টি ২০ বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ে কাদের দিকে আঙুল তুললেন রোহিত? বিরাট ভুল নিয়ে চলছে চর্চা
জস বাটলার ও অ্যালেক্স হেলসের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে চার ওভার বাকি থাকতে ১০ উইকেটে জয় ছিনিয়ে টি ২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে ইংল্যান্ড। নিয়ম মেনে করমর্দন সেরে ডাগআউটে ফিরে মাথা নীচু করে দীর্ঘক্ষণ বসে রইলেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। চোখের দৃষ্টিতে একরাশ শূন্যতা। বিশ্বের ১ নম্বর দল হয়েও এভাবে পরাজয় মেনে নেওয়া যায় না কারও পক্ষেই। গত টি ২০ বিশ্বকাপে বিরাট কোহলির ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়েছিল পাকিস্তান। এবার সেমিফাইনালে রোহিতের ভারত পরাস্ত সেই ১০ উইকেটেই।
ক্যাপ্টেন রোহিতেরও অধরা টি ২০ বিশ্বকাপ
বিরাট কোহলি অধিনায়ক হিসেবে টি ২০ বিশ্বকাপ খেতাব জিততে পারেননি। ২০০৭ সালের টি ২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য রোহিত শর্মাও ক্যাপ্টেন হিসেবে দেশকে টি ২০ বিশ্বকাপ জেতাতে পারলেন না। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে ভারতকে রোহিত নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু ২০২৪ সালের টি ২০ বিশ্বকাপে ভারত যে অন্য কোনও অধিনায়কের নেতৃত্বেই নামবে সেটা বুঝতে খুব একটা কষ্ট করার প্রয়োজন নেই। রোহিত আইপিএলের সফলতম অধিনায়ক। কিন্তু বিরাটের মতো তিনিও ধোনির কীর্তিতে থাবা বসাতে পারলেন না। ২০১৪ সালের টি ২০ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের পর থেকে কোনও বিশ্বকাপেই নক আউট পর্বে ম্যাচ জেতেনি ভারত। সেই ধারা অব্যাহত রইল অ্যাডিলেডেও। এই প্রথম এই স্টেডিয়ামে ভারত কোনও টি ২০ আন্তর্জাতিকে পরাস্ত হলো।
হতাশ রোহিত
স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ে হতাশ রোহিত। জঘন্য পরাজয়ের জন্য বোলিং বিভাগকে দায়ীও করলেন। তিনি বলেন, যেভাবে খেলাটা হলো তা হতাশাজনক। আমি মনে করি শেষের দিকে ভালো ব্যাট করে আমরা যে স্কোর খাড়া করেছিলাম তা ১৬ ওভারে প্রতিপক্ষ পার করে ফেলবে এটা প্রত্যাশিত নয়। উইকেট অন্তত তেমন ছিল না। বোলিং আমাদের ভালো হয়নি। নকআউট পর্বে চাপ সামলানোটাই মূল বিষয়। এটা ক্রিকেটারদের উপর নির্ভর করে। চাপ কীভাবে সামলাতে হবে তা কাউকে ধরে ধরে শেখানো সম্ভব নয়।
বোলারদের ভূমিকায় অখুশি
রোহিতের কথায়, এই ক্রিকেটাররাই আইপিএলে প্লে অফ খেলেন। সেখানেও চাপ থাকে। তাঁরা তা সামলানোর দক্ষতাও দেখান। তবে আজ যেভাবে বল করার প্রয়োজন ছিল তা হয়নি। বোলাররা স্নায়ুর চাপে ভুগেছেন। তবে কৃতিত্ব দিতে হবে ইংল্যান্ডের ওপেনারদের। তাঁরা ভালো খেলেছেন। প্রথম ওভারে ভুবনেশ্বর কুমার যখন বোলিং করছিলেন তখন বল স্য়ুইং করছিল। কিন্তু সঠিক জায়গায় বল রাখা যায়নি। ব্যাটাররা শট খেলার জায়গা পান সেটা চাইনি। উইকেটের দুই পাশের ছোট বাউন্ডারি সম্পর্কে সকলেই ওয়াকিবহাল ছিলেন। সেখান দিয়ে রান আটকানো যায়নি। আমরা যদি উইকেটে বল রাখতাম এবং তাতেও ব্যাটাররা রান পেতেন তাহলে কিছু বলার ছিল না। কিন্তু সেটা আমরা করতে পারিনি। বাংলাদেশ ম্যাচে আমরা স্নায়ু ধরে রাখতে পেরেছিলাম, পরিকল্পনার বাস্তবায়নে সেদিন সমস্যা হয়নি।
কোথায় ভুল?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত এদিন যুজবেন্দ্র চাহালকে না খেলিয়ে ভুল করেছে। এই উইকেটে আদিল রশিদ, লিয়াম লিভিংস্টোনরা ভালো বোলিং করেছেন। সেখানে কার্যকরী হতে পারতেন চাহাল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর ট্র্যাক রেকর্ডও বেশ ভালো। কিন্তু ভারত চাহালকে না খেলিয়ে অশ্বিন ও অক্ষরকে খেলায়। দুজনের কেউই টি ২০-তে চাহালের মতো উইকেটটেকার বা ব্রেক থ্রু দিতে পারদর্শী নন। অশ্বিন ২ ওভারে দেন ২৭, অক্ষর ৪ ওভারে ৩০। রোহিতের চেয়ে বোলার পরিবর্তনে অনেক বেশি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার। ভারত পন্থকে দিয়ে রশিদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু রশিদকে বাটলার এমনভাবে ব্যবহার করলেন তাতে ভারতের পরিকল্পনা কাজে লাগেনি। ভারতের ফিল্ডিংও এদিন প্রত্যাশিত মানে পৌঁছায়নি। সবমিলিয়ে বিরাট-হার্দিক যেটুকু আশা জিইয়ে রেখেছিলেন তা জঘন্য পারফরম্যান্সে মেন ইন ব্লুকে ছিটকে দিল টি ২০ বিশ্বকাপ থেকে।
টি ২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ড-পাকিস্তান দ্বৈরথ, ১৯৯২ বিশ্বকাপের প্রতিশোধ চাইবেন বাটলাররা