আইপিএল, বিশ্বকাপ-সহ লাগাতার খেলা করোনা আবহে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে, কীভাবে জানেন?
করোনা আবহে সফলভাবেই আইপিএল হয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে। কিন্তু এবারের আইপিএল ভারতে আসতেই জৈব সুরক্ষা বলয় ভেদ করে সব ঘেঁটে ঘ করে দিল করোনা। আইপিএলের বাকিটা তো বটেই, টি ২০ বিশ্বকাপও সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ও ওমানে সরাতে বাধ্য হয়েছে বিসিসিআই। শুধু এই দুটি টুর্নামেন্ট বাদই দিলাম। ফুটবল, ফর্মুলা ওয়ান, টেনিস থেকে গল্ফ ও আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপের ইভেন্ট তুড়ি মেরে আয়োজন করে দিচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। বিশ্বের তাবড় দেশ যখন করোনা পরিস্থিতিতে খেলার আয়োজনে নাজেহাল তখন একের পর এক আন্তর্জাতিক মানের ইভেন্ট আয়োজনে এই দেশ প্রস্তাব পেলেই রাজি হয়ে যাচ্ছে। কোন জাদুবলে মরুদেশ সফলভাবে ইভেন্টগুলি আয়োজন করতে পারছে সেটাই অনেকের মনে প্রশ্ন।
স্পোর্টিং ডেস্টিনেশন
আইপিএল ও টি ২০ বিশ্বকাপের খেলাগুলি হবে দুবাই, আবু ধাবি ও শারজায়। সুপার টুয়েলভে যোগ্যতা অর্জনের কিছু ম্যাচ হবে ওমানে। শারজায় প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একদিনের আন্তর্জাতিক। তার বছর তিনেক আগে থেকেই অবশ্য শারজায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকারা খেলতে যেতেন। এখনও অবধি সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে হয়েছে ২০০-র বেশি একদিনের ম্যাচ। টেস্ট বা টি ২০ ম্যাচও হয়েছে। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের জন্য আইপিএলের প্রথম দিকের বেশ কিছু ম্যাচ হয় সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে। ২০২০ সালে পুরো আইপিএলই হয় তিনটি শহরে। ২০০৯ সালে লাহোর হামলার ঘটনার পর থেকে অনেক দেশই পাকিস্তানে যায় না। তাই পাকিস্তানের বহু হোম সিরিজ এই দেশে হয়েছে। আফগানিস্তানও খেলেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে। জুনে পাকিস্তান সুপার লিগের কিছু ম্যাচ আয়োজনের পর এবার আইপিএলের দ্বিতীয়ার্ধের পর সেখানে প্রথমবার বসবে টি ২০ বিশ্বকাপের আসর।
করোনা আবহে
একনজরে দেখা যাক করোনা পরিস্থিতিতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে কী কী খেলার আসর বসেছে। আবু ধাবিতে হয়েছে আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইট আইল্যান্ড ইভেন্ট। ইউএফসি-র প্রেসিডেন্ট ডানা হোয়াইট আবু ধাবির পরিকাঠামো ও করোনা সুরক্ষাবিধি দেখে মুগ্ধ হয়ে একে বিশ্বের ফাইট ক্যাপিটাল বলে ঘোষণা করেছেন। আইপিএল, পিএসএল, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোয়ালিফাইং রাউন্ড, দুবাই টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ, ডব্লুটিএ আবু ধাবি ওপেন, আবু ধাবি ফর্মুলা ওয়ান গ্রাঁ প্রি, দুবাই ডেসার্ট ক্ল্যাসিক, আবু ধাবি গল্ফ চ্যাম্পিয়নশিপ, দুবাই গল্ফ চ্যাম্পিয়নশিপ, ডিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুর চ্যাম্পিয়নশিপ, ইউএই ট্যুর, ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের খেলা নির্বিঘ্নেই মরুদেশে সম্পন্ন হয়েছে করোনা আবহে।
|
আগামী ইভেন্টগুলি
আইপিএলের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা এবং টি ২০ বিশ্বকাপ ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে অনুষ্ঠেয় ইভেন্টগুলির মধ্যে রয়েছে আবু ধাবি ফর্মুলা ওয়ান গ্রাঁ প্রি, ডিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুর চ্যাম্পিয়নশিপ এবং অক্টোবরের ইউএফসি ফাইটিং আইল্যান্ডের ইভেন্ট। বিভিন্ন দেশের বহু মানুষ সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে থাকেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খুশি সকলে। খলিজ টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাতকারে এমিরেটস ক্রিকেট বোর্ডের সহ সভাপতি খালিদ আল জারুনি বলছেন, টি ২০ বিশ্বকাপ সফলভাবে আয়োজনের জন্য প্রস্তুত আমরা। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার যেসব পদক্ষপ গ্রহণ করেছে এবং তা ঠিকভাবে মানা হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে কড়া মনিটরিং চলছে। তাতেই এমন আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনের কাজ সহজ হয়ে যাচ্ছে। টাইগার উডস থেকে লুইস হ্যামিলটন, রজার ফেডেরার, রাফায়েল নাদাল, নোভাক জকোভিচ, সেরেনা ও ভেনাস উইলিয়ামস খেলে গিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে। সেই টি ২০ বিশ্বকাপ আয়োজন করে এবার ক্রীড়া মানচিত্রে আরও উপরের সারিতে উঠে আসতে চলেছে মরুদেশ।
ভ্যাকসিনেশন ও পরিকাঠামোয় জোর দিয়েই বাজিমাত
ভারত-সহ অনেক দেশই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনের সাহস যেখানে পাচ্ছে না করোনা পরিস্থিতিতে সেখানে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী কীভাবে পারছে সেটাই শিক্ষণীয়। খলিজ টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে প্রথম থেকেই গুরুত্ব দেওয়া হয় ভ্যাকসিন প্রদানের হারের বিষয়টিতে। ১ কোটি ৭০ লক্ষের বেশি ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়া হয়েছে, যাতে ৭২ শতাংশ মানুষ দুটি ডোজই পেয়ে গিয়েছেন। ভ্যাকসিন প্রদানের হার কমতে না দিয়ে খেলাধুলোর পরিকাঠামোর ক্ষেত্রেও বিপুল বিনিয়োগ করেছে সে দেশের সরকার। দুবাইয়ে প্রতি বছর ক্রীড়াক্ষেত্রে ১.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়। এর ফলে দুবাইয়ে ক্রীড়া বিষয়ক ক্ষেত্রে ইকনমিক ইমপ্যাক্ট বা অর্থনৈতিক প্রভাবের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৬৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর প্রো লিগের ম্যাচে স্টেডিয়ামে ৬০ শতাংশ আসনে বসে খেলা দেখতে পারছেন ভ্যাকসিন নেওয়া ক্রীড়াপ্রেমীরা। এতে মনে করা হচ্ছে আইপিএল বা টি ২০ বিশ্বকাপেও মাঠে দর্শক প্রবেশের অনুমতি মিলবে।