ভুল দল নির্বাচন কি কাল হল ভারতের? ৩ আনফিট খেলোয়াড়ের বদলি যদি হত এই তিনজন
ভুল দল নির্বাচন কি কাল হল ভারতের? ৩ আনফিট খেলোয়াড়ের বদলি যদি হত এই তিনজন
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভরাডুবি হল ভারতের। পাকিস্তানের কাছে পর্যুদস্ত হওয়ার পর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মুখ থুবড়ে পড়েছে কোহলি-ব্রিগেড। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় কার্যত নিশ্চিত ভারতের। কিন্তু কেন এই শোচনীয় ব্যর্থতা। আনফিট খেলোয়াড়দের নির্বাচিত করাই কি তবে কাল হল ভারতের? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের অভূতপূর্ব ব্যর্থতা চেতন শর্মার নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটিকেও প্রশ্ন-বিদ্ধ করেছে।
ফিটনেস নিয়েও উঠে পড়েছে যাঁদের
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কোহলি অ্যান্ড কোম্পানি পরপর পরাজিত হয়েছে। বোলাররা ২ ম্যাচে মাত্র ২টি উইকেট নিতে সমর্থ হয়েছেন। বেশিরভাগ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ব্যর্থ। সবথেকে বড় প্রশ্ন চিহ্ন উঠেছে হার্দিক পাণ্ডিয়া, বরুণ চক্রবর্তী এবং ভুবনেশ্বর কুমারকে নিয়ে। তাঁদের ফিটনেস নিয়েও উঠে পড়েছে প্রশ্ন।
আইপিএল খেলে দল কি ক্লান্ত, আনফিটও?
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের শোচনীয় পরাজয়ের পর প্রশ্ন উঠেছে, আইপিএল ২০২১ কি ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খরচের খাতায় ফেলে দিল। আইপিএল খেলে দল কি ক্লান্ত ছিল? নাকি আইপিএলের আর্থিক উপার্জনে তারা তৃপ্ত? সেইসঙ্গে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের শোচনীয় হারের ফলে নির্বাচক কমিটির দিকে আঙুল উঠেছে। কেন ভারতের স্কোয়াডে ৩ জন আহত এবং আনফিট খেলোয়াড়কে বেছে নেওয়া হল।
কেন দলে আনফিট হার্দিক পান্ডিয়া? প্রশ্ন
প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ভারতীয় নির্বাচকরা কেন দলে আনফিট হার্দিক পান্ডিয়াকে বেছে নিলেন? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম দিন থেকেই মাত্রিক হার্দিক পান্ডিয়ার অন্তর্ভুক্তি স্কোয়াডের ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বিকল্প অল-রাউন্ডদের পছন্দের আগে পান্ডিয়াকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। হার্দিককে লাইন-আপে রাখার জন্য টিম ম্যানেজমেন্ট বিভিন্ন ধরনের আপোশ করেছে, যার ফলে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের কাছে পরাজিতও হতে হয়েছে।
ভারতের পজিশনে ক্ষতিগ্রস্থ হার্দিক-নির্বাচনে
কেন ভারতীয় নির্বাচকরা একজন ফিট অলরাউন্ডারকে চিহ্নিত করতে পারেনি। একজন আনফিট খেলোয়াড় বেছে নেওয়ার কারণে ভারতকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আগেই ছিটকে যেতে হতে পারে। ভারতের পজিশনে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে ওই একটি নির্বাচন। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভন বলেছেন, ভারত এতটাই খারাপভাবে হার্দিক পাণ্ডিয়াকে লাইন-আপে স্থান দিয়েছে যে তাদের আপোশ প্রকাশ হয়ে পড়েছে।
বিশ্বকাপের মঞ্চে এভাবে ছেলেখেলা!
