২২ গজে এ কোন মশকরা, রাত ২টোয় খেলতে হচ্ছে ক্রিকেট?
এলিমিনেটর ম্যাচ মানে সেটা কার্যত কোয়ার্টার ফাইনাল। এহেন ম্যাচের কেন কোনও রিজার্ভ দিন রাখা হল না সেই প্রশ্ন উঠছে। এবং সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন তা হল, ক্রিকেটারদের রাত ১টার সময় কেন মাঠে নামতে হবে?
সাহেবদের জমানায় বলা হতো ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। ব্যাট-প্যাড পরে কেতাবি আদব কায়দা নির্ধারিত ছিল সমাজের উচ্চবিত্তদের জন্য। যত দিন গিয়েছে, উচ্চবিত্তের আঁচল ছেড়ে ক্রিকেট জায়গা করে নিয়েছে আমজনতার মনে। আর এখন, বিশেষ করে উপমহাদেশে ক্রিকেট এক বহুল বিক্রিত পণ্য ছাড়া আর কিছু নয়।
বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে নামী ও দামী ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই চালু করেছে সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট লিগ আইপিএল। এবছর মহা সমারোহে তার দশবছর পূর্তি চলছে। টুর্নামেন্ট প্রায় শেষের মুখে। এবং বোর্ডের কেষ্টবিষ্টুদের তরফে এই টুর্নামেন্টকে ইতিমধ্যে 'গ্র্যান্ড সাকসেস' বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
এহেন বিত্তবান ও বলশালী ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড আইপিএল নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্কে জড়িয়েছে। ক্রিকেটের নামে মোচ্ছব, রাতের পার্টি, বেটিং কেলেঙ্কারি- কী হয়নি এই দশ বছরে? তবে তা সত্ত্বেও সমস্তকিছুকে পিছনে ফেলে আইপিএল মহাসফল। কারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু কের অধিকাংশ টিম ফ্র্যাঞ্চাইজি, সকলেই ধুন্ধুমার ক্রিকেট আমজনতাকে গিলিয়ে দিয়ে লাভের মুখ দেখেছেন।
ফলে আইপিএল কমিটি তথা বিসিসিআই নিজেদের কেউকেটা ভাবতে শুরু করেছে। আইপিএলের নামে ক্রিকেটারদের কিনে নিয়ে তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না। এমনই অভিযোগ উঠছে কোনও কোনও মহল থেকে। টাকা নিচ্ছে বলে সে গোলাম নয়, স্যোশাল মিডিয়া এই মতামতে ছেয়ে গিয়েছে।
কিন্তু কেন এমন প্রসঙ্গ উঠছে? কারণটা অবশ্যই আইপিএল এলিমিনেটরে কলকাতা বনাম হায়দরাবাদ ম্যাচ। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টসে জিতে হায়দরাবাদকে মাত্র ১২৮ রানে আটকে রাখে কলকাতা। তবে বৃষ্টি ম্য়াচ পণ্ড করতে বসেছিল।
এমনিতেই রাত ৮টা থেকে খেলা শুরু হয়। তার উপরে সেদিক মাঝে বৃষ্টির জন্য তিন ঘণ্টা ম্যাচ বন্ধ থাকায় কলকাতাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। শেষপর্যন্ত রানের টার্গেট কমে দাঁড়ায়। কেকেআরকে করতে হতো ৬ ওভারে ৪৮ রান।
তবে গোল বাঁধল অন্য জায়গায়। রাত দশটা থেকে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করে রাত ১টার সময় মাঠে নামে কলকাতা ও হায়দরাবাদ। যা নিয়েই উঠেছে সমালোচনার ঝড়। কিংবদন্তি সুনীল গাভাসকর পর্যন্ত আইপিএল কমিটির এহেন দায়িত্বজ্ঞানহীন সূচীর সমালোচনা করেছেন।
এলিমিনেটর ম্যাচ মানে সেটা কার্যত কোয়ার্টার ফাইনাল। এহেন ম্যাচের কেন কোনও রিজার্ভ দিন রাখা হল না সেই প্রশ্ন উঠছে। এবং সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন তা হল, ক্রিকেটারদের রাত ১টার সময় কেন মাঠে নামতে হবে? ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলা ক্রিকেটাররা কি গোলাম, নাকি হাতের পুতুল হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটে মাঠে খেলা দেখতে আসা অগণিত ক্রিকেট ভক্ত?
বুধবার রাতে স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে কোনও গাড়ি ছিল না। অত রাতে থাকার কোনও কথাও নয়। যাদের গাড়ি নেই, তাঁরা যদি ভোররাতে বাড়ি ফিরতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়তেন তাহলে তার দায় কে নিত? বিসিসিআই? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।
আর তাছাড়া কলকাতা বা হায়দরাবাদ দুটি দলই বৃহস্পতিবার ভোররাতে হোটেলে ফিরেছে। তারপরের দিন শুক্রবারই কোয়ালিফায়ারের ম্যাচ খেলতে হবে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে যা কার্যত সেমিফাইনাল। এবং এত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে টিম মিটিং, রণকৌশল তৈরির কোনও সুযোগই কলকাতা পাবে না। তাহলে এর দায় কে নেবে, আইপিএল কমিটি নাকি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড? নিলামে কেনা ক্রিকেটাররা গোলাম নয়, এই আওয়াজ যতক্ষণ না ক্রিকেটারদের মধ্যে থেকে উঠছে ততক্ষণ বদল সম্ভব নয়। অস্ট্রেলিয়ান নাথন কুল্টার-নাইল ঘটনার ঘুরিয়ে সমালোচনা করলেও ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্য থেকেই আওয়াজ উঠতে হবে।
যতই হোক এটা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট, এখানে ক্রিকেটারদের কোনও মত নেই, শুধু আদেশ পালন করাই কাজ। ফলে পরিস্থিতি আগামিদিনেও বিশেষ বদল হবে কিনা তা অনিশ্চিত। কেন? ওই যে, মোটা টাকা পকেটে ঢুকছে। ফলে সবাই স্পিকটি নট।
{promotion-urls}