ছাড়ুন, একলা থাকতে দিন পূজারাকে! ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টের আগের দিন বললেন বিরাট কোহলি
কাল থেকে নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় সংস্করণ শুরু হচ্ছে ভারত-ইংল্যান্ড প্রথম টেস্ট দিয়ে। টেস্টের আগের দিন প্রথম একাদশ দিয়ে ধোঁয়াশা রেখে দিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ২০১৮ সালের ইংল্যান্ড সফরে ভারত পাঁচ টেস্টের সিরিজে ১-৪ ব্যবধানে হারলেও জিতেছিল শুধু ট্রেন্ট ব্রিজে। প্রথম ইনিংসে ৯৭ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৩ রান করে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন বিরাট কোহলি, এবারও তাঁর উইকেটটিই মূলত টার্গেট করছে ইংল্যান্ড। চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে থাকা ভারত অধিনায়ক পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন চেতেশ্বর পূজারার প্রতিও।
পূজারার পাশে
চেতেশ্বর পূজারার অফ ফর্ম, সেই সঙ্গে স্লো ব্যাটিং নিয়ে চর্চা অব্যাহত। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ টেস্টের সিরিজ শুরুর আগে অবশ্য এই চর্চাকে আমল দিতে চাইলেন না ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ৯২টি টেস্টে টেস্টে বিরাটের রান ৭৫৪৭। মোট রানের নিরিখে বর্তমান দলে তাঁর পরেই রয়েছেন পূজারা (৬২৬৭)। আজ বিরাট বলেন, আমি মনে করি পূজারা যে দক্ষতাসম্পন্ন ক্রিকেটার এবং তাঁর যা অভিজ্ঞতা রয়েছে তাতে এই বিষয়টি তাঁর উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত। খেলায় কোথায় কী খামতি হচ্ছে সেটা বুঝে তা পুষিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারই পারেন। আমি বা আমার দলের প্রত্যেকেই ওয়াকিবহাল দলের ভালোর জন্য কী করা প্রয়োজন। আমি বাইরে থেকে বলতেই পারি সমালোচনা অপ্রয়োজনীয়, তবে একইসঙ্গে আমি এটাও নিশ্চিত পূজারা এ সবে গুরুত্বও দেন না। মানুষ ইচ্ছামতো যা খুশি বলতেই পারেন। যদি কেউ মনে করেন সেগুলির কোনও গুরুত্ব আছে তাহলে আলাদা কথা, নাহলে নিজের পথে চলাটাই শ্রেয়।
শার্দুল প্রথম একাদশে?
মহম্মদ সিরাজের বলে মাথায় চোট পেয়ে এই টেস্ট থেকে ছিটকে গিয়েছেন ময়াঙ্ক আগরওয়াল। পৃথ্বী শ ও সূর্যকুমার যাদব এদিন ইংল্যান্ডে গেলেও সেখানে পৌঁছে তাঁদের নিভৃতবাসে থাকতে হবে। তৃতীয় টেস্টে তাঁরা বিবেচিত হতে পারেন। কিন্তু প্রথম টেস্টের আগের দিনও প্রথম একাদশ খোলসা করেননি বিরাট কোহলি। অভিমন্যু ঈশ্বরন দলের সঙ্গে থাকলেও মনে করা হচ্ছে তাঁর টেস্ট অভিষেক ট্রেন্ট ব্রিজে নাও হতে পারে। কেন না, রোহিত শর্মার সঙ্গে ওপেন করতে দেখা যাবে প্রস্তুতি ম্যাচে শতরান পাওয়া লোকেশ রাহুল অথবা হনুমা বিহারীকে। তবে হার্দিক পাণ্ডিয়ার অল রাউন্ডার পজিশনে শার্দুল ঠাকুর যে যোগ্য সেটা অজিঙ্ক রাহানের পর আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিরাট কোহলিও। তিনি বলেন, শার্দুল অল রাউন্ডার হিসেবে দলে সুযোগ পেতেই পারেন। তিনি মাল্টি ডাইমেনসনাল ক্রিকেটার, যত বেশি সুযোগ পাবেন তত তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়বে। টেস্ট-সহ যে কোনও ফরম্যাটেই শার্দুলের উপস্থিতি দলে যথেষ্ট ভারসাম্য এনে দেয়। হার্দিক অনেকদিন অল রাউন্ডার হিসেবে দলকে সার্ভিস দিয়েছেন। তিনি ফের বোলিংয়ের ছন্দে ফিরছেন। ফলে এমন ক্রিকেটার দলের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং শার্দুলও নিশ্চিতভাবেই এক দারুণ সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার। শুধু এই সিরিজ নয়, অন্য সিরিজগুলিতেও তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন।
প্রস্তুতি ভালো
২০১৮ সালের সিরিজের চেয়েও দু মাস ইংল্যান্ডে কাটিয়ে এবার প্রস্তুতি যে অনেকটাই ভালো তেমনটাই মনে করছেন বিরাট কোহলি। তাঁর কথায়, সেই সিরিজে খেলা ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা এখন আরও বেড়েছে। ব্যর্থতা আসে, কিন্তু তার থেকেও ঘুরে দাঁড়ানোর মতো ক্রিকেটার আমাদের দলে রয়েছেন যাঁরা চাপের মধ্যেও ভালো কিছু করতে সক্ষম। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কোনও বিপর্যয় কীভাবে সামাল দেওয়া যায় সে বিষয়ে বোঝাপড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিটি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হয় এবং যখন তা নিজেদের পক্ষে থাকে সেটাকে কাজে লাগাতে হয়। একটি টেস্টে সব সেশনই আমাদের হবে না। ফলে যখন কোনও সেশন আমাদের দলের পক্ষে যাচ্ছে না সেখানেও কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। কঠিন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনার সঠিক রূপায়ণেই যে সাফল্যের চাবিকাঠি রয়েছে তা বুঝিয়ে দেন ভারত অধিনায়ক।
বিরাট টার্গেট
জেমস অ্যান্ডারসন বিরাট কোহলিকে টেস্টে পাঁচবার আউট করেছেন। ২০১৪ সালের ইংল্যান্ড সফরে বিরাট ব্যর্থ হলেও ২০১৮ সালের সফলে ভারত অধিনায়ক ৫৯৩ রান করেছিলেন। সেবার জিমি অ্যান্ডারসন একবারও বিরাটকে আউট করতে পারেননি। এবার কোনও বিশেষ পরিকল্পনা আছে কিনা সে উত্তরে বিরাট বলেন, না! তবে বিরাটের উইকেটই যে ইংল্যান্ড টার্গেট করছে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অ্যান্ডারসন। তিনি বলেন, আমি না পেলেও আমাদের কেউ বিরাটের উইকেট পেলে ভালোই, সেটা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই। এই উইকেটটা আমাদের কাছে খুব বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। শুধু ব্যাটসম্যান নন, অধিনায়ক হিসেবেও বিরাট দলকে দারুণভাবে পরিচালনা করেন, তিনি বড় মাপের একজন ক্রিকেটার। আমি তাঁর বিরুদ্ধে খেলতে মুখিয়ে রয়েছি। সব সময় বিশ্বের সেরা চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসি। ভারত যেমন আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল হেরেছে তেমনই ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছেই সিরিজ হেরেছে ইংল্যান্ড। অ্যান্ডারসন যদিও বলছেন, ওই সিরিজের থেকে ভালো পারফর্ম করার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। সবমিলিয়ে হাইভোল্টেজ লড়াইয়ের প্রহর গুনছে গোটা ক্রিকেটবিশ্ব।