কেলেঙ্কারির পর্দাফাঁস থেকে ডি রাজার রেহাই, ২জি কেলেঙ্কারি মামলায় যা চলেছে গত ১০ বছর ধরে
২জি স্পেকট্রাম মামলায় প্রায় দশ বছর পরে রায় ঘোষণা করল সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। এদিন অভিযুক্ত ডিএমকে নেতা তথা প্রাক্তন টেলিকম ডি রাজা, ও ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি-সহ সকলকেই বেকসুর খালাস করেছে আদালত।
২জি স্পেকট্রাম মামলায় প্রায় দশ বছর পরে রায় ঘোষণা করল সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। এদিন অভিযুক্ত ডিএমকে নেতা তথা প্রাক্তন টেলিকম ডি রাজা, ও ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি-সহ সকলকেই বেকসুর খালাস করেছে আদালত। বিশেষ আদালতের বিচারক ওপি সাইনি বলেন, সিবিআই তাদের আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আর সেজন্যই তিনটি মামলাতেই অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পেয়েছে। একনজরে দেখা যাক এই মামলার টাইমলাইন।
২জি স্পেকট্রাম বণ্টনের প্রক্রিয়া শুরু
২০০৭ সালের মে মাসে ডি রাজা টেলিকম মন্ত্রকের দায়িত্ব নেন। টেলিকম মন্ত্রকের তরফে স্পেকট্রাম বণ্টনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেপ্টেম্বর মাসে মন্ত্রকের তরফে জানানো হয় ১ অক্টোবরের মধ্যে আবেদন জমা করতে হবে। ৪৬টি ফার্মের ৫৭৫টি আবেদন জমা পড়ে।
অভিযোগ জমা পড়ে
২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে লাইসেন্স বিলি শুরু হয়। সোয়ান টেলিকম, ইউনিটেক, টাটা টেলিসার্ভিসেস তাদের স্টেক অনেক বেশি দামে বেচে দেয় এটি সালাট, টেলিনর ও ডোকোমোকে। ২০০৯ সালে একটি স্বেচ্ছ্বাসেবি সংস্থা ২জি স্পেকট্রাম বণ্টনে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করে। কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। জুলাইয়ে এক সদস্যের দিল্লি উচ্চ আদালত এই কাট-অব-ডেটকে অবৈধ বলে আখ্যা দেয়। সিবিআই অজানা ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করে তদন্ত চালাতে থাকে।
ডি রাজার হদিশ
সিবিআইয়ের তরফে আয়কর দফতরের সাহায্য নেওয়া হয়। নীরা রাডিয়াকে নিয়ে রেকর্ড চাওয়া হয়। তিনি ২জি স্পেকট্রামে লাইসেন্স বিলির ক্ষেত্রে ভূমিকা নিতে পারেন বলে সন্দেহ করা হয়। আয়করের তথ্য সামনে আসার পর দেখা যায়, এই স্পেকট্রাম বণ্টনে রাঘববোয়ালরা জড়িত রয়েছে। টেলিকম মন্ত্রী ডি রাজার সরাসরি যোগ পাওয়া যায়।
রাডিয়ার টেপ প্রকাশ্যে
২০১০ সালে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বা ক্যাগের রিপোর্ট সামনে আসার পরে পরিষ্কার হয় যে লাইসেন্স বণ্টনের প্রক্রিয়ায় গোলমাল রয়েছে। ডি রাজা ও নীরা রাডিয়াকে টেলিফোনে কথোপকথন প্রকাশ্যে আসে। সেপ্টেম্বরে ১০ দিনের মধ্যে এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজাকে জবাব দিতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। ২০০৮ সালের টেলিকম দুর্নীতিতে ৭০ হাজার কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছিল।
রাজার ইস্তফা
ইডি সুপ্রিম কোর্টে ফেমা আইন ভাঙা সংস্থার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে। রাজার জড়িত থাকার কথা জানানো হয়। ইউপিএ সরকারের কাছে এই বিষয়ে জবাবদিহি চাওয়া হয়। ক্যাগ ২জি স্পেকট্রাম নিয়ে রিপোর্ট পেশ করে। সেখানে সরকারের ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়। ইউপিএ সরকার থেকে চাপের মুখে পদত্যাগ করেন ডি রাজা। টেলিকম মন্ত্রকের দায়িত্ব যায় কপিল সিব্বলের হাতে।
ডি রাজার জেলযাত্রা
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিবিআই গ্রেফথার করে ডি রাজাকে। তিহার জেলে আশ্রয় হয় রাজার। ২জি স্পেকট্রাম মামলার শুনানির জন্য দিল্লি হাইকোর্ট স্পেশাল কোর্ট তৈরি করে। সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইয়ে চার্জশিট জমা দিতে সময় দেয়। এই চার্জশিটে ডি রাজা ছাড়াও চান্দোলিয়া, বেহুরা, রিলায়েন্স কর্তা গৌতম দোশী, হরি নায়ার, সুরেন্দ্র পিপারা, সোয়ান টেলিকমের শাহিদজ উসমান বালওয়া, বিনোদ গোয়েঙ্কা, ইউনিটেকের সঞ্জয় চন্দ্রকে অভিযুক্ত করা হয়। দ্বিতীয় চার্জশিটে এপ্রিল মাসে ডিএমকে প্রধান করুণানিধির মেয়ে কানিমোঝির নাম করা হয়। মোট ১৭ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অক্টোবরে চার্জশিট দেয় সিবিআই।
ট্রায়াল শুরু
২জি স্পেকট্রাম মামলায় শুরু হয় ট্রায়াল। একে একে জামিন পান অভিযুক্তরা। ডিসেম্বরে তৃতীয় চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। সেখানে এসার গোষ্ঠীর অংশুমান ও রবি রুইয়া, বিকাশ সরফ, লুপ টেলিকমের কিরণ খৈতান, আইপি খৈতানের নাম যোগ করা হয়।
১২২টি লাইসেন্স বাতিল
ডি রাজার আমলে দেওয়া ১২২টি ২জি স্পেকট্রাম লাইসেন্স বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। সেগুলি ফের নিলামের নির্দেশ দেয়। পি চিদাম্বরমকে অভিযুক্ত হিসাবে দাবি করা হলেও সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি শীর্ষ আদালত। প্রাথমিক কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যার ভিত্তিতে চিদাম্বরমকে জড়ানো যেতে পারে, এমনটাই জানায় আদালত।
চার্জ গঠন
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে যৌথ সংসদীয় কমিটি ২জি নিয়ে লোকসভায় রিপোর্ট দেয়। ডি রাজা ও কানিমোঝিকে চার্জশিট দেওয়া হয়। ডি রাজার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়। ২জি-র সঙ্গে জড়িত অন্য মামলায়ও চার্জ গঠন হয়। ২০১৫ সালে কানিমোঝি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিতে আবেদন করেন। তা খারিজ করে আদালত।
শুনানি শেষে রায়
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে শুনানি ও সওয়াল-জবাব শেষ হয় ২জি মামলায়। আদালত অক্টোবরে মামলার রায় দেবে বলে ঘোষণা হয়। পরে তা নভেম্বর ও তারও পরে ডিসেম্বরের ৫ তারিখে পিছিয়ে যায়। ফের তা পিছিয়ে ২১ ডিসেম্বর করা হয়। এদিন ডি রাজা, কানিমোঝি সহ সমস্ত অভিযুক্তরা বেকসুর ছাড়া পেয়ে গেলেন।