পোলার্ডদের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ের আগেও চর্চায় আশ্চর্য আউট
অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড। শ্রীলঙ্কার ওপেনারের সেই আশ্চর্য আউট নিয়ে চর্চা অব্যাহত আজ সিরিজের দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচের আগেও। টি ২০ সিরিজে হারের পর আজ হারলে ক্যারিবিয়ান সফরে একদিনের সিরিজও হাতছাড়া হবে শ্রীলঙ্কার। এই পরিস্থিতিতেও আশ্চর্য আউট নিয়ে চর্চা চলছেই, যা থেকে মুক্ত হতে পারছেন না আশ্চর্য আউটের শিকার দানুষ্কা গুণতিলকা।
ঘটনার সূত্রপাত
১০ মার্চ নর্থ সাউন্ডে সিরিজের প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিকে মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কা। ২২তম ওভারে বল করছিলেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক কায়রন পোলার্ড। একটি বল খেলে দৌড় শুরু করেন দানুষ্কা গুণতিলকা। তিনি তখন শতরানের ওপেনিং পার্টনারশিপ গড়ার পর অপরাজিত ৫৫ রানে। গুণতিলকাকে দেখে সঙ্গী পাথুম নিশঙ্কাও দৌড়ে স্ট্রাইকিং এন্ডের দিকে ছুটে যান। যদিও পোলার্ডকে দৌড়াতে দেখে নিজের ক্রিজে ফেরত যেতে শুরু করেন দানুষ্কা। সে সময়ই বল তাঁর পায়ে লাগে যা ধরতে সমস্যা হয় পোলার্ডের।
অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড
পোলার্ড রান আউট করতে দৌড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সামনের দিকে তাকানো অবস্থায় পিছোতে থাকা গুণতিলকার পায়ে বল লেগে সরে যাওয়ায় পোলার্ড সঠিক সময়ে বল ধরতে পারেননি। সে সময় উত্তেজিত হয়ে তিনি অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ডের জোরালো আবেদন করেন। আম্পায়াররা সিদ্ধান্ত তৃতীয় আম্পায়ারের জন্য পাঠালে রিপ্লে দেখে টিভি আম্পায়ার গুণতিলকাকে আউট ঘোষণা করেন।
আউট নিয়ে বিতর্ক
যদিও ইচ্ছাকৃতভাবে বল পায়ে ঠেলে গুণতিলকা সরিয়ে দিয়েছিলেন কিনা তা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। টিভি রিপ্লেতে বিষয়টি পরিষ্কারও হয়নি। তবু গুণতিলকাকে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হতে হয়। শেষে ম্যাচটি ১৮ বল বাকি থাকতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে জিতে নেয়। গুণতিলকার দাবি, ম্যাচের পর তাঁর কাছে এসে ক্ষমা চেয়ে পোলার্ড বলেন, সেই মুহূর্তে আমি সব কিছু স্পষ্টভাবে দেখতে পাইনি, পরে ভুল বুঝতে পারি। অর্থাৎ গুণতিলকা বোঝাতে চেয়েছেন, রিপ্লেতে দেখে পোলার্ড বুঝতে পারেন বলটি ইচ্ছে করে গুণতিলকা ঠেলে সরাননি। দুই টেস্টের সিরিজ শুরুর আগে শেষ দুটি একদিনের আন্তর্জাতিক জিতে সিরিজ পকেটে পুরে ফেলা লক্ষ্য শ্রীলঙ্কার।
টেস্টে একবারই এমন আউট
টেস্ট ক্রিকেটে অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ডের কারণে আউট হওয়ার একটিই নজির রয়েছে। প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক লেন হাটন ১৯৫১ সালে ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এমন আউট হয়েছিলেন।
একদিনের ক্রিকেটে বহু নজির
মহিলাদের একটি ম্যাচ-সহ এর আগে একদিনের আন্তর্জাতিকে আটবার এমন আউটের নজির রয়েছে। প্রথমবার ১৯৮৭ সালে করাচিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড আউট হন পাকিস্তানের রামিজ রাজা। ১৯৮৯ সালে আমেদাবাদে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে মহিন্দর অমরনাথ এমনভাবে আউট হন। ২০০৬ সালে পেশেয়ারে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ইনজামাম উল হক, ২০১৩ সালে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের মহম্মদ হাফিজ, পোর্ট এলিজাবেথে ওই বছরই পাকিস্তানের আনোয়ার আলি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেই অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ডের কারণে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। ২০১৫ সালে লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস এবং ২০১৯ সালে শারজায় সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বিরুদ্ধে আমেরিকার জেভিয়ার মার্শাল একই কারণে আউট হন। মহিলাদের ক্রিকেটে ২০১৬ সালে বিজয়ওয়াড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভারতের থিরুশ কামিনীরও এভাবে আউট হওয়ার নজির রয়েছে।
টি ২০-তে এমন আউট
টি ২০ আন্তর্জাতিকে ২০১৭ সালে টনটনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড আউট হন ইংল্যান্ডের জেসন রয়। ২০১৯ সালে মাস্কটে কাতারের বিরুদ্ধে মালদ্বীপের হাসান রশিদ এভাবে আউট হয়েছিলেন। আইপিএলে ২০১৩ সালে পুনে ওয়ারিয়র্সের বিরুদ্ধে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ইউসুফ পাঠান এভাবে আউট হন। ২০১৯ সালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে দিল্লি ক্যাপিটালসের অমিত মিশ্রও এমন আউট হয়ে হতাশ হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও এমন নজির রয়েছে। ২০১৭ সালে সৌরাষ্ট্রের শেল্ডন জ্যাকসন এভাবে আউট হয়েছিলেন বিজয় হাজারে ট্রফির ম্যাচে চণ্ডীগড়ের বিরুদ্ধে। ২০১১ সালে সারের হয়ে খেলার সময় মার্ক রামপ্রকাশ গ্লস্টারশায়ারের বিরুদ্ধে অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ডের শিকার হন। ২০১৮ সালে ব্রিসবেন হিটের অ্যালেক্স রস এবং ২০১৭ সালে লগান কাপে জিম্বাবোয়ের রায়ান বার্ল একইভাবে আউট হয়েছিলেন।