সৌরভের ঘরে কী কাণ্ডটাই না ঘটিয়েছিলেন সচিন! নিবিড় বন্ধুত্বের অজানা কথা জানালেন তেন্ডুলকর
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ৫০তম জন্মদিন ৮ জুলাই অর্থাৎ আগামীকাল। গতকাল প্রি বার্থডে সেলিব্রেশন হলো লন্ডনে। সেখানেই এক ফ্রেমে পাওয়া গেল ভারতের সর্বকালের সেরা ওপেনিং জুটিকে। সচিন তেন্ডুলকর ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ছিলেন সচিনের স্ত্রী অঞ্জলি, সৌরভের স্ত্রী ডোনা ও কন্যা সানা। হাজির ছিলেন বিসিসিআই কর্তারাও। সেই জমকালো অনুষ্ঠানের ফাঁকে সংবাদসংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাদিকে নিয়ে নানা অজানা কথার ভাণ্ডার খুললেন ছোটুবাবু সচিন।
অধিনায়ক সৌরভ
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অধিনায়কত্বের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে সচিন তেন্ডুলকর বলেন, সৌরভ একজন অসাধারণ অধিনায়ক। ক্রিকেটারদের স্বাধীনতা দেওয়া এবং তাঁদের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার, সে সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। সৌরভ যখন অধিনায়ক হন তখন ভারতীয় ক্রিকেট একটা পর্যায় থেকে অন্য পর্যায়ে যাচ্ছে। সেই সময় এমন কিছু ক্রিকেটার প্রয়োজন ছিল যাঁরা ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে একটা শক্ত মঞ্চ গড়তে পারেন। বীরেন্দ্র শেহওয়াগ, যুবরাজ সিং, জাহির খান, হরভজন সিং, আশিস নেহরার মতো ক্রিকেটারদের আমরা পেয়েছি। তাঁরা গিফ্টেড প্লেয়ার। কিন্তু গিফ্টেড প্লেয়ারদেরও প্রথমে যে সাপোর্ট দরকার হয় সেটা সৌরভ দিয়েছিলেন। তাঁরা যেমন নিজেদের মেলে ধরার স্বাধীনতা পেয়েছিলেন, তেমনই দলে তাঁদের ভূমিকা কী হবে সেটাও সুস্পষ্টভাবে তাঁদের বলে দেওয়া হয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়া সফরে
১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরের কথাও উঠে এসেছে সচিনের কথায়। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া সফরে আমি অধিনায়ক ছিলাম। নেতৃত্ব ছাড়ার আগে। আমি ওই সফরে সৌরভকেই সহ অধিনায়ক হিসেবে চেয়েছিলাম। আমি দীর্ঘদিন তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। একসঙ্গে খেলেছি। আমি জানতাম ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে একজন অধিনায়কের যে গুণগুলি থাকা দরকার তার সবই সৌরভের ছিল। সৌরভ একজন ভালো অধিনায়ক হতে পারে বলে নিশ্চিত থাকার কারণেই ভাইস ক্যাপ্টেন হিসেবে তাঁর নাম সুপারিশ করেছিলাম।
নিবিড় বন্ধুত্ব
সচিনের সঙ্গে সৌরভের ২৬টি শতরানের পার্টনারশিপ রয়েছে। তার মধ্যে ২১টিই ওপেন করতে নেমে। দাদিকে নিয়ে ছোটুবাবু বলেন, সৌরভ আর আমি নিজেদের সেরাটা দিয়েছি। দলের প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা দুজনেই অবদান রাখতে চেয়েছি, দেশকে ম্যাচ জেতানোই আমাদের লক্ষ্য ছিল। এর বাইরে কিছু ভাবনাতেই আসেনি। আমাদের ওপেনিং জুটিকে যাঁরা ভালো বলে মনে করেন এবং আমরা দেশের জন্য যা করতে পেরেছি তার প্রশংসা যেভাবে মানুষ করে থাকেন তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। সচিন আরও বলেন, ১৯৯১ সালে সৌরভ আর আমি একই ঘরে ছিলাম। আমরা দুজনেই এই সময়টা উপভোগ করেছি। অনূর্ধ্ব ১৫ ক্রিকেট খেলার সময় থেকেই আমরা একে অপরকে জানি। ফলে আমাদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক আগে থেকেই ছিল। ১৯৯১ সালের পরেও আমাদের দেখা হয়েছে। তখন মোবাইল না থাকায় এখনকার মতো নিয়মিত কথা হতো না। কিন্তু তাতে আমাদের বন্ধুত্ব বজায় রাখতে কোনও অসুবিধাই হয়নি।
প্রথম দেখা
সচিন-সৌরভের প্রথম দেখা বিসিসিআই আয়োজিত কানপুরে একটি জুনিয়র টুর্নামেন্টে। এরপর বাসু পরাঞ্জপের তত্ত্বাবধানে ইন্দোরে বিসিসিআই যে শিবির আয়োজন করেছিল তাতেও একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছেন দুজনে। সচিন বলেন, কানপুরে আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে খেলেছিলাম। এরপর ইন্দোরে ক্যাম্পে ছিলাম দুজনেই। কৈলাস গাত্তানির অধীনে স্টার ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলতে ইংল্যান্ডেও গিয়েছি। কিন্তু ইন্দোরে অনূর্ধ্ব ১৫ শিবিরেই আমরা একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছি, একে অপরকে বুঝতেও যা সহায়ক হয়েছিল। এই শিবিরই যে তাঁদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের ভিত গড়ে দেয় সে কথাও উল্লেখ করেছেন সচিন।
সৌরভের ঘরে জল
সৌরভের ৫০তম জন্মদিনের প্রাক্কালে সচিন একটি মজার ঘটনার কথাও জানিয়েছেন। সচিন, যতীন পরাঞ্জপে ও কেদার গড়বোলে সৌরভের ঘর জলে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। সচিনের কথায়, সৌরভ দুপুরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। যতীন, কেদার এবং আমি সৌরভের হোটেলের ঘরটি জলে ভরিয়ে দিয়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে সৌরভ বুঝতেই পারেননি কীভাবে ঘরে এত জল এলো! সৌরভের স্যুটকেস জলে ভাসছিল। পরে সৌরভ বুঝতে পারেন এই কাণ্ড আমরা তিনজন ঘটিয়েছি। বন্ধুদের মধ্যে এমন মজা চলতেই থাকে। শৈশবে আমরাও ব্যতিক্রমী ছিলাম না। স্টার ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ইংল্যান্ডে খেলতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সচিন বলেন, আমাদের স্কুলে রাখা হয়েছিল। যা ওল্ড ক্যাসলের মতো, ওই পরিবেশে ভয়ও লাগতো। ওই সময় আমরা বন্ধুরা মিলে জড়ো হয়ে অন্যদের ভয় দেখানোর পরিকল্পনা করতাম। বন্ধুরা মিলে তখন যা করেছি সেইসব ঘটনা মনে পড়লে এখন হাসিই পায়।
(ছবি- ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়)