মেলবোর্নে বিরাট কিং কোহলি, টি ২০ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের নাটকীয় জয়
টি ২০ বিশ্বকাপে মেলবোর্নে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের রুদ্ধশ্বাস পরিসমাপ্তি। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬, শেষ বলে ২ রান। মহম্মদ নওয়াজ শেষ বলটি ওয়াইড করে বসেন। এরপর রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ব্যাট থেকে আসে উইনিং রান। বিরাট কোহলি ৫৩ বলে ৮২ রানে অপরাজিত থাকেন। ভারত ম্যাচ জিতল ৪ উইকেটে। অঘটন না ঘটলে এই জয় ভারতকে কার্যত পৌঁছে দিল সেমিফাইনালে।
শুরুতে চাপে ভারত
জয়ের জন্য ১৬০ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ভারত পাওয়ারপ্লে-র ৬ ওভারের মধ্যেই তিন উইকেট হারায়। দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে লোকেশ রাহুল ৮ বলে ৪ রান করে নাসিম শাহ-র বলে বোল্ড হয়ে যান। সাত রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় উইকেট পড়ে ১০ রানের মাথায়। চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে অধিনায়ক রোহিত শর্মা স্লিপে ইফতিখার আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়ে হ্যারিস রউফের শিকার হন। ৫.৩ ওভারে ২৬ রানের মাথায় পড়ে তৃতীয় উইকেট। ১০ বলে ১৫ রান করে সূর্যকুমার যাদব হ্যারিস রউফের দ্বিতীয় শিকার। ৬ ওভারে স্কোর ছিল ২ উইকেটে ৩১। ৬ ওভারে পাকিস্তান তুলেছিল ২ উইকেটে ৩২। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে বিরাটের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন অক্ষর প্যাটেল (৩ বলে ২)।
|
বিরাট-হার্দিক গড়লেন জয়ের ভিত
দলের এই ব্যাটিং বিপর্যয় সামাল দেয় বিরাট কোহলি ও হার্দিক পাণ্ডিয়ার জুটি। পঞ্চম উইকেটে তাঁরা ৫০ রান যোগ করে ফেলেন মাত্র ৩৯ বলে। ১০.৩ ওভারে ভারতের ৫০ রান পূর্ণ হয়েছিল। ১৫ ওভারের শেষ বলে ১০০ রান পূর্ণ হয়। ৭ থেকে ১৫ ওভারের মধ্যে পাকিস্তান ৩ উইকেট হারিয়ে ৭৪ রান তুলেছিল। ভারত মাঝের ওভারে মাত্র একটি উইকেট হারিয়ে তোলে ৬৯ রান। ১৫ ওভারের শেষে পাকিস্তানের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১০৬, ভারতের ৪ উইকেটে ১০০। ১১ ওভারের শেষে ভারতের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ৫৪। ১২তম ওভারে মহম্মদ নওয়াজ ২০ রান খরচ করেন, হার্দিক দুটি ও বিরাট একটি ছক্কা হাঁকান। ১৩তম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদি দেন ৯ রান, তাঁর প্রথম ২ ওভারে মাত্র ৮ রান খরচ করেছিলেন তিনি।
|
রউফের বলে জোড়া ছক্কা টার্নিং পয়েন্ট
১৬তম ওভারে বল করতে এসে ৬ রান দেন হ্যারিস রউফ। ফলে শেষ চার ওভারে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫৪ রান। ১৭তম ওভারে নাসিম শাহ ছয় রানই দেন। ১৮ বলে প্রয়োজন গিয়ে দাঁড়ায় ৪৮ রান। ১৮তম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকানোর পাশাপাশি অর্ধশতরান পূর্ণ করেন বিরাট কোহলি। এই ওভারে ওঠে ১৬। ফলে শেষ ২ ওভারে দরকার হয়ে পড়ে ৩২ রান। ১৯তম ওভারের শেষ দুই বলে হ্যারিস রউফের বলে জোড়া ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতের জয়ের আশা জাগিয়ে রাখেন বিরাট কোহলি। এর ফলে ভারতের শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬, শেষ ওভারটি করতে আসেন মহম্মদ নওয়াজ। ২০তম ওভারের প্রথম বলে হার্দিক পাণ্ডিয়ার উইকেট তুলে নেন তিনি। পাণ্ডিয়া একটি চার ও দুটি ছয়ের সাহায্যে ৩৭ বলে ৪০ রান করেন। হার্দিক ও বিরাটের জুটিতে ওঠে ৭৮ বলে ১১৩ রান।
|
নাটকীয় শেষ ওভার
শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬। ২০তম ওভারের প্রথম বলে হার্দিক পাণ্ডিয়াকে আউট করেন মহম্মদ নওয়াজ। পরের বলে দীনেশ কার্তিক এক রান নেন। তৃতীয় বলে বিরাট নেন ২ রান। ফলে শেষ ৩ বলে দরকার হয়ে পড়ে ১৩ রান। চতুর্থ বলে কোহলি ছক্কা হাঁকান, উচ্চতার জন্য সেটি নো বল হয়। যদিও সেই সিদ্ধান্তে খুশি হননি পাক অধিনায়ক বাবর আজম। সমীকরণ দাঁড়ায় ৩ বলে ৬ রান দরকার। পরের বল ওয়াইড। ফ্রি হিট হওয়ায় তার পরের ডেলিভারিতে ভারত ৩ বাই রান আদায় করে নেয়। পঞ্চম বলে স্টাম্প আউট হন দীনেশ কার্তিক। শেষ বলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ব্যাট থেকে আসে উইনিং শট। হ্যারিস রউফ ৪ ওভারে ৩৬ রানে এবং মহম্মদ নওয়াজ ৪ ওভারে ৪২ রানে দুটি করে উইকেট নেন। নাসিম শাহ নেন ১টি উইকেট। শাহিন শাহ আফ্রিদি ৪ ওভারে ৩৪ রান দেন, কোনও উইকেট পাননি। ৬টি চার ও চারটি ছয়ের সাহায্যে ৫৩ বলে ৮২ রান করে ম্যাচের সেরা বিরাট কোহলি।
হার্দিক ব্যাটে-বলে অবদান রাখলেন
এর আগে, টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান তুলেছিল। শান মাসুদ ৪২ বলে ৫২ রানে অপরাজিত ছিলেন। ৩৪ বলে ৫১ রান করেন ইফতিখার আহমেদ। শাহিন শাহ আফ্রিদি ৮ বলে ১৬ রান করেন। হার্দিক পাণ্ডিয়া ৪ ওভারে ৩০ রানের বিনিময়ে এবং অর্শদীপ সিং ৪ ওভারে ৩২ রানের বিনিময়ে তিনটি করে উইকেট দখল করেন। ভুবনেশ্বর কুমার ও মহম্মদ শামি একটি করে উইকেট পেয়েছেন।
টি ২০ বিশ্বকাপে ভিলেন স্পাইডার ক্যাম! নওয়াজের ক্যাচ হাতছাড়া হতেই অসন্তোষ ভারতীয় ক্রিকেটারদের