মমতার কৌশলেই ছিল ভুল, তিনি বুঝতেই পারেননি মোদী নামক 'ফেনোমেনন'টিকে
পশ্চিমবঙ্গে এবারের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে তাকে লাগিয়ে দিল বিজেপি। যেই রাজ্যে তারা ইতিহাসে কখনও দু'টির বেশি কেন্দ্রীয় আসন পায়নি, সেখানে শেষ খবর আসা পর্যন্ত তারা এগিয়ে রয়েছে ১৭টি আসনে,
পশ্চিমবঙ্গে এবারের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে তাকে লাগিয়ে দিল বিজেপি। যেই রাজ্যে তারা ইতিহাসে কখনও দু'টির বেশি কেন্দ্রীয় আসন পায়নি, সেখানে শেষ খবর আসা পর্যন্ত তারা এগিয়ে রয়েছে ১৭টি আসনে, শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে মাত্র সাতটি আসনে কম। বামফ্রন্ট একটিও আসনে এগোতে পারেনি আর কংগ্রেস মাত্র একটিতে এগিয়ে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই লজ্জাজনক ফলাফলের ট্রেন্ড দেখে টুইট করে বলেন "পরাজয় মানেই হার নয়" এবং তাতে যোগ করে বলেন যে এর পর্যালোচনা করতে হবে। দিদি তাঁর দলের এই ফলাফলের কতটা পর্যালোচনা করবেন তা জানা নেই, কিন্তু উনি যে এবারে বিজেপির মোকাবিলা করতে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছেন, তাতে কোনও বিন্দুবিসর্গ সন্দেহ নেই।
তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো এবারে পাখির চোখ করেছিলেন ৪২টি আসনকেই কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল যে গতবারের চেয়ে দশটিরও বেশি আসনে তৃণমূল পিছিয়ে পড়েছে। এই হতাশাজনক ফলাফলের কারণ প্রধানত দু'টি।
প্রধানমন্ত্রীকে যেভাবে আক্রমণ করেছেন মমতা, তা অনেকেরই পছন্দ হয়নি
প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে অলআউট আক্রমণে গিয়ে মমতা এবারে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলেন বললে ভুল হয় না। "চড় মারব", "কান ধরে ওঠবস করাবো", "পাথর ভর্তি রসগোল্লা পাঠাব" ইত্যাদি উক্তি মানুষ ভালোভাবে নেননি তা পরিষ্কার। মোদীর সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে দাঙ্গা ইত্যাদির কথা বলে পুরো বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক একটি রূপ দিয়ে মমতা হয়তো ভেবেছিলেন সাদা-কালোতে তিনি মোদীকে হারিয়ে দেবেন। নোটবন্দি-কর্মসংস্থান ইত্যাদি নিয়ে বক্তৃতা দিয়ে মোদীর সমর্থনে ধস নামাবেন। কিন্তু মমতা বুঝতে পারেননি যে 'মোদী ফেনোমেনন' আসলে ছোটোখাটো বিতর্কের চেয়ে অনেক বড় এবং তার মোকাবিলা করার জন্যে যে বিপুল রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার প্রয়োজন ছিল, তা মমতা এবং তাঁর সমমনোভাবাপন্ন নেতা-নেত্রীরা করেননি। আদর্শগত কোনও লড়াই ছিল না। ছিল শুধু অন্তঃসারশূন্য কথার লড়াই।
মমতার নিজের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা আট বছরের, মোদীর সেখানে পাঁচ বছর
দ্বিতীয়ত, মমতার এটা বোঝা উচিত ছিল যে মোদী ক্ষমতায় আছেন পাঁচ বছর কিন্তু তিনি রয়েছেন আট বছর। অর্থাৎ, তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী আবেগ ছিল অনেক বেশি উগ্র, যদিও এই নির্বাচন ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। তাই মোদীর বিরুদ্ধে সুর চড়ানোটাই একমাত্র নির্বাচনী কৌশল না করে মমতার দরকার ছিল নিজের গোলটি আগে রক্ষা করা, যা তিনি করেননি। মানুষের নজর কেন্দ্র সরকারকে ব্যর্থতার দিকে ঘোরাতে চেয়েছেন এবং তা বুমেরাং-এর মতো ফিরে এসেছে তাঁরই দিকে।
[আরও পড়ুন: 'মানুষ চেয়েছে মোদী প্রধানমন্ত্রী হোন', হার মেনে বিজেপিকে শুভেচ্ছা রাহুলের]
[আরও পড়ুন:হারছেন মুনমুন! হুমকি দিলেন তৃণমুল নেতাকেই]