বিনিকে যোগ্যতম বলে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়ালেন ক্রিকেটার-নেতা! রজার-স্টুয়ার্ট নিয়ে সৌরভের মন্তব্য ভাইরাল
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিসিসিআই থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। বোর্ডের প্রশাসন গেরুয়া হয়ে গিয়েছে বলে তোপ দেগে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, বিজেপিতে যোগ দেননি বলে বা তাদের প্রস্তাব মানেননি বলে সৌরভকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়েছে। যদিও রজার বিনিকে বোর্ড প্রশাসনে স্বাগত জানিয়ে এ রাজ্যের শাসক দলের অস্বস্তি বাড়ালেন 'দলবদলু' ক্রিকেটার-নেতা।
কীর্তির কথা
বিজেপি, কংগ্রেস ঘুরে কীর্তি আজাদ এখন তৃণমূল কংগ্রেসে। তিনি এক সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, আমি রজারের জন্য খুব খুশি। আমরা তিরাশির বিশ্বকাপজয়ী দলের সতীর্থ। রজার স্বভাবগতভাবে শান্ত, নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, বিসিসিআই সভাপতি হিসেবে তিনি যোগ্য ব্যক্তি। রজার এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলেও ছিলেন। ভারতীয় দলের নির্বাচক হিসেবেও নানা দায়িত্ব পালন করেছেন। আমার এক সতীর্থ বোর্ড সভাপতি হচ্ছেন জানতে পেরে আমি খুবই খুশি। কথা কম বলেন, কিন্তু চিন্তাভাবনা যথেষ্ট সিরিয়াস। ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের উন্নতির স্বার্থকে তিনি যেভাবে গুরুত্ব দেন সে কারণেই তাঁকে বোর্ডের শীর্ষপদে আসীন করা হলো বলে ধারণা কীর্তির। তিনি বলেন, রজার ও সৌরভ দুজনের মস্তিষ্কই অত্যন্ত ক্ষুরধার। তবে বোর্ডের লোকজনদের কাছ থেকে জেনেছি, সৌরভ নিজের মতামত স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যা বোর্ডের অনেকে পছন্দ করেন না।
শাস্ত্রী কি খোঁচা দিলেন সৌরভকে?
ভারতের প্রাক্তন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী মুম্বই প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে বিনিকে বোর্ড সভাপতি হিসেবে স্বাগত জানাতে গিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তাতে সৌরভকে খোঁচাও দিয়েছেন বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। শাস্ত্রী বলেন, বিশ্বকাপজয়ী দলের আমার এক সতীর্থ বিসিসিআই সভাপতি হচ্ছেন, এতে আমি খুব খুশি। কর্নাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর তিনি বোর্ডের সভাপতি হচ্ছেন। আমি আরও খুশি, এই প্রথম বিসিসিআই সভাপতি হচ্ছেন বিশ্বকাপজয়ী দলের কোন সদস্য। তাঁর দক্ষতা প্রশ্নাতীত। রজার বিনির ক্রিকেটীয় বোধের প্রশংসার ফাঁকে শাস্ত্রী আরও বলেন, আমি চাইব বিসিসিআই স্টেডিয়ামগুলির পরিকাঠামো উন্নত করুক। দর্শক স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়ে জোর দিলে, তাঁদের জন্য সমস্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদানের বন্দোবস্ত করলে ভারতে ক্রিকেট আরও জনপ্রিয় হবে বলে আশাবাদী শাস্ত্রী। সৌরভ দেশকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেননি। বিনিকে বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য বলে অভিহিত করে সৌরভকেই শাস্ত্রী খোঁচা দিলেন বলে ধারণা ক্রিকেটপ্রেমীদের। সৌরভের বোর্ডের ভালো কাজের কথা না বলে দর্শক স্বাচ্ছন্দ্যের খামতির কথা বলাতেও তেমনই ইঙ্গিত।
বিনিকে চেনানো
এরই মধ্যে গতকাল কলকাতায় এক অনুষ্ঠান সৌরভের কেরিয়ারের বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে তাঁর কাছে সেইসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছিল। তারই একটিতে দেখা যায়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, হর্ষ ভোগলে ও রাহুল দ্রাবিড় ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। সৌরভ ও সচিনের বোলার হিসেবে পারফরম্যান্সের তুলনা চলছিল। তা নিয়ে দ্রাবিড় ও সৌরভ নানা মজাদার কথাবার্তা বলছিলেন। তাঁরা যখন ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন তখন দেখা যায়, জো রুটকে বল করছেন স্টুয়ার্ট বিনি। টিভিতে লেখা ছিল বিনি, পাশে লেখা ছিল বোলিং ফিগার। ফুটেজ প্রদর্শন শেষ হতেই সৌরভ বলেন, যাঁকে দেখলেন তিনি কিন্তু স্টুয়ার্ট বিনি, রজার বিনি নন! সঞ্চালক তখন বলেন, এই দিনের বিচারে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।
রজারের কেরিয়ার
উল্লেখ্য, রজার বিনির পুত্র হলেন স্টুয়ার্ট বিনি। এমনকী নির্বাচক থাকাকালীন দল নির্বাচনী বৈঠকে তাঁর পুত্রকে নিয়ে আলোচনার সময় তা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন রজার। বর্তমানে ৬৭ বছরের রজার বিনি ২৭টি টেস্টে ৪৭টি উইকেট পেয়েছেন, ৭২টি একদিনের আন্তর্জাতিকে ৭৭ উইকেট পেয়েছেন। টেস্ট এবং ওডিআইয়ে তাঁর যথাক্রমে পাঁচটি অর্ধশতরান-সহ ৮৩০ এবং একটি অর্ধশতরান-সহ ৬২৯ রান রয়েছে। তিরাশির বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে তিনি হয়েছিলেন সর্বাধিক উইকেটশিকারী। ১৯৮৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ার্ল্ড সিরিজে ভারতকে জেতানোর পিছনেও তাঁর অবদান ছিল। সেই টুর্নামেন্টে ১৭টি উইকেট নিয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালে দেশের হয়ে শেষবার খেলেছেন রজার বিনি। ফলে তিনি খেলার সময় সৌরভ-দ্রাবিড় যে ধারাভাষ্য দেবেন না সেটা সকলেই বোঝেন। তারপরেও রজার ও স্টুয়ার্টকে 'চেনাতে' গিয়ে নিয়ে সৌরভ নিছক মজা করেই ওই মন্তব্য করলেন, নাকি অন্য কোনও বিষয় রয়েছে তা নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে জল্পনা।