অভিনেত্রী থেকে বিজেপি নেত্রী হলেই বুঝি লাল টিপ, হাল্কা শাড়ি আর কোমর বেঁধে আঙুল উঁচিয়ে 'প্রতিবাদ'?
চলতি নির্বাচনে বিজেপি আসন দখলে কতটা সমর্থ হবে বা না হবে সে তো পরের কথা। তবে ভোটবাজারের টেলিভিশন কভারেজের লাইমলাইট শুষে নিতে এবছরে বিজেপিকে টেক্কা দিতে আপাতত পারল না কেউ। আর তার পুরো শ্রেয়ই বিজেপির দুই মহিলা প্রার্থীর। যারা অভিনেত্রী থেকে 'অভি' (অর্থাৎ এখন) নেত্রী হয়েছেন।
চতুর্থ দফা নির্বাচনের LIVE UPDATE পড়ুন এখানে
আজ্ঞে হ্যাঁ আমরা কথা বলছি ময়ূরেশ্বরের বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং হাওড়া উত্তরের বিজেপি প্রার্থী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।
দুজনের কত মিল দেখুন, দুজনেই বিজেপি নেত্রী, দুজনেই অভিনয় ছেড়ে এখন ফুলটাইম রাজনীতিতে। ভোট উৎসবের সাজেও বেশ একটা মিল রয়েছে। দুজনেরই আলুথালু হাতখোপা, পরনে জমকহীন হাল্কা শাড়ি, আর কপালে লাল টিপ।
এতো গেল সাজগোজের মিল। মেজাজটাও যে খাসা মিলেছে। দুজনেরই স্বভাব বেশ ঝাঁঝালো প্রকৃতির। ওই আরকি, দাপুটে নেত্রী দাপুটে নেত্রী হাবভাব একটা। মনে নেই দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ময়ূরেশ্বরের ৩০ নম্বর বুথে কেমন রিগিং অভিযোগ তুলে প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্টদের ধমক দিয়ে সারাদিন ভোটবাজারের লাইমলাইটে ছিলেন লকেট।
আর আজ, চতুর্থ দফায় লকেটকেও একধাপ টপকে গেলেন হাওড়া উত্তরের প্রার্থী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। নিজের কেন্দ্রে সকাল থেকেই ক্যামেরার ফোকাস নিজের দিকে ঘোরানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তিনি। বিশেষ কিছু করে উঠতে না পেরে একেবারে এক মহিলা ভোটারের গায়ে হাতই তুলে বসলেন। ব্যস আর দেখে কে, সারাদিনের নামে ক্যামেরা একেবারে ফুল ফোকাসে রূপা দেবীর দিকে।
কিন্তু বিষয়টা হল, ক্যামেরায় তো মুখটা চলে এল ঠিকই, কিন্তু ভোটবাক্সে এর ফলটা কীভাবে আসছে। ইতিবাচক না নেতিবাচক।
অন্য কোনও দলের কোনও প্রার্থীকেই (নারী-পুরুষ নির্বিশেষে) তো এহেন রূপে ভোটে দেখা যায়নি। লকেট এবং রূপার ক্ষেত্রেই এই ধরণের আচরণ দেখা গেল কেন? সূর্যকান্ত মিশ্রও নারায়ণগড়ে একাধিক বুথে বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। রিগিংয়ের অভিযোগ পেয়েছেন। কিন্তু কোথাও তো তাকে মেজাজ হারাতে দেখা যায়নি।
এর কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। প্রথম সম্ভাব্য কারণ হল, এনাদের অভিনেত্রী সত্ত্বার পরিবর্তন হয়ে হঠাৎ জন্ম নেওয়া নেত্রী সত্ত্বা। কারণ রাজনৈতিক দর্শনের অভাব বা রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাব বলতে পারেন। কোনও পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিতে হয় তা এখনও রপ্ত করে উঠতে পারেননি এই দুই নেত্রী।
দ্বিতীয় সম্ভাব্য কারণ হতে পারে হতাশা। এই দুই কেন্দ্রেই তারকা প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও জয়ের আশা বেশ কম রূপা ও লকেট দুজনেরই ক্ষেত্রে। কারণ লড়াইটা মূলত তৃণমূল আর জোট প্রার্থীদের মধ্যেই। বিজেপি প্রতিযোগিতাতেই নেই। আর একজন প্রার্থীর কাছে এতো হতাশার কারণ বটেই। তার থেকেই বারবার মেজাজ হারানো। এধরণের ঘটনা ঘটানো।
সম্ভাব্য তৃতীয় কারণ, কপালে লাল টিপ, আর জৌলুসহীন শাড়ি পড়ে কথায় কথায় কোমর বেঁধে 'প্রতিবাদ' করলে জনতার কাছের মানুষ হওয়া যে সম্ভব নয় তারা এখনও তা বুঝতে পারছেন না। বিনা কারণে চেঁচিয়ে, অশান্তির পরিবেশ তৈরি করে জনগনের কাছের মানুষ হওয়া সম্ভব নয়।
কিংবা চতুর্থ সম্ভাব্য কারণ, পুরোটাই মূর্খামি। কিছুই না বুঝে শুধু নেত্রী হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করতে কিছু একটা করতে হবে বলে করে ফেলা আর কি।