যশপালকে রাগাতে সতীর্থদের খুনসুটির হাতিয়ার ছিলেন দিলীপ কুমার, শোকবার্তা সৌরভের
দিলীপ কুমারের অন্ধ ভক্ত ছিলেন যশপাল শর্মা। প্রিয় ইউসুফ ভাইয়ের প্রয়াণের ৬ দিনের মধ্যেই ৬৬ বছরে প্রয়াত হলেন ভারতীয় দলের এই ক্রিকেটার। দিলীপ কুমারের জন্য বদলে গিয়েছিল তাঁর ক্রিকেট-জীবন। আবার যশপাল শর্মাকে রাগাতে ভারতীয় দলে তাঁর সতীর্থদের একমাত্র হাতিয়ারও ছিলেন দিলীপ কুমারই।
বদলে যাওয়া ক্রিকেট জীবন
দিলীপ কুমারের প্রয়াণের পর এক সাক্ষাতকারে যশপাল শর্মা বলেছিলেন, ইউসুফ ভাই (দিলীপ কুমারের আসল নাম ইউসুফ খান) ক্রিকেট কেরিয়ারের উত্তরণ ঘটিয়ে আমার জীবন বদলে দিয়েছিলেন। ১৯৭৪-৭৫ মরশুমে পাঞ্জাবের হয়ে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ খেলছিলাম উত্তর প্রদেশের বিরুদ্ধে। দিল্লির মোহন নগর মাঠে খেলা চলছিল। আমি দুই ইনিংসেই শতরান করেছিলাম। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্য়াট করার সময় খেয়াল করি, একটা গাড়িতে করে গণ্যমান্য় কেউ এলেন এবং তিনি বিশেষ অতিথিদের বসার জায়গায় বসে খেলা দেখছিলেন। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো বড় কোনও রাজনীতিবিদ হবেন। কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিল। ভুল ভাঙল ইউসুফ ভাই আমার সঙ্গে কথা বলতেই। তিনি শতরান করার জন্য শুভেচ্ছা জানালেন। বললেন, দারুণ খেলেছো। আমি তোমার নাম কারও কাছে সুপারিশ করব। পরের দিন কাগজে ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা বলার ছবি বেরিয়েছিল। পরে জানতে পারি, তিনি রাজ সিং দুঙ্গারপুরের কাছে আমার নাম সুপারিশ করে জাতীয় দলে সুযোগ দিতে অনুরোধ করেছিলেন। ফলে দিলীপ কুমারই আমার জীবন বদলে দিয়েছিলেন।
ছবি- ডিডি নিউজ
যশপালকে রাগাতে
১৯৭৯ সালে লর্ডস টেস্টে ভারতীয় দলে অভিষেক হয়। ভারতীয় দলে তাঁর সতীর্থ মনিন্দর সিং জানালেন এক মজার কথা। দিলীপ কুমারের অন্ধ ভক্ত ছিলেন যশপাল শর্মা। কোনও সফরে গেলে দিলীপ কুমারের ছবির ভিডিও ক্যাসেট তাঁর সঙ্গে থাকত। তখনকার দিনে ভিসিআরে ক্যাসেট চালিয়ে অবসর সময়ে দিলীপ কুমারের ছবি দেখতেন যশপাল। মনিন্দর তাঁকে রাগতে দেখেছেন দিলীপ কুমারের এই ছবি দেখাকে কেন্দ্র করেই। আসলে যশপালকে রাগানোর জন্য সতীর্থরা ফন্দি আঁটতেনও দিলীপ কুমারকে হাতিয়ার করেই। যেমনটা হয়েছিল ১৯৮২-৮৩ সালের পাকিস্তান সফরে। ভারতীয় দলের সতীর্থদের সঙ্গে বসে দিলীপ কুমারের ছবি দেখার সময় মাঝে তিনি টয়লেটে গেল সতীর্থরা ভিসিআরে অন্য ক্যাসেট ঢুকিয়ে দিতেন। আর তাতে স্বাভাবিকভাবেই রেগে যেতেন যশপাল।
দিলীপ-প্রয়াণে
যশপাল শর্মা এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ইউসুফ ভাই আমার কাছে পিতৃসম ছিলেন। আমার কেরিয়ারের উত্তরণে যেমন তাঁর ভূমিকা রয়েছে, তেমনই আমি তাঁর অনেক ছবিও দেখেছি। ক্রান্তি ছবির শুটিং দেখতে তিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমি গিয়েছিলাম, সেই ছবি ব্লকবাস্টার হয়। আমাদের সময় অনেক সতীর্থ রফির গান গুনগুন করতেন, তবে আমার প্রিয় ছিলেন ইউসুফ ভাই, যাঁকে সকলে দিলীপ কুমার বলেন। আগে কোনও পরিচয় ছিল না। আমার খেলা দেখেই তিনি আমার নাম বোর্ডের কাছে সুপারিশ করেছিলেন, যা বদলে দেয় আমার জীবন।
ছয় দিনের ব্যবধান
৭ জুলাই প্রয়াত হন দিলীপ কুমার। সেদিন এক টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকার দিতে গিয়ে যশপাল শর্মা বলেছিলেন, ইউসুফ ভাই যখনই হাসপাতালে ভর্তি হন বলে খবর পেয়েছি আমার ভিতরে কেমন একটা উৎকণ্ঠা বোধ হতে থাকে। কে জানত, তার ৬ দিন পর তিনিই চলে যাবেন প্রিয় ইউসুফ ভাইয়ের কাছে। দিলীপ কুমারের মৃত্যুসংবাদের সঙ্গে তাঁর মনের কষ্ট আর তার ফলেই এই আকস্মিক হার্ট অ্যাটাক কিনা তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে। কারণ, এ তো আর চলে যাওয়ার বয়স নয়। দিলীপ বেঙ্গসরকার থেকে মনিন্দর সিং সকলেই বলছেন, আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ফিট ছিলেন যশপালই। স্বাস্থ্য সচেতনও। তিনিই কিনা এভাবে চলে গেলেন!
Sad to hear the news of yashpal Sharma ..had the opportunity to work with him as captain,player and then on TV .A very important part of 1983 win which showed young players like us dream of trophies..RIP🙏
— Sourav Ganguly (@SGanguly99) July 13, 2021
Really saddened and shocked at losing a colleague of World Cup fame so early in life. Condolences to the family and God bless his soul 🙏🏻 #YashpalSharma pic.twitter.com/jVkHEyRWfP
— Ravi Shastri (@RaviShastriOfc) July 13, 2021