মমতা, রাহুল, নীতীশ: সবাই নিজের মতো করে খেলছেন কিন্তু পাখির চোখ ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন
রাহুল গান্ধীর মমতাকে ফোন করা; উপনির্বাচনে কংগ্রেসের আলাদা প্রার্থী দেওয়া; মমতার বিজেপি নিয়ে দলকে বার্তা; নীতীশের উত্তরপ্রদেশের ফ্রন্টের স্বপ্ন - সমস্ত ঘটনায় আপাতদৃষ্টিতে আলাদা কিন্তু লক্ষ্য সেই ২০১৯।
বেশ কিছু ঘটনা ঘটল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য এবং নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনে। আপাতদৃষ্টিতে সব ক'টিই আলাদা আলাদা কিনতু একটিকে আরেকটির সঙ্গে জুড়ে দিলে একটি বৃহত্তর চিত্র যে ফুটে ওঠে না, তা ঠিক বলা যাবে না।
রাহুলের মমতাকে ফোন
এই ধরুন, তৃণমূল কংগ্রেসের যুবনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথ দুর্ঘটনার পরে কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী অভিষেকের পিসি তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করা। যদিও সামনাসামনি বলা হচ্ছে নেহাতই সৌজন্যমূলক কথাবার্তা, কিন্তু শাসকদলেরই একাংশ মনে করছে আগুন না থাকলে কি ঠিক ধোঁয়া বেরোয়?
মোদী সরকারের নাগরিকত্ব আইন বাতিলের সমবেত দাবি
দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রের বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিল বাতিলের দাবি তুলেও মমতা চাইছেন নরেন্দ্র মোদী-বিরোধী মঞ্চকে শক্তিশালী করে তুলতে। এবং কংগ্রেসও এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের মতোই আপত্তি তুলেছে মোদী সরকারের অভিসন্ধি নিয়ে।
মমতার রাজ্য এবং জাতীয় পর্যায়ে বিজেপির মোকাবিলা এবং ফ্রন্টের ডাক
তৃতীয়ত, মমতা রাজ্যে এবং জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির মোকাবিলা করার জন্যও দলকে আরও তৎপর হতে নির্দেশ দিয়েছেন। একটি বৈঠকে স্পষ্ট করেছেন জাতীয়স্তরে বিজেপিকে রুখতে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ফ্রন্ট গড়ার কথাও। বিজেপির তরফ থেকে যদিও মমতার এই তৎপরতাকে রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের 'স্বীকৃতি' হিসেবেই দেখা হচ্ছে, কিনতু রাহুল গান্ধীর ফোন এবং বিজেপির বিরোধিতায় আরও সজাগ হওয়ার বার্তার ঘটনা প্রায় এক সময়ে হওয়ার মধ্যেও অনেকে সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন।
রাজ্যে উপনির্বাচনে কংগ্রেস-বাম সমঝোতার অনুপস্থিতি
চতুর্থত, রাজ্যে আসন্ন তিনটি উপনির্বাচনে কংগ্রেস এবং বামেরা আলাদা ভাবে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। অর্থাৎ, এই দু'টি দলের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঢাকঢোল বাজিয়ে যে মমতা-বিরোধী সমঝোতার কথা হয়েছিল, ভোটে মুখ থুবড়ে পরে এবং বামেদের অন্তর্কলহের কারণে তা এখন প্রায় অতীত হিসেবেই মনে করা হচ্ছে। আর জাতীয় পর্যায়ের লড়াইতে যে বামেদের কোনও প্রাসঙ্গিকতাই নেই, তা একটি শিশুও বোঝে।
এই পরিস্থিতিতে, পরবর্তী বড় লক্ষ্য হিসেবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদীকে আটকানোর জন্য তৃণমূল আর কংগ্রেসের কাছাকাছি আসাটা খুব একটা অসম্ভব কিছু নয়। সম্প্রতি বিজেপির বিরুদ্ধে দলকে সতর্কীকরণের সময়ে খোদ তৃণমূল নেত্রীও কংগ্রেসের সঙ্গে সহযোগিতার কথা বলেন।
নীতীশকুমারের উত্তরপ্রদেশে ফ্রন্ট তৈরি করার আহ্বান
তাছাড়া, দেশের অন্যান্য মোদী-বিরোধী কণ্ঠস্বর -- যেমন নীতীশকুমার চাইছেন উত্তরপ্রদেশে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে রাহুল গান্ধী সেখানকার শাসকদল সমাজবাদী পার্টি, জেডিইউ, আরএলডি ইত্যাদি দলকে নিয়ে একটি ফ্রন্ট তৈরি করতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিন। নীতীশের আশা, গতবছর বিহারে যেমন লালু এবং কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তিনি মোদী-অমিত শাহের পাটনা জয়ের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন, এবার লখনৌতেও সেরকম কিছু হোক।
আর যদি নীতীশের সে আশা পূর্ণ হয়, তবে মমতা যে খুব একটা দূরে বসে থাকবেন, তা ভাবার কোনও কারণ নেই। বিহারে বিজেপির হারের পরেও দেখা গিয়েছিল মমতা এবং আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে বিজেপি বধের বিজয়োল্লাসে সামিল হতে।
আর যদি একই ঘটনা উত্তরপ্রদেশেও ঘটে, তবে তা একদিকে যেমন মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের পক্ষে এক জোর ধাক্কা হবে, অন্যদিকে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের দু'বছর আগে ফ্রন্টের কান্ডারীদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।