করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেন দৃষ্টান্ত হতে পারেন ১২ বছর আগে অবসর নেওয়া সৌরভ
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেন দৃষ্টান্ত হতে পারেন ১২ বছর আগে অবসর নেওয়া সৌরভ
২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন কিংবদন্তি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। দীর্ঘ ১২ বছর গঙ্গাবক্ষে বয়ে গিয়েছে অনেকটা জল। দ্বিতীয়বারের জন্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনিকে দেশের সর্বকালের সেরা অধিনায়কের তকমা দিয়েছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। অনায়াসে চোখের আড়াল করা হয়েছিল নেতা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব। তাতে মহারাজের কৌলিন্যে ভাঁটা পড়েছে কি! তাঁর দাঁত কামড়ে পড়ে থাকা কিংবা ফিরে আসার লড়াই গোপন করা গিয়েছে কি! ২০১১-র বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের নির্মাতা সৌরভ এখন বিসিসিআই সভাপতি। তাঁর লড়াই হতে পারে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের মন্ত্র হতেই পারে।
করোনা ভাইরাসের প্রভাব
বিশ্বের ২১৩টি দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৮২ লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষ। ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে তিন লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, দিল্লি, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান এবং পশ্চিমবঙ্গে মারণ ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করছে সরকার। যুদ্ধ করছেন মানুষ। সেই লড়াইয়ে বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অধ্যাবসায় সকলের দৃষ্টান্ত হতে পারে।
চার বছর পর দ্বিতীয় ওয়ান ডে খেলেছিলেন সৌরভ
ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করার সৌজন্যে ১৯৯২ সালে ১৯ বছরের সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে অস্ট্রেলিয়াগামী ভারতের ওয়ান ডে দলে জায়গা দেওয়া হয়েছিল। সেই সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এক ম্যাচে ৩ রান করে আউট হয়েছিলেন মহারাজ। তাঁকে দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। তবে হেরে যাননি সৌরভ। চার বছর পর ভারতীয় দলে ফিরে এসেছিলেন বিসিসিআই সভাপতি। খেলেছিলেন আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ান ডে ম্যাচ। ১৯৯৬-এর মে মাসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪৬ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন মহারাজ। সেই তাঁকেই ওয়ান ডে ক্রিকেটের অন্যতম সফল ক্রিকেটার হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশের হয়ে ৩১১টি ওয়ান ডে ম্যাচ খেলে ১১৩৬৩ রান করেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এই ফর্ম্যাটে ২২টি শতরান রয়েছে তাঁর।
টেস্ট অভিষেক
১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক লর্ডসে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল কিংবদন্তি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। কেরিয়ারের প্রথম ইনিংসেই শতরান করেছিলেন মহারাজ। দ্বিতীয় টেস্টেও শতরান করেছিলেন বিসিসিআই সভাপতি। ভারতের হয়ে ১১৩টি টেস্ট খেলে ৭২১২ রান করেছেন সৌরভ। এই ফর্ম্যাটে ১৬টি শতরানের মালিক মহারাজ।
স্বর্ণযুগের স্রষ্টা সৌরভ
২০০০ সালে ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ডে যখন জর্জরিত ভারতীয় ক্রিকেট, তখন টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়কত্বের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল অনভিজ্ঞ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে। এরপরেই ভারতীয় ক্রিকেটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছিল। টিম ইন্ডিয়াকে ১৪৬টি ওয়ান ডে-তে নেতৃত্ব দিয়েছেন মহারাজ। ৭৬টি ম্যাচ জিতেছে ভারত। ৬৫টি ম্যাচে হার হজম করতে হয়েছে। অন্যদিকে সৌরভের নেতৃত্বে ৪৯টি টেস্ট খেলে ২১টি ম্যাচ জিতেছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। তার মধ্যে ১১টি জয় এসেছে বিদেশের মাটিতে। অধিনায়ক হিসেবে দেশকে ২০০২-র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও ঐতিহাসিক ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি উপহার দিয়েছেন মহারাজ। তরুণ টিম ইন্ডিয়াকে ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে গিয়েও দুর্ধর্ষ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হার হজম করতে হয়েছিল। সেই অস্ট্রেলিয়াকেই তাদের মাটিতে টেস্ট সিরিজ ড্র করাতে বাধ্য করেছিল সৌরভ ব্রিগেড। পাকিস্তানকে তাদেরই মাটিতে টেস্ট ও ওয়ান ডে সিরিজ হারানো প্রথম ভারতীয় অধিনায়কের নামও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাই তো ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি এবং দৃষ্টান্ত।
টলমল গদি
এতকিছুর পরেও ২০০৫ সালে গদি টলে গিয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। গ্রেগ চ্যাপেলকে ভারতীয় ক্রিকেট দলের হেড কোচ করার ক্ষেত্রে নিজের সায় দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে সবার প্রথমে মহারাজের হাত থেকে অধিনায়কত্ব কেড়ে নিয়েছিলেন গ্রেগ। অচিরেই দল থেকে বাদও পড়েছিলেন দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেট অধিনায়ক। সূত্রের খবর, এ কাজে গ্রেগ চ্যাপেলকে প্রচ্ছন্ন মদত দিয়েছিলেন জাতীয় নির্বাচকদের মধ্যে কেউ কেউ। গ্রেগের নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন টিম ইন্ডিয়ার সিনিয়র ক্রিকেটাররা। এরপরেও হেরে যাননি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। লড়ে গিয়েছিলেন অবিরাম।
মহারাজকীয় প্রত্যাবর্তন
জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েও থেমে যাননি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ঘরোয়া ক্রিকেটে লাগাতার রান করে নিজেকে টিম ইন্ডিয়ার জন্য অপরিহার্য করে তুলেছিলেন মহারাজ। ২০০৬ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সৌরভকে দলে রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন ভারতীয় নির্বাচকরা। অনেকে ভেবেছিলেন, সিংহের গুহায় ঢুকে ডেল স্টেইন, মাখায়া এনতিনিদের আগুনে পেস সামলাতে হয়তো নাজেহাল হবেন মহারাজ। কিন্তু হয়েছিল উল্টোটাই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারত ওই টেস্ট সিরিজ হারলেও দলের মধ্যে সর্বাধিক রান ছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (২১৪)। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে প্রথম টেস্ট ম্যাচ হয়েছিল জোহানেসবার্গে। অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রথম ইনিংসে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিল টিম ইন্ডিয়ার টপ অর্ডার। কেবল লড়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর ১০১ বলে ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংস এখনও ক্রিকেট প্রেমীদের চোখেমুখে লেগে। ডেল স্টেইন, শন পোলক সম্বৃদ্ধ বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে চারটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন মহারাজ। ক্রিকেট কেরিয়ারের শেষ দুই বছরে পারফরম্যান্সের নিরিখে রথি-মহারথিদের পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন বিসিসিআই সভাপতি।
সৌরভই দৃষ্টান্ত
২০০৮ সালে নাগপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। নমো নমো করে তাঁকে বিদায় জানিয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল বিসিসিআই। এবার সেই একরোখা বাঙালিই ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বেসেবা। দেশের ক্রিকেট আইকনদের অন্যতম। কীভাবে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে সব বঞ্চনার জবাব দিতে হয়, দেখিয়ে চলেছেন সৌরভ। জুগিয়ে চলেছেন লড়াইয়ের রসদ। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেই হার না মানা মানসিকতা আপন করলে ক্ষতি কী!
ভারত-চিন সিমান্তে শহিদ জাওয়ানদের নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট, নাম জড়িয়ে গেল ধোনির ফ্র্যাঞ্চাইজির