মানব পাচারে শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ, জাতীয় পরিসংখ্যানে ফের ভূলুণ্ঠিত বাংলার সম্মান
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে ফের একবার লজ্জায় হেঁট হল বাংলার সম্মান। তথ্য বলছে, সারা দেশে মানব পাচারে শীর্ষস্থানে রয়েছে বাংলা। শুধু তাই নয়, দেশে যত পাচার হয় তার দশভাগের চারভাগ হয় এরাজ্যেই। এনসিআরবি-র তথ্যে শুধু পাচার নয়, পাচার থেকে উদ্ধার, গ্রেফতারের মতো পরিসংখ্যানও তুলে ধরে হয়েছে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারগুলিকে সরেজমিনে তদন্ত করতেও আহ্বান জানিয়েছে এনসিআরবি।

শীর্ষে বাংলা
মানব পাচারে শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। এমনটাই বলছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যান। সারা দেশে যত মানব পাচারের ঘটনা ঘটে তার দশ ভাগের চারভাগ হয় এই পশ্চিমবঙ্গেই। এই ভয়াবহ পরিসংখ্যানই তুলে ধরেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।

৪৪ শতাংশ পাচার বাংলায়ই
এনসিআরবি তথ্য বলছে, সারা দেশে ২০১৬ সালে মোট ৮১৩২টি মানব পাচারের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৩৫৯৭টিই হয়েছে এই পশ্চিমবঙ্গেই।

দ্বিতীয় রাজস্থান
বাংলার পরই রয়েছে আর এক আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী রাজ্য রাজস্থান। সেখানে মোট মানব পাচারের ঘটনার ১৭.৪৯ শতাংশ ঘটে থাকে। ২০১৬ সালে মোট ১৪২২টি মানব পাচারের ঘটনা ঘটেছে রাজস্থানে।

উদ্ধারে পিছিয়ে
বাংলা যেমন মানব পাচারে এক নম্বরে রয়েছে। তেমনই উদ্ধারের ক্ষেত্রে কিন্তু পিছিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে এগিয়ে রাজস্থান। সেরাজ্যে মানব পাচার হওয়া ৫৭৬৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারপরে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ। সেরাজ্যে ৪৮১৭ জনকে উদ্ধার করা গিয়েছে। আর বাংলায় উদ্ধার হয়েছে মাত্র ২৭৯৩ জন।

মহিলা পাচার সিংহভাগ
বাংলায় ২০১৬ সালে যতজন মানব পাচারের ঘটনায় উদ্ধার হয়েছে তার সিংহভাগই মহিলা। যার অর্থ বেছে বেছে মহিলাদেরই সারা রাজ্যে পাচারকারূরা টার্গেট করে চলেছে। তার মধ্যে ২৩২৩ জন মহিলা ও ৪৭০জন পুরুষ।

যৌন ব্যবসায় পাচারেও এগিয়ে বাংলা
যৌন ব্যবসায় পাচারের উদ্দেশে বাংলায় গতবছরে মোট ১৮৪৭ জনকে পুলিশ ধরেছে যা দেশের হিসাবে সর্বোচ্চ। তা মধ্যে ১৭৯৫ জনকে পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে। অতএব দেখা যাচ্ছে, যৌন ব্যবসায় পাচারেও বাংলা অনেক এগিয়ে রয়েছে। তবে সাজা দেওয়ায় পিছিয়ে বাংলা। পাচারে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মাত্র ১১জন সাজা পেয়েছে বাংলায়।

গ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশি পাচার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামবাংলায় সবচেয়ে বেশি মানব পাচারের ঘটনা ঘটছে। দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের ভুলিয়ে, টাকার লোভ দেখিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে প্রচুর মানুষ নিজের অজান্তেই পাচার হয়ে যাচ্ছেন।

প্রলোভন দেখিয়ে পাচার
সমীক্ষায় উঠে এসেছে, পাচারকারীদের গ্রামে দারুণ নেটওয়ার্ক থাকে। গরিব মানুষদের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে তাদে প্রলোভন দেখিয়ে কাজের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাচার করা হচ্ছে। এটা শুধু বাংলার গ্রামের সমস্যা নয়, সারা দেশের গ্রামগুলিতেই এইভাবে মানব পাচার চলছে।

বাল্য বিবাহের ফাঁড়া
মানব পাচারের আর একটি বড় দিক হল বাল্য বিবাহ। সারা বাংলায় অনেক জায়গায় এখনও খুব কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। যার পরে সেই মেয়েদের পাচার করতে বেশি সুবিধা হয়। তবে বর্তমান সরকার কন্যাশ্রী-র মতো প্রকল্প করে নারীদের সুরক্ষা ও স্বাধীনতা প্রদানের চেষ্টা করছে। তবে এখনও সেভাবে পুরোপুরি সফলতা আসেনি।