বিরাট কি বিশ্বকাপ ফেললেন? মার্করাম-মিলারের ব্যাটে পরাস্ত ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা আর 'চোকার্স' নয়
বিরাট কোহলি মিস করলেন এইডেন মার্করামের লোপ্পা ক্যাচ। রোহিত শর্মা, সূর্যকুমার যাদব হাতছাড়া করলেন সহজ রান আউটের সুযোগ। ভারতের জঘন্য ফিল্ডিংয়ের ফায়দা তুলে টি ২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের দিকে পা বাড়াল দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারত গ্রুপ ২-এর পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থান থেকে নেমে গেল দুই নম্বরে। পারথে প্রোটিয়াদের জয় এলো ৫ উইকেটে। ২০০৯ সালের টি ২০ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম টি ২০ বিশ্বকাপে ভারতকে হারাল দক্ষিণ আফ্রিকা।
শুরুতে ধাক্কা অর্শদীপের
জয়ের জন্য তেম্বা বাভুমার দলের প্রয়োজন ছিল ১৩৪ রান। নিজের প্রথম তথা প্রোটিয়াদের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে জোড়া ধাক্কা দিয়েছিলেন অর্শদীপ সিং। ১.১ ওভারে ৩ রানের মাথায় কুইন্টন ডি কককে ফেরান অর্শদীপ, স্লিপে ক্যাচ ধরেন লোকেশ রাহুল। ডি কক ৩ বলে ১ রান করেন। এই ওভারের তৃতীয় বলে লেগ বিফোর হন রাইলি রুসো। প্রথমে আম্পায়ার আউট দেননি। দীনেশ কার্তিকের সঙ্গে পরামর্শ করে রিভিউ নেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। রিপ্লেতে দেখা যায় বল রুসোর ব্যাটে লাগেনি। শূন্য রানে রুসো ফিরলে প্রোটিয়াদের স্কোর দাঁড়ায় ১.৩ ওভারে ২ উইকেটে ৩। ৫.৪ ওভারে তেম্বা বাভুমাকে ফেরান মহম্মদ শামি। প্রোটিয়া অধিনায়ক ১৫ বলে ১০ রান করে কট বিহাইন্ড হন। ২৪ রানে তৃতীয় উইকেটটি পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার।
অনবদ্য মার্করাম
এরপর দলের হাল ধরেন এইডেন মার্করাম ও ডেভিড মিলার। ১০ ওভারে স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ৪০। একাদশ ওভারের প্রথম বল থেকেই গিয়ার বদল করেন মার্করাম ও মিলার। মার্করাম ৩৮ বলে ৫০ রান পূর্ণ করেন। ১৫.৪ ওভারে দলের ১০০ রানের মাথায় আউট হন মার্করাম। ৬টি চার ও একটি ছয়ের সাহায্যে তিনি করেন ৪১ বলে ৫২ রান। এরপর ট্রিস্টান স্টাবসকে নিয়ে হিসেব কষে খেলতে থাকেন মিলার। ১৮তম ওভারে অশ্বিনের প্রথম দুই বলে দুটি ছয় মারেন তিনি। এই ওভারের চতুর্থ বলে অশ্বিনের শিকার হন ট্রিস্টান স্টাবস। আম্পায়ার লেগ বিফোর দিলে রিভিউ নেন স্টাবস, রিপ্লে দেখে তৃতীয় আম্পায়ার জানান এটি আম্পায়ার্স কল। ফলে স্টাবস ৬ বলে ৬ রান করে আউট হন। তখন দক্ষিণ আফ্রিকার জিততে চাই ১৪ বলে ১২ রান।
কিলার মিলার
শেষ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার জিততে প্রয়োজন ছিল ৬ রান। প্রথম বলে ওয়েন পার্নেল কোনও রান নিতে পারেননি। দ্বিতীয় বলে এক রান নেন। এরপর তৃতীয় ও চতুর্থ বলে দুটি চার মেরে ডেভিড মিলার দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন। হার্দিক পাণ্ডিয়ার গুজরাত টাইটান্সের হয়ে সফল কিলার মিলার চারটি চার ও তিনটি ছয়ের সাহায্যে ৪৬ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকলেন। পার্নেল ৫ বলে ২ রানে অপরাজিত থাকেন। এদিন ভারতের সফলতম বোলার অর্শদীপ সিং। তিনি ৪ ওভারে ২৫ রান খরচ করে ২টি উইকেট নেন। মহম্মদ শামি ৪ ওভারে ১৩, হার্দিক পাণ্ডিয়া ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়ে একটি করে উইকেট নেন। ৩.৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে কোনও উইকেট পাননি ভুবনেশ্বর কুমার।
ভারতের ব্যাটিং ব্যর্থতা
এর আগে, টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ভারত তুলেছিল ৯ উইকেটে ১৩৩ রান। ৬টি চার ও তিনটি ছক্কার সাহায্যে ৪০ বলে সর্বাধিক ৬৮ রান করেন সূর্যকুমার যাদব। চলতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে টি ২০ আন্তর্জাতিকে বিশ্বের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ৯০০ রানের মাইলস্টোন স্পর্শ করলেন স্কাই। রোহিত শর্মা ১৫ ও বিরাট কোহলি ১২ রান করেন। বিরাট বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে টি ২০ বিশ্বকাপে এক হাজার রানের মাইলস্টোন স্পর্শ করেন। বাকি কেউই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। তাবরেজ শামসির পরিবর্ত হিসেবে সুযোগ পাওয়া লুঙ্গি এনগিডি ৪ ওভারে ২৯ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট দখল করেন। তিনিই ম্যাচের সেরা। একটি মেডেন-সহ চার ওভারে ১৫ রান দিয়ে তিন উইকেট পেলেন ওয়েন পার্নেল।
|
চিন্তার বিষয়
রবিচন্দ্রন অশ্বিন একটি উইকেট পেলেও ৪ ওভারে দেন ৪৩ রান। পরের ম্যাচগুলিতে যুজবেন্দ্র চাহালকে খেলানো হবে কিনা সেটাই প্রশ্ন। তবে অশ্বিনের বলে বিরাট কোহলি এইডেন মার্করামের সহজ ক্যাচ না ফেললে ম্যাচের রং অন্যরকম হতেই পারতো। দীপক হুডাকে এদিন নামানো হয়েছিল অক্ষর প্যাটেলের জায়গায়। তবে তাঁকে দিয়ে বোলিং করাননি রোহিত। দীনেশ কার্তিক এদিন চোট পেয়ে ১৫ ওভারের শেষে মাঠ ছাড়লেন। ফলে তিনিও ভারতের হয়ে পরের ম্যাচ খেলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রইল। চিন্তা বাড়াচ্ছে লোকেশ রাহুলের ফর্মও।