যদি হার্দিক পুরোপুরি ফিট না হন তবে তার লাইন-আপে থাকা উচিত নয়। সুনীল গাভাসকারও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলার আগে মত প্রকাশ করেছিলেন। 'বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান এবং ভারতের ফিনিশার' পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ৮ বলে ১১ এবং ২৪ বলে ২৩ করেন। আর জোর করে দ্বিতীয় ম্যাচে এক ওভার হাত ঘোরান তিনি। বিশ্বকাপের মঞ্চে এভাবে ছেলেখেলার কোনও অর্থ হয় না।
'ট্রাম্প কার্ড' হিসেবে খারাপ চয়ন বরুণ
তারপর শুধু কি হার্দিক? বরুণ চক্রবর্তী কি ফিট ছিলেন? ভারতীয় নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টকেও জবাব দিতে হবে সেই প্রশ্নের। বরুণ চক্রবর্তীকে দুটি ম্যাচেই বিবর্ণ দেখিয়েছে। বোলিং লাইন আপের পাশাপাশি মাঠেও তাঁকে দায়বদ্ধ দেখাচ্ছিল। আইপিএলে দিল্লির বিরুদ্ধে চোট পাওয়ার পর বরুণ চক্রবর্তী পুরোপুরি ফিট ছিলেন না। তা সত্ত্বেও ভারত তাঁকে 'ট্রাম্প কার্ড' হিসেবে খারাপভাবে বেছে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং ব্যর্থ হয়েছিল।
অর্ধেক ফিট এবং পুরোপুরি ফ্লপ ভুবনেশ্বর
আরও প্রশ্ন রয়েছে দল নির্বাচন নিয়ে। কেন অর্ধেক ফিট এবং পুরোপুরি ফ্লপ ভুবনেশ্বর কুমার ভারতীয় লাইন আপে জায়গা করে দেওয়া হল? ভুবনেশ্বর কুমার তার বিরক্তিকর আইপিএল ২০২১-এর ফর্ম অব্যাহত রেখেছিলেন এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁকে প্লেয়িং ইলেভেন থেকে বাদ দেওয়া ছাড়া ভারতের আর কোন বিকল্প ছিল না। অন্যান্য পেসারদের মতো পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও ব্যর্থ হন।
ইন-ফর্ম যুজবেন্দ্র চাহাল দলের বাইরে
ভারতের নির্বাচক কমিটি বিশ্বকাপের দল নির্বাচনে উপেক্ষা করেছেন যুজবেন্দ্র চাহাল, শিখর ধাওয়ান ও দীপক চাহারকে। তিন আনফিট খেলোয়াড়দের জায়গায় যদি এই তিনজনকে সুযোগ দিত, অনেক তরতাজা হয়ে অভিযান শুরু করতে পারত। যুজবেন্দ্র চাহাল ইন-ফর্ম। আইপিএল মরশুমে ১৮ উইকেট নিয়েও তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েছিলেন। তিনি এখনও পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। তবু তাঁর পরিবর্তে রাহুল চাহারকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
শিখর ধাওয়ান ব্রাত্য বিরাট-স্কোয়াডে
ওপেনিং ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ান। আইপিএল ২০২১-এ সাফল্য পাওয়া সত্ত্বেও তাঁকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। আইপিএল ২০২১-এ ৫০০-র বেশি রানে মরশুমে শেষ করেছিলেন। অথচ ভারত ওপেনিং পার্টনারশিপ নিয়ে দুটি ম্যাচেই ভুগেছে। রোহিত শর্মা এবার আইপিএল ২০২১-এ নিজেকে প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবু তাঁকে তার ব্যাটিং পজিশন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। চাপের ম্যাচে ঈশান কিষানকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁর জয়াগায়। কেএল রাহুল আইপিএলে ৬০০-র বেশি রান করেছেন, তিনিই ক্র্যাকিং শুরু দিতে ব্যর্থ।
দীপক চাহার স্ট্যান্ডবাই তালিকায়
আর দীপক চাহার। যিনি শ্রীলঙ্কা সফরের দক্ষতার পরিচয়ে মুগ্ধ করেছিলেন ক্রিকেট বিশ্বকে। তিনি স্ট্যান্ডবাই তালিকায় রয়ে গিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে তাঁকে জায়গা দেওয়া হয়নি। তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল ভারতের স্কোয়াড থেকে। পাওয়ার প্লে-তে উইকেট নেওয়ার দক্ষতা তাঁর রয়েছে, যেখানে ভারত প্রথম দুটি ম্যাচে মাত্র দুটি উইকেট তুলতে সমর্থ হয়।