ফিরে দেখা ২০২১: এবি-ব্র্যাভো থেকে দিন্দা-চাঁদ-নমন, যাঁরা ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন
করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে ২০২১ সালেই স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেট। কোথাও মাঠে দর্শক ফিরেছেন, কোথাও আবার সংক্রমণ বৃদ্ধির জেরে ঝুঁকি না নিয়ে দর্শক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। ওমিক্রনের দাপটের জেরে দক্ষিণ আফ্রিকায় দর্শকশূন্য মাঠেই তিনটি টেস্ট ও একদিনের সিরিজের ম্যাচগুলি খেলা হবে। একই মধ্যে চলতি বছরে কেউ পাকাপাকিভাবে ক্রিকেটকে গুডবাই জানিয়েছেন, কেউ আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছেন।

এবি ডি ভিলিয়ার্স
চলতি বছরের সবচেয়ে বড় অবসর ঘোষণা এবি ডি ভিলিয়ার্সেরই। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন। এরপর গত মাসেই টুইট মারফত তিনি জানিয়ে দেন, আর ক্রিকেট খেলবেন না। চলতি বছর আইপিএলেই শেষবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে মাঠে দেখা যায় ৩৭ বছরের এবিকে।

ডোয়েইন ব্র্যাভো
টি ২০ বিশ্বকাপ অভিযান শেষের আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ঘোষণা করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়েইন ব্র্যাভো। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৯০টি টি ২০ ম্যাচে চমকপ্রদ পারফরম্যান্স রয়েছে অলরাউন্ডার ব্র্যাভোর। সতীর্থদের কাছে পরিচিত ডিজে ব্র্যাভো নামে। ডেথ ওভারে তাঁর বোলিংয়ে আস্থা রাখেন চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে আলবিদা জানালেও বিভিন্ন দেশে টি ২০ লিগ খেলা চালিয়ে যাবেন ব্র্যাভো।

ডেল স্টেইন
চলতি বছরের অগাস্টে ২০ বছরের ক্রিকেট কেরিয়ারে যবনিকা টানার সিদ্ধান্ত নেন ডেল স্টেইন। দক্ষিণ আফ্রিকার এই পেসার ২০১৯ সালে টেস্ট থেকে অবসর নেন। গত বছর টি ২০ বিশ্বকাপ করোনার কারণে পিছিয়ে না গেলে সেটি খেলেই অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্যপূরণ হয়নি ৯৩টি টেস্টে ৪৩৯টি উইকেটের মালিকের। ১২৫টি একদিনের আন্তর্জাতিকে ১৯৬টি এবং ৪৭টি টি ২০ আন্তর্জাতিকে ৬৪টি উইকেট পাওয়া স্টেইন আইপিএলে বোলিং কোচ বা মেন্টরের ভূমিকায় যুক্ত হতে পারেন বলে জল্পনা চলছে।

রায়ান টেন দুশখাতে
চলতি বছরই ৪১ বছর বয়সে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন নেদারল্যান্ডসের রায়ান টেন দুশখাতে। তিনি এবারের টি ২০ বিশ্বকাপ খেলেই অবসর নিলেন। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শতরান হাঁকিয়ে নজর কেড়েছিলেন। আইপিএলে খেলেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সেও। ৩৩টি একদিনের আন্তর্জাতিক ও ২৪টি টি ২০ আন্তর্জাতিক খেলেছেন।

আসগর আফগান
চলতি টি ২০ বিশ্বকাপেই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক আসগর আফগান। তরুণদের সুযোগ করে দিতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানান বছর ৩৩-এর এই ক্রিকেটার। নামিবিয়া ম্যাচের শেষে তিনি মাঠ ছাড়েন সতীর্থদের কাঁধে চেপে।

উপুল থরঙ্গা ও ধামিকা প্রসাদ
শ্রীলঙ্কার দুই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারও এই বছরই অবসর ঘোষণা করেছেন। শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন ওপেনার উপুল থরঙ্গা ও ধামিকা প্রসাদ। ওপেন করতে নেমে বহু কঠিন পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার পরিত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন থরঙ্গা, আবার বেশ কিছু বিতর্কেও জড়িয়েছেন। ২০০৮ সাল থেকে ধামিকা প্রসাদ শ্রীলঙ্কার হয়ে বহু ম্যাচ খেলেছেন। কাঁধের চোট ভোগানোর পর এ বছরের গোড়াতেই ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন শ্রীলঙ্কার এই প্রাক্তন পেসার।
|
উন্মুক্ত চাঁদ
অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ২০১২ সালে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তাঁরই নেতৃত্ব। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও উন্মুক্ত চাঁদের জন্য অবশ্য ভারতীয় দলের দরজা খোলেনি। দিল্লি ছেড়ে উত্তরাখণ্ডেও গিয়েছিলেন ভালো পারফর্ম করে ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার লক্ষ্যে। সেটা না হওয়ায় চলতি বছরের অগাস্টে কার্যত হতাশা থেকেই ভারতীয় ক্রিকেট থেকে অব্যাহতি নিয়ে নেন চাঁদ। আপাতত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে সেক্ষেত্রে টি ২০ বিশ্বকাপ খেলারও স্বপ্নপূরণ হতেই পারে। প্রথম ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেটার হিসেবে বিগ ব্যাশেও দল পেয়েছেন চাঁদ।

অশোক দিন্দা
ঘরোয়া ক্রিকেটে চার শতাধিক উইকেটের মালিক অশোক দিন্দা ১৩টি একদিনের আন্তর্জাতিক ও ৯টি টি ২০ আন্তর্জাতিক খেলারই সুযোগ পেয়েছেন। বাংলা দল নির্বাচন নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু বাংলার ক্রিকেটের বিশ্বস্ত সৈনিকের কমিটমেন্ট প্রশ্নাতীত। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ব্রেক থ্রু আদায় করে নিয়ে বাংলাকে একার কাঁধে অনেক ম্যাচে জিতিয়েছেন। তবে কেরিয়ারের শেষ লগ্নে বাংলা দলে সুযোগ না পেয়ে বর্ণময় এই চরিত্র এ বছরই ক্রিকেট থেকে পাকাপাকিভাবে অবসর নেন। তারপর যোগ দেন বিজেপিতে। ময়না বিধানসভা কেন্দ্রটি তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে এখন দিন্দা বিধায়ক।

নমন ওঝা
ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে অত্যন্ত সফল নমন ওঝার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ার যে এত কম হবে তা ভাবাই যায়নি। এক সময় মহেন্দ্র সিং ধোনির বিকল্প হিসেবে তাঁর কথাই ভাবা হতো। কিন্তু একটি করে টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিক ও দুটি টি ২০ আন্তর্জাতিক খেলারই সুযোগ পেয়েছেন ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর থেকে। ১৪৬টি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচে ৯৭৫৩ রান রয়েছে নমনের। রয়েছে ২২টি শতরান। গত ফেব্রুয়ারিতেই চোখের জল ফেলে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি।

ইউসুফ পাঠান
গত ফেব্রুয়ারিতেই সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন ইউসুফ পাঠান। ২০১১ সালে ভারতের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য দেশের হয়ে ৫৭টি একদিনের আন্তর্জাতিক ও ২২টি টি ২০ আন্তর্জাতিক খেলেছেন। কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ১৭৪টি ম্যাচ খেলেছেন, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি স্মরণীয় ম্যাচও রয়েছে। ২০১০ সালের আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে তাঁর ৩৭ বলে শতরান আজও আইপিএলে দ্বিতীয় দ্রুততম।

আর বিনয় কুমার
কর্নাটকের আর বিনয় কুমার দেশের হয়ে একটি টেস্ট, ৩১টি একদিনের আন্তর্জাতিক ও ৯টি টি ২০ আন্তর্জাতিক খেলেছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৩৯ ম্যাচে ৫০৪টি, লিস্ট এ-তে ১৪১ ম্যাচে ২২৫টি ও ১৮১টি টি ২০-তে তাঁর ১৯৪টি উইকেট রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনিও ক্রিকেটকে গুডবাই জানিয়েছেন। এরপর মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে যোগ দেন।