করোনা আক্রান্ত হলে কী করবেন আর কী নয়, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ ঋদ্ধির
আইপিএলে জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ঋদ্ধিমান সাহা। করোনা জয়ের পর পরিবারের সঙ্গে কয়েকদিন কাটিয়ে এখন তিনি মুম্বইয়ে। টিম হোটেলে ইংল্যান্ডগামী ভারতীয় টেস্ট দলের সতীর্থদের সঙ্গে কঠোর নিভৃতবাসে রয়েছেন। ওয়ানইন্ডিয়া বাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় নিজের অভিজ্ঞতার থেকে ঋদ্ধিমান সাহা জানালেন, করোনা পজিটিভ হলে কী করতে হবে আর কী করা উচিত নয়।
ঋদ্ধিমানের করোনা
ঋদ্ধিমান সাহার কথা, ১ মে রাতের দিকে হাল্কা জ্বর আসে। মিনিট ১৫-২০ কাঁপুনি দেওয়ার পর আর সমস্যা ছিল না। পরের দিন চিকিৎসককে সবটা জানিয়ে বলি, তাহলে ব্রেকফাস্টে যাচ্ছি না। তিনিও বারণ করেন ব্রেকফাস্টে যেতে। এভাবে নিজের ঘরেই দু-দিন ছিলাম। করোনা পরীক্ষা প্রথম দুই দিনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তৃতীয় দিনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। কিন্তু আমি আগে থেকেই আইসোলেশনে থাকায় সংক্রমণ বাকিদের মধ্যে ছড়ায়নি। করোনা পজিটিভ হওয়ার পর আরও ১৪ দিন আমি হোটেলে একটা ঘরের মধ্যেই কাটিয়েছি। রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পর বোর্ডের অনুমতি দিয়ে কলকাতায় ফিরি।
ছবি- টুইটার
সম্ভাব্য কারণ
জৈব সুরক্ষা বলয়েও কীভাবে করোনা আক্রান্ত হলেন তা এখনও বুঝতে পারেননি ঋদ্ধিমান সাহা। তিনি বললেন, আমার রিপোর্ট যেদিন পজিটিভ এলো তার দিন দুই আগে আমাদের চেন্নাই সুপার কিংসের সঙ্গে খেলা ছিল। তারপর জানতে পারি ওই দলের কয়েকজন পজিটিভ। তারপর আমারও পজিটিভ এলো রিপোর্ট। হোটেলে জৈব সুরক্ষা বলয়ে গতবারের চেয়ে কোনও ফারাক দেখেননি ঋদ্ধি। চেন্নাই সুপার কিংস বোলিং কোচ লক্ষ্মীপতি বালাজি বলেছিলেন, অনুশীলনের জায়গা থেকে সংক্রমণ ছড়ালেও ছড়াতে পারে। বালাজির সঙ্গে সহমত পোষণই করছেন ঋদ্ধি। তাঁর কথায়, দুবাইয়ে বেশি ক্রিকেট হয় না। ওখানে যখন আমরা অনুশীলন করতাম কেউ দেখতে আসতো না। নিরিবিলিতেই অনুশীলন সারতে পারতাম। কিন্তু দিল্লিতে অনেকেই প্র্যাকটিস চলাকালীন উঁকিঝুঁকি মারতেন। কেউ আমাদের কাছ অবধি না এলেও পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেছেন, এমনটাও হয়েছে। ফলে সেখান থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
সময় কাটানো
ভারতীয় দলের হয়ে খেলাই হোক কিংবা আইপিএল বা ঘরোয়া ক্রিকেট। ঋদ্ধিমান সাহাকে বাইরে বিশেষ দেখা যায় না। হোটেলের ঘরে থাকতেই পছন্দ করেন। আইসোলেশনে একা একটা ঘরে কেমন কাটিয়েছেন সে প্রসঙ্গে ঋদ্ধি বলেন, অনেকে যে বলেন করোনা আক্রান্ত হলে ফোনে কথা বলার ইচ্ছা চলে যায় আমার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। অনেকে মেসেজ করেছেন আরোগ্য কামনা করে। সেগুলোও পড়ে দেখা হয়নি। মাঝে আমার মেয়ে আমরা আরোগ্য কামনা করে যে ছবিটা পাঠিয়েছিল সেটা পেয়ে ভালো লেগেছিল। এমনিতে আমার মৃদু উপসর্গ ছিল। হাল্কা জ্বর ছিল দিন-দুয়েক। আর দিন পাঁচেক গন্ধ চলে গিয়েছিল। এটুকুই। বই পড়ার অভ্যাস আমার নেই। হটস্টার, নেটফ্লিক্সে বেশ কিছু মুভি দেখেছি। বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলেও কথা হয়েছে। টিমের সকলেই খবর নিচ্ছিল। এভাবেই কেটে গেল।
ঋদ্ধির পরামর্শ
করোনা আক্রান্ত হলে দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে মনকে ফুরফুরে রাখার পরামর্শ দিয়ে ঋদ্ধিমান বলেন, টিভি বা সংবাদমাধ্যম খুললেই করোনা পরিস্থিতির যে সব খবর তাতে মনে অনেক রকম চিন্তা আসতে পারে। অক্সিজেনের মাত্রা বা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক হতে গেলে চিন্তায় হিতে বিপরীত হতে পারে। ফলে কোনওরকম দুশ্চিন্তা মনে রাখবেন না। আমিও রাখতাম না। এতে বডি ভালো রেসপন্স করে, আমার ক্ষেত্রে সেটা হয়েছিল। এতে আরোগ্যলাভ ত্বরান্বিত হয় বলেই আমার ধারণা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান ভিডিও কল করেই। করোনা নিয়ে নয়, অন্য সব স্বাভাবিক আলোচনা করুন। টিভি দেখতে হলে এমন কিছু দেখুন যাতে মন ভালো থাকে। মজাদার কিছু দেখতে পারেন। মাঝেমধ্যে ঘরের মধ্যেই পায়চারি করে নিতে পারেন। এভাবে চললে নিভৃতবাসের চাপ অনুভূত হবে না। আমার তো কোয়ারান্টিন একেবারেই হেক্টিক মনে হয়নি। এক কথায়, মানসিকভাবে পজিটিভ থাকতে হবে। তা শরীরের পক্ষেই ভালো। প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি খেতে বলা হয়। তবে খাদ্যাভাস-সহ শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলবেন।
ছবি- টুইটার