হরভজনের 'দাদাগিরি'র প্রশংসায় সৌরভ! সঞ্চালক মহারাজের কাছে কাদের চ্যালেঞ্জ কঠিন?
এক যুগ পেরিয়ে জনপ্রিয়তার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী দাদাগিরি-র। কৌন বনেগা ক্রোড়পতির সঙ্গে যেমন জড়িয়ে অমিতাভ বচ্চন, তেমনই দাদাগিরির ক্ষেত্রে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রযোজক ও নির্দেশক শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপচারিতায় দাদাগিরির ১২ বছর নিয়ে অনেক অজানা কথা ভাগ করে নিলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক তথা বিসিসিআই সভাপতি। দাদাগিরি সিজন নয়ের প্রথম পর্ব দুটি তিনি দেখলেন লন্ডনে বসে।
টেমসের ধারে দাদাগিরি
লন্ডনে টেমস নদীর ধারেই বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। গুণমুগ্ধরা এই বহুতলটিকে দেখিয়ে বলছেন লন্ডনের ২/৬ বীরেন রায় রোড ইস্ট! ব্যালকনিতে দাঁড়ালেই দেখা যায় টেমস নদী, লন্ডন আই। লন্ডনের বাড়ি থেকে তোলা ছবি সৌরভের স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় দিতেই তা রীতিমতো ভাইরাল। এরপর ক্রীড়া সংগঠক শতদ্রু দত্তও শেয়ার করেছেন দাদার লন্ডনের বাসভবন থেকে তোলা কয়েকটি চোখজুড়ানো ছবি।
লর্ডসের ব্যালকনিতে
লন্ডনে থেকে লর্ডসে যাবেন না মহারাজ সেটা কী হয়? পার্থ জিন্দাল, শতদ্রু দত্তদের নিয়ে দাদা চলে গিয়েছিলেন লর্ডসের সেই বিখ্যাত ব্যালকনিতে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় লন্ডনে গিয়ে লং ড্রাইভে যেতে ভালোবাসেন, হেঁটেই ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন এলাকায়। কলকাতায় যা কল্পনা করাই যায় না!
প্রথম দিনে
গত শনিবার থেকে টিভির পর্দায় এসেছেন দাদাগিরি সিজন নয়। শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফেসবুক লাইভে এসে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দাদাগিরির শ্যুটিং শুরুর সেই প্রথম দিনের কথা। মহারাজ বলেন, ২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর খড়দহে শ্যুটিংয়ে গিয়েছিলাম। রিহার্সালের একটু পরেই গোটা সিস্টেম ক্র্যাশ করে গিয়েছিল! বাড়িতে এসে বলেছিলাম আর বোধ হয় দু-তিন দিন, তারপর ওঁরা অন্য কাউকে খুঁজে নেবেন! যদিও সৌরভের সেই ভবিষ্যদ্বাণী মেলেনি, বরং দাদা মানেই দাদাগিরি।
সেরা পরিবর্তন
৯টা সিজন, কিন্তু বছর হিসেবে ধরলে এক যুগ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, এই কয়েক বছরে অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। শরীর, সাইজ, মাথার চুলের রং। যাঁরা ছোট ছিলেন তাঁরা বিবাহিত। প্রতি বছর গড় ৭০টা এপিসোড হয়। প্রতি বছরই তাকিয়ে থাকি। প্রথম দিনের শ্যুটিংয়ের পর জিজ্ঞেস করি ঠিকঠাক হল কিনা। একটা জড়তা থাকে। তবে তা কেটে যায়। এবারের দাদাগিরিতে নিয়মে কিছু রদবদল হয়েছে। সৌরভের মতে, এবারই সেরা পরিবর্তন হয়েছে। হয়তো বেশি কথা বলতে হচ্ছে, শ্যুটিংয়ে সময় বেশি লাগছে। কিন্তু প্রতিযোগীদের সুবিধা হচ্ছে। আগে প্রথমদিকে নেগেটিভে চলে গেলে আগ্রহ হারাতেন প্রতিযোগীরা। কিন্তু এখন শেষ রাউন্ডে গিয়েও শীর্ষে চলে যাওয়ার সুযোগ থাকছে।
সেই ঘটনা
লর্ডসে ঘুরপাক জামা মানে দাদাগিরি...এই টাইটেল ট্র্যাকটা লিখেছিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। সুরারোপ করেন নীল মুখোপাধ্যায়, গেয়েছিলেন অর্ক। পরে অরিজিৎ সিং নিজে আরেকটা টাইটেল ট্র্যাক নিয়ে আসেন, সবটা মিলিয়ে দাদাগিরির টাইটেল ট্র্যাক মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে। লর্ডসে জার্সি খুলে ঘোরানোর কথা সব জায়গায় গিয়েই শুনতে হয় দাদাকে। অনেকে সেই ঘটনা নিয়ে জানতে চান। এতে কিছুটা লজ্জাবোধও করেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। তিনি বলেছেন, কেন ওটার কথাই লোকে বলেন বুঝতে পারি না। বহু জায়গাতেই এটা নিয়ে মানুষ জিজ্ঞাসা করেন। এবারও যখন লন্ডন আসছিলাম বিমানে দেখলাম এক ভদ্রলোক ও তাঁর স্ত্রী আমেরিকা যাচ্ছিলেন। হুইলচেয়ারে বসে ভদ্রমহিলা বললেন, ২৫ তারিখ থেকে দাদাগিরি শুরু। তার আগেই বাড়ি পৌঁছে যাব। দাদাগিরি দেখে সন্ধেটা আমার দারুণ কেটে যায়। তবে আমি বরাবরই লাজুক মানুষ। মাঠে যে লোকটাকে সকলে দেখেছিলেন বাস্তবে তা নয়। সম্পূর্ণ আলাদা। আমি চুপচাপ, লো প্রোফাইল জীবন কাটাতেই পছন্দ করি। ক্লোজড পার্সন লাইফে।
প্রাসঙ্গিক থিম
দাদাগিরি সিজন নয়, হাত বাড়ালেই বন্ধু হয়- এবারের দাদাগিরির এই থিমটাও খুব প্রাসঙ্গিক বলেই মনে করছেন সৌরভ। তাঁর কথায়, এখন বন্ধুত্বর সময়। গোটা পৃথিবী কোভিডের কবলে। বিলেতে এসেও দ্বিতীয় দিন ও পঞ্চম দিনের মাথায় কোভিড টেস্ট করাতে হয়েছে। মানুষ যেমন সচেতন, তেমনই ভীত, সতর্কও। এই সময় বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোরই দরকার। এমনিতে কোভিড পরিস্থিতিতে যে যেমনভাবে পেরেছেন একে অপরের পাশে থেকেছেন। কিন্তু এটা এমন একটা রোগ যা রোগীর চেয়ে মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়। আমার ৭৫ বছরের মা করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ নেওয়া ছিল বলে তেমন কিছু বুঝতে পারেননি। কিন্তু আমরা হাসপাতালে গিয়েও তাঁর কাছে যেতে পারিনি। নীচে দাঁড়িয়ে ভিডিও কