মোদী সরকারের ৪ বছরে সবচেয়ে ব্যস্ত অর্থমন্ত্রক কোন কোন পদক্ষেপ নিয়েছে জানেন কি
একনজরে দেখে নেওয়া যাক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক কেমন কাজ করেছে এই চার বছরে।
কেন্দ্র সরকার চার বছর পূর্ণ করে ফেলেছে। সবকা সাথ সবকা বিকাশ এই স্লোগান দিয়ে বিজেপি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেছিল। গত চার বছরে বিভিন্ন মন্ত্রক অবদান রাখলেও তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে অর্থমন্ত্রক। নরেন্দ্র মোদী সরকারের চার বছরের রিপোর্ট কার্ড করতে বসলে সবচেয়ে আগে এই মন্ত্রকের কাজই আতস কাঁচের তলায় আসে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যেমন অর্থমন্ত্রক নিয়েছে, তেমনই কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক কেমন কাজ করেছে এই চার বছরে।
জন ধন যোজনা
সামগ্রিকভাবে পরিবারগুলির আর্থিক অগ্রগতিকে সুনিশ্চিত করতে এই যোজনা চালু হয়েছে। এবং শুরু হওয়ার পর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময়ে ৩১.৫২ কোটি অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়েছে। মোট ব্যালান্স ৮০৮৭১.৬৭ কোটি টাকা। জিরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট যেখানে ২০১৪ সালে ৭৩ শতাংশ ছিল সেখানে তা এখন কমে ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা
২০১৫ সালে চালু হয় এই যোজনা। মেয়ে সন্তানদের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই খাতে ১.২৬ কোটি অ্যাকাউন্ট খুলেছে ও নগদ জমা পড়েছে ১৯, ১৮৩ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা
ক্ষুদ্র ব্যবসায় উৎসাহ দিতে ২০১৫ সালে এই প্রকল্প শুরু হয়। সহজে ঋণদান গ্য়ারান্টি ছাড়াই। তিনটি ভাগে ঋণ দেওয়া হয়। শিশু, কিশোর ও তরুণ। শিশু বিভাগে ৫০ হাজার, কিশোর বিভাগে ৫০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা ও তরুণ বিভাগে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সহজে ঋণ দেওয়া হয়। এবারের বাজেটে এর বরাদ্দ বাড়িয়ে ৩ লক্ষ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা
২০১৫ সালে শুরু হওয়া এই যোজনায় কম খরচে বীমা দেওয়া হয় ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের। বছরে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১২ টাকা কেটে নেওয়ার বদলে এই বীমার সুরক্ষা দেওয়া হয়। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে এতে ২ লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে। আংশিক পঙ্গু হলে পাওয়া যাবে ১ লক্ষ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বীমা যোজনা
মাত্র ৩৩০ টাকা বার্ষিক হারে ২ লক্ষ টাকার এই বীমা যোজনাটি ২০১৫ সালেই চালু হয়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের হিসাব অনুযায়ী এই প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বীমা যোজনায় ৫.২২ কোটি পরিবার উপকৃত হয়েছে।
অটল পেনশন যোজনা
বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই যোজনা শুরু হয় ২০১৫ সালে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে অ্যাকাউন্ট খুললে সরকার ১ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়াম দেবে। এখনও পর্যন্ত ৮০ লক্ষ মানুষ এই যোজনায় নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ব্যয় বন্ধন যোজনা
এই যোজনায় ৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিশ্চিত মাসিক পেনশন পাওয়া যাবে। ৭.৫ লক্ষ টাকা অ্যাকাউন্টে রাখতে হবে। গ্যারান্টি সহকারে ৮ শতাংশ সুদ ১০ বছর দেবে সরকার। ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত নাম নথিভুক্ত করা যাবে। এখনও পর্যন্ত ২.২৩ লক্ষ মানুষ এতে নাম নথিভুক্ত করেছেন বলে খবর।
নোট বাতিল ও কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর জাল নোট ও কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইকে ছড়িয়ে দিতে কেন্দ্র সরকার পুরনো ৫০০ ও ১ হাজার টাকার মোট বাতিল করে দেয়। তারপরে ৫০ লক্ষ নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি হয় নগদহীন লেনদেনের জন্য। প্রথম বছরেই ২৬.৬ শতাংশ বৃদ্ধি হয় আয়কর দাতার তালিকায়। এছাড়া ই-রিটার্ন বেড়ে যায় ২৭.৯৫ শতাংশ হারে।
জিএসটি
২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে জিএসটি চালু হয়। কেন্দ্র ও রাজ্যের করকে একজায়গায় করে পণ্য ও পরিষেবা কর নেওয়া চালু হয়। ৫, ১২, ১৮ ও ২৮ শতাংশের স্ল্যাব রাখা হয়। সবমিলিয়ে কর কমে যায় ২৫-৩০ শতাংশ। যার ফলে সারা দেশে ব্যবসা করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। জিনিসের দাম কমে যায় ও মুদ্রাস্ফীতির হারও কমে যায়। কর ব্যবস্থার সরলীকরণের ফলে সব পক্ষেরই সুবিধা হয়।