সৌরভ ললিপপ প্রত্যাখ্যান করেই সরে যাচ্ছেন! জয় শাহ বিসিসিআই সচিব থাকছেন দেখে বিজেপিকে নিশানা তৃণমূলের
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে কি আরও একবার নোংরা রাজনীতি ও বঞ্চনার শিকার হতে হলো? সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের ক্রিকেট মহলে। দিল্লি ও মুম্বইয়ে হাই ভোল্টেজ বৈঠক সেরেও বিসিসিআই সভাপতি হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে পারছেন না দেশের অন্যতম সফল অধিনায়ক। সভাপতি হতে চলেছেন রজার বিনি। সচিব থাকছেন জয় শাহ। জয় যেখানে থাকছেন সেখানে সৌরভ কেন নয়? এই প্রশ্ন উঠছে স্বাভাবিকভাবেই।
সরছেন সৌরভ
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যখন বিসিসিআই সভাপতি হয়েছিলেন তখনও শেষ মুহূর্তে বদলেছিল সমীকরণ। ব্রিজেশ প্যাটেল বোর্ড সভাপতি হচ্ছেন বলে যখন সকলে ধরেই নিয়েছিলেন, তখন দিল্লিতে অমিত শাহ-র সঙ্গে বৈঠক করেন সৌরভ। এরপরই যাবতীয় হিসেবনিকেশ উল্টে দিয়ে সৌরভ হন সভাপতি, সচিব হন জয়। সৌরভ ও জয়ের মধ্যে সম্পর্ক যে মধুর ছিল তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না। বোর্ডের কাজকর্মের সঙ্গে ওয়াকিবহাল অনেকের মতে, জয় নিজে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেন। এমনকী প্রভাবশালী পিতার পুত্র হওয়ায় তাঁর নেওয়া অনেক সিদ্ধান্তে সহমত না হলেও মানতে হয়েছে সৌরভকে। তবে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ, এটা কোনও শিবিরই প্রকাশ্যে জানায়নি। তবে একটা শীতল লড়াই যে চলছিল সেটা সকলেই জানেন।
ললিপপ-সম প্রস্তাব ফেরান
বিসিসিআই সূত্রকে উল্লেখ করে সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, সুপ্রিম কোর্ট আরও একটি টার্ম বোর্ড সভাপতি পদে সৌরভ ও সচিব পদে জয়কে রাখার পক্ষে রায় দেওয়ার পর সৌরভ সভাপতি পদে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বোর্ডের তরফে সৌরভকে বার্তা দেওয়া হয়, আগে কেউই দুই টার্ম পরপর সভাপতি থাকেননি। এ ক্ষেত্রে শশাঙ্ক মনোহর দ্বিতীয়বার সভাপতি পদে বসার এক বছরের মধ্যেই সরে যান, তিনি আইসিসির শীর্ষপদে বসায়। জানা যাচ্ছে, সৌরভকে আইপিএল চেয়ারম্যান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু বোর্ডের সভাপতি পদ থেকে সরে গিয়ে বিসিসিআইয়ের একটি কমিটির শীর্ষপদে বসার সেই ললিপপ সৌরভ সবিনয়ে নাকচ করে দেন। তাতেই প্রশস্ত হয়ে যায় বিসিসিআইয়ের প্রশাসন থেকে সৌরভের বিদায়ের পথ।
জয়ের হাতের পুতুল বিনি?
পরিস্থিতি যাই হোক না কেন বর্তমান বোর্ড সভাপতির ঘনিষ্ঠরা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানাচ্ছেন কামব্যাকের নিরিখে সৌরভের শ্রেষ্ঠত্বের কথা। তবে সেটা ঠিক কী তা এখনও গোপন রাখা হচ্ছে। সৌরভের জায়গায় বোর্ড সভাপতি হচ্ছেন কর্নাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা তিরাশির বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ও প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক রজার বিনি। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, জয় শাহ সচিব থেকে সভাপতি হলে বিজেপির বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্রের কথা তুলে নিশানা করতে পারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিনিকে সভাপতি করলে বকলমে জয় শাহই সর্বেসর্বা হবেন। তাছাড়া আইপিএল চেয়ারম্যান হতে চলেছেন অরুণ সিং ধুমল, তিনি আবার কেন্দ্রীয় যুবকল্যাণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের ভাই।
মহারাজে বিরূপ বিজেপি!
বোর্ডের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, সৌরভকে যাঁরা বিসিসিআই সভাপতি পদে চেয়েছিলেন তাঁদের অনেকেই পাল্টি খেয়েছেন। তাঁরা বিসিসিআইয়ের সদস্যদের তো বটেই, বিজেপি নেতৃত্বকেও বুঝিয়েছেন সৌরভের জমানায় বোর্ডে ভালো কিছুই হয়নি। তুলে ধরা হয়েছে নেতিবাচক নানা দিক। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করতে চেয়েছিল বিজেপি। সৌরভ তা নাকচ করেন। মনে করা হচ্ছে, এটাকেই ভালোভাবে নেয়নি বিজেপি। যতই বেহালার বাড়িতে সদলবলে অমিত শাহ নৈশভোজে যান না কেন। বিজেপি মহারাজের প্রতি বিরূপ এটা বোঝা যায় সম্প্রতি গৌতম গম্ভীর সরাসরি বোর্ড সভাপতিকে নিশানা করায়। সৌরভ বিসিসিআইয়ের সভাপতি পদে থেকে বিজ্ঞাপনের মুখ হিসেবে ক্রিকেট জুয়ার প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করছেন বলেও তোপ দাগেন গম্ভীর। সৌরভকে বোর্ড প্রশাসন থেকে সরাতে তাই বড় হয়ে দাঁড়ায় স্বার্থের সংঘাতের ফ্যাক্টরটি।
আইসিসির পদ নিশ্চিত নয়?
প্রশ্ন হলো, তাহলে কি আগামী ছয় বছরের জন্য কুলিং অফে কাটাতে হবে সৌরভকে? নাকি তাঁর নামই আইসিসির পরবর্তী চেয়ারম্যানের জন্য পাঠাবে বিসিসিআই? বিষয়টি নিশ্চিতভাবে কেউই বলতে পারছেন না। ১৮ তারিখ বোর্ডের এজিএমে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে। আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ২০ অক্টোবর। বর্তমান আইসিসি চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলে স্বপদে বহাল থাকার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। তবে বিশ্ব ক্রিকেটে বিসিসিআইয়ের যা দাপট তাতে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের প্রার্থীই জয়লাভ করবেন। বোর্ডে এমন জল্পনাও রয়েছে, আইসিসিতে প্রতিনিধি হিসেবে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জয় শাহের নামই পাঠানো হতে পারে। তবে সবটাই জল্পনা।
|
রাজনৈতিক চাপানউতোর
এই আবহে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। জয় শাহ থাকছেন, অথচ সৌরভকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এর পিছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলেই দাবি তৃণমূল কংগ্রেসের। সাংসদ তথা দলের মুখপাত্র শান্তনু সেন টুইটে লিখেছেন, জয় শাহর স্বপদে বহাল থাকা পরিবারতন্ত্রের উদাহরণ। সৌরভ বিজেপির প্রস্তাব মানেননি বলেই তাঁকে সরে যেতে হচ্ছে। যদিও বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ তা মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, বিসিসিআইয়ে কে আসবেন কে যাবেন তাতে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। রজার বিনি বিজেপি করেন, এমনটা কেউ বলতে পারবেন কি? সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের প্রশংসা করলেও দিলীপ ঘোষ এ কথাও বলেছেন, বোর্ডের শীর্ষপদে সৌরভই যে সব সময় থাকবেন সেই নিশ্চয়তাও তো আগে কেউ দেননি! এখন যাঁরা সমালোচনা করছেন তাঁরা কি সৌরভকে বিসিসিআইয়ের শীর্ষপদে বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যদি কেউ বসিয়ে থাকে তাহলে তাকে ধন্যবাদ এঁরা জানান না। এআইএফএফে দীর্ঘদিন নির্বাচন হয়নি। বাংলায় যাঁরা তাস, লুডু খেলতেন তাঁরাই অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ও অন্য ক্রীড়া সংস্থার শীর্ষপদে বসে! বাংলায় খালি খেলা হবে স্লোগান দেওয়া হয়, এখানকার খেলার অন্তর্জলি যাত্রা তৃণমূল শুরু করে দিয়েছে বলে দাবি দিলীপের। তিনি আরও বলেন, সৌরভ বাংলা তথা ভারতের ক্রিকেটে অনেক অবদান রেখেছেন। তবে তাঁকে বিজেপিতে যোগদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কিনা তা আমি সভাপতি থাকাকালীন জানতে পারিনি!
শিখর ধাওয়ানের নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকাকে একদিনের সিরিজে হারাল ভারত, দিল্লিতে জয় ৭ উইকেটে