টি-টোয়েন্টি সার্কিটে বঞ্চিত ঋদ্ধিমান আইপিএলে ফের জ্বলে উঠলেন, আরও কত পথ বাকি!
টি-টোয়েন্টি সার্কিটে বঞ্চিত ঋদ্ধিমান আইপিএলে ফের জ্বলে উঠলেন, আরও কত পথ বাকি!
আইপিএল ২০২০-তে এর আগে পর্যন্ত একটি ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল ঋদ্ধিমান সাহাকে। ফের যে ম্যাচে দলে ফিরলেন, সেটি ছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছে মরণ-বাঁচন গোছের। বিধ্বংসী জনি বেয়ারস্টোকে বসিয়ে ঋদ্ধিকে দিয়ে ইনিংস খেলিয়ে ফাটকা খেলেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নাররা। সেই উদ্যোগ যে এভাবে সফল হবে, তা হয়তো সানরাইজার্স টিম ম্যানেজমেন্ট ভাবেনি। আর সেই অবিশ্বাসের কারণেই হয়তো আইপিএল তথা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সার্কিট থেকে বারবার বঞ্চিত হতে হয় বাংলার লড়াকু উইকেটরক্ষককে।
দিল্লির বিরুদ্ধে জবাব দিলেন ঋদ্ধিমান
এর আগে আইপিএল ২০২০-তে কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) বিরুদ্ধে ঋদ্ধিমান সাহাকে মাঠে নামার সুযোগ দিয়েছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ২৮ রান করলেও প্রচুর বল নষ্ট করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। দল থেকে বাদও পড়েছিলেন। আবার যখন সুযোগ পেলেন, তাকেই জবাব দেওয়ার মঞ্চ হিসেবে বেছে নিলেন বাংলার উইকেটরক্ষক। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ৮৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেললেন মারমুখী ঋদ্ধি। প্রমাণ করলেন যে দেশের হয়ে কেবল টেস্ট খেলাই তাঁর কাজ নয়।
ঋদ্ধির আইপিএল কেরিয়ার
আইপিএলে এখনও পর্যন্ত ১২২টি ম্যাচ খেলেছেন ঋদ্ধিমাস সাহা। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১৮৮২ রান। একটি শতরান ও সাতটি অর্ধশতরান রয়েছে বাংলার উইকেটরক্ষকের ঝুলিতে। আইপিএলে উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ৬১টি ক্যাচ নেওয়ার পাশাপাশি ১৯ জন ব্যাটসম্যানকে স্ট্যাম্প করেছেন।
কেকেআর থেকে শুরু
২০০৮ সালের আইপিএলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন কলকাতা নাইট রাইডার্সে জার্সিতে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা। দল থেকে মহারাজকে ব্র্যাত্য করার পাশাপাশি ছেঁটে ফেলা হয়েছিল বাংলার উইকেটরক্ষককে। চলতি আইপিএলে প্রতিভার অভাবে ঠোক্কার খেয়ে চলা কেকেআরে অনায়াসে পেতে পারতেন ঋদ্ধিমান। অন্তত অন্ধের যষ্ঠী হিসেবে এক বাঙালি তো থাকতেন দলে! কে বলতে পারে, লাগাতার ব্যর্থ হয়ে চলা দীনেশ কার্তিকের পরিবর্ত হয়তো ঋদ্ধি নিজের রাজ্যের দলের হয়ে সেরাটা দিতে পারতেন।
আইপিএল ফাইনালে শতরান করেও ব্রাত্য
ঋদ্ধিমান সাহাকে ব্যাটসম্যানের চেয়ে উইকেটরক্ষক বলতেই পছন্দ করে ক্রিকেট বিশ্ব। ক্রিকেট প্রেমীদের ভুলটা ভেঙেছিল সেদিন, যেদিন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের জার্সিতে আইপিএল ফাইনালে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন বাংলার উইকেটরক্ষক। ২০১৪ সালের ওই ম্যাচে কেকেআরের বিরুদ্ধে ১১৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে নিঃশব্দে জবাব দিয়েছিলেন ঋদ্ধিমান।
তবু বঞ্চিত ঋদ্ধি
২০১৪ সালের আইপিএল ফাইনালে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে অতিমানবিক ইনিংস খেলার পরেও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবে ধীরে ধীরে ব্রাত্য হয়েছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা। সেই সুযোগে তাঁকে কিনে নিয়েছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ২০১৭ এবং ২০১৮ সাল ছেড়ে দিলেন ইংল্যান্ডের হাই প্রোফাইল উইকেটরক্ষক তথা টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট জনি বেয়ারস্টোর আগমনে এই দলেও তাঁকে স্টপ গ্যাপ উইকেটরক্ষক হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছিল। তবে তিনি যে কারও থেকে কোনও অংশ কম নন, দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ৮৭ রানের ইনিংস খেলে বুঝিয়ে দিয়েছেন পাপালি। বুঝে গিয়েছে ডেভিড ওয়ার্নার শিবিরও।
তবু ঠাই শুধু টেস্ট দলে
দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে মঙ্গলবারের ম্যাচে ঋদ্ধিমান সাহা যেভাবে ব্যাট করেছেন, তাতে তাঁকে অনায়াসে টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্টের তকমা দেওয়া যায়। তা সত্ত্বেও জাতীয় দলের ২০ ওভার তো দূর, ওয়ান ডে দলেও জায়গা হয় না বাংলার উইকেটরক্ষকের। টেস্ট দল জায়গা পাওয়াটা সান্ত্বনা পুরস্কার ছাড়া যে আর কিছু নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে। তবু স্বভাবশান্ত পাপালি নীরব ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। কেবল কথা বলবে তাঁর ব্যাট। যেখানে যখনই সুযোগ পাবেন, আবারও প্রমাণ করবেন নিজেকে। আর এখানেই তিনি সবার থেকে আলাদা।