ফিরে দেখা ২০২১: ভালো-মন্দে বছর কাটাল ভারত, বিশ্ব ক্রিকেটে ঘটল কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা?
বক্সিং ডে টেস্ট দিয়ে ২০২১ সাল শেষ করবে ভারতীয় দল। সেঞ্চুরিয়নে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। ভালো-মন্দে মিশিয়ে চলতি বছর কাটালেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা। এই বছরই হয়ে গেল টি ২০ বিশ্বকাপ ফাইনাল, তার আগে প্রথম আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালও। বিশ্ব ক্রিকেটের বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা একনজরে।
গাব্বা জয়
টেস্ট সিরিজে পিছিয়ে পড়েও দারুণ কামব্যাক করে চলতি বছরের গোড়াতেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ভারত। তারকা ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতিতে অজিঙ্ক রাহানের নেতৃত্বে তরুণদের অদম্য লড়াইয়ের জেরে ব্রিসবেন টেস্ট জিতে সিরিজ পকেটে পুরে নেয় ভারত। ৩২৮ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ভারত ড্রয়ের জন্য খেলেনি। সাতে নেমে ওয়াশিংটন সুন্দর প্যাট কামিন্সকে যেভাবে ছক্কা হাঁকান তাতেই বোঝা গিয়েছিল ভারতীয় ড্রেসিংরুমের মেজাজ। সাহস সম্বল করে আত্মবিশ্বাসী ভারত অজিদের শুধু বধই করেনি, ৩২ বছর পর অস্ট্রেলিয়া গাব্বায় পরাজয়ের সম্মুখীন হয়। এই সিরিজেরই সিডনি টেস্টে বিশ্বের প্রথম মহিলা আম্পায়ার হিসেবে পুরুষদের টেস্ট ম্যাচে অফিসিয়ালের ভূমিকা পালন করেন ক্লেয়ার পোলোসাক। তিনি ছিলেন চতুর্থ আম্পায়ারের ভূমিকায়।
নিউজিল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন
ভারতকে হারিয়ে প্রথম আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাব দখল করে নিউজিল্যান্ড। বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্টে শেষদিন অবধি চলে জমজমাট লড়াই। কাইল জেমিসন যেভাবে ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপে ধস নামিয়েছিলেন তাতে তিনিই যোগ্য হিসেবে ম্যাচের সেরা হন। কেন উইলিয়ামসন, রস টেলর, ডেভন কনওয়েদের পাশাপাশি টিম সাউদি, টিম বোল্টের পারফরম্যান্সে ভর করে ইতিহাস গড়ে কিউয়িরা।
টি ২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন
ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজে এগিয়ে থাকার পর ভারতীয় ক্রিকেটাররা নিজেদের উজাড় করে দিয়েছিলেন আইপিএলে। টি ২০ বিশ্বকাপে তাই ভারতের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসে ক্লান্তি। তবে নিউজিল্যান্ড ফাইনালে পৌঁছেছিল। সেমিফাইনালের আগে অবধি অপ্রতিরোধ্য ছিল পাকিস্তান। ভালো খেলছিল ইংল্যান্ডও। কিন্তু ফাইনাল হয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে। প্রথমে অজিদের ফেভারিট হিসেবে ধরা না হলেও শেষ হাসি হাসে অ্যারন ফিঞ্চের দলই। ৮ উইকেটে কিউয়ি বধ সেরে এই প্রথমবার টি ২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।
জো রুটের অনবদ্য ফর্ম
ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজে হারের পর দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে সিরিজ খোয়ায় ইংল্যান্ড। তারপর ভারতের বিরুদ্ধে ১-২ ব্যবধানে পিছিয়ে টেস্ট সিরিজে। অ্য়াশেজের প্রথম দুটি টেস্টে হেরেও বেকায়দায় ইংল্যান্ড। নেতৃত্ব সমালোচিত হলেও চলতি বছরে টেস্ট ব্যাটার ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ১৪টি টেস্টে তিনি ১৬৩০ রান করেছেন এখনও অবধি। এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে তার আগে ১৬০০ টেস্ট রানের সীমা পেরিয়েছেন মাত্র তিনজন। ২০০৬ সালে পাকিস্তানের মহম্মদ ইউসুফ ১৭৮৮ রান করে রেকর্ড নিজের দখলে রেখেছেন। বক্সিং ডে টেস্টে সেই নজির টপকাতেও পারেন রুট। ইংল্যান্ড অধিনায়ক হিসেবেও সর্বাধিক টেস্ট রান সংগ্রহকারীর তালিকায় চলতি বছরেই অ্যালেস্টেয়ার কুককে টপকেছেন তিনি। টেস্টে কুকের সর্বাধিক অর্ধশতরানের রেকর্ডটিও ভেঙে দিয়েছেন রুট।
বিধ্বংসী বাবর-রিজওয়ান
টি ২০ ক্রিকেটে ব্যাটারদের তালিকায় চলতি বছর দাপট দেখিয়েছেন পাকিস্তানের বাবর আজম ও মহম্মদ রিজওয়ান। রিজওয়ান ২৯টি ম্যাচে ১৩২৬ রান করেছেন, সর্বাধিক অপরাজিত ১০৪, শতরান ১টি, অর্ধশতরান ১২টি। চলতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে টি ২০ আন্তর্জাতিকে রানের নিরিখে রিজওয়ানের ধারেকাছে কেউ নেই। বাবর আজম রয়েছেন তাঁর পরে। বাবর ২৯ ম্যাচে করেছেন ৯৩৯ রান, সর্বাধিক ১২২, ১টি শতরান ও ৯টি অর্ধশতরান করেছেন। টি ২০ আন্তর্জাতিকে আপাতত ডেভিড মালানের সঙ্গে যুগ্মভাবে ব্যাটারদের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন বাবর। তিনে তাঁর ওপেনিং পার্টনার তথা উইকেটকিপার-ব্যাটার রিজওয়ান। তিনিই বিশ্বের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ক্যালেন্ডার ইয়ারে ১ হাজার রানের গণ্ডি টপকেছেন।
জেমাইমার দাপট
এই বছরই ইংল্যান্ডে আত্মপ্রকাশ ঘটল ১০০ বলের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দ্য হান্ড্রেডের। ভারতের বেশ কয়েকজন মহিলা ক্রিকেটার এই টুর্নামেন্টে অংশ নেন। তবে পুরো টুর্নামেন্ট খেলতে পারেননি অস্ট্রেলিয়া সফরের প্রস্তুতির কারণে। ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন জেমাইমা রডরিগেজ। নর্দার্ন সুপারচার্জার্সের হয়ে তিনি সাতটি ম্যাচে ২৪৯ রান করেন। এই টুর্নামেন্টে মহিলাদের বিভাগে সবচেয়ে বেশি রান করেন ডেন ভ্যান নিকার্ক (২৫৯)। তবে তিনি জেমাইমার চেয়ে দুটি ইনিংস বেশি খেলেছেন। ভারতীয় টি ২০ দল থেকে বাদ পড়ার পরই জেমাইমার এই নজরকাড়া পারফরম্যান্স।
ভরসা যখন মান্ধানা
ভারতীয় মহিলা ব্যাটারদের মধ্যে চলতি বছর সর্বাধিক রান করেছেন স্মৃতি মান্ধানা। এই বছর দুটি অনবদ্য শতরানও এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। মহিলাদের বিগ ব্যাশ লিগে প্রথম ভারতীয় হিসেবে তিনি শতরানের নজির গড়েছেন। ৬৪ বলে করেন ১১৪। তার আগে অস্ট্রেলিয়াতেই ভারতের মহিলা দল গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট খেলে। সেই টেস্টে মান্ধানা ২২টি চার ও একটি ছক্কা সহযোগে ২১৬ বলে ১২৭ রানের ইনিংস খেলেন। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট খেলার আগে ভারতেক প্রমীলা-বাহিনী ইংল্যান্ডেও একটি টেস্ট খেলেছে।
দশে দশ
বিশ্বের ১ নম্বর দল হিসেবে ভারতে টেস্ট সিরিজ খেলতে নেমে ০-১ ব্যবধানে সিরিজ হারে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড। তবে মুম্বই টেস্ট স্মরণীয় করে রাখলেন নিউজিল্যান্ডের মুম্বই-জাত স্পিনার। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে দেশ ছেড়েছিলেন। তবে সেই মুম্বইয়েই প্রথমবার টেস্ট খেলতে নেমে ইনিংসে ১০ উইকেট পেলেন তিনি। জিম লেকার ও অনিল কুম্বলে দুজনেই ইনিংসে ১০ উইকেট নেন বিপক্ষের দ্বিতীয় ইনিংসে। তবে আজাজ নিলেন স্পিন খেলতে পারদর্শী ভারতের প্রথম ইনিংসে। ম্যাচে মোট ১৪টি উইকেট পান তিনি।