাবিত করে। ফলস্বরূপ বন্যার ফলে কাদা-প্রবাহ বইতে শুরু করে। শতাধিক লোক মারা যায় তার ফলে।
আতাকামা মরুভূমির শুষ্কতা
আন্তোফাগাস্তা এবং তালতাল হল আতাকামা মরুভূমির একটি সমতল এলাকা। আতাকামা মরুভূমি সাধারণত বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক স্থান হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে পরিত্যক্ত ইউনগে খনির শহর, যেখানে আন্তোফাগাস্তা মরুভূমি গবেষণা কেন্দ্র তথা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। এখানে গড় বৃষ্টিপাত প্রতি বছর প্রায় ১৫ মিলিমিটার। যদিও কিছু জায়গায় বছরে ১ থেকে ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
চারশো বছর সম্পূর্ণ বৃষ্টিহীন ছিল আতাকামা
আতাকামার বেশ কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে কখনও বৃষ্টি হয়নি। চিলির আন্তোফাগাস্তা, কালামা এবং কোপিয়াপো শহরগুলিতে চার বছর অন্তর বৃষ্টিপাত হয়। এক গবেষণায় জানা গিয়েছে, ১৫৭০ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আতাকামাতে কোনও বৃষ্টিপাত হয়নি। চারশো বছর সম্পূর্ণ বৃষ্টিহীন ছিল ওই এলাকা।
আতাকামা মরুভূমিতে ফেরাল গাধা
আতাকামা মরুভূমি পৃথিবীর প্রাচীনতম মরুভূমি। কমপক্ষে তিন মিলিয়ন বছর ধরে চরম হাইপারডিটির ফলে এটি পৃথিবীর সবথেকে পুরনো এবং শুষ্ক অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। শুষ্কতার দীর্ঘ ইতিহাস এই আতাকামা মরুভূমিতে। সুপারজিন খনিজকরণের ফলে আর্দ্রতার পরিবর্তে শুষ্ক পরিবেশ গঠিত হয়েছে। আতাকামা মরুভূমির কিছু অংশে শুষ্ক অবস্থা প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে।
আতাকামা মরুভূমির চূড়াও হিমবাহ মুক্ত
আতাকামা এতটাই শুষ্ক যে, ৬০০০ মিটার উঁচু অংশও হিমবাহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। শুধুমাত্র সর্বোচ্চ চূড়া- যেমন ওজোস দেল সালাডো, মন্টে পিসিস এবং লুল্লাইলাকোতে কিছু স্থায়ী তুষার রয়েছে। মরুভূমির দক্ষিণ অংশ সমগ্র কোয়াটারনারিজুড়ে হিমবাহমুক্ত থাকতে পারে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের একটি গ্রুপের গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু নদীর তল ১২০ হাজার বছর ধরে শুকিয়ে রয়েছে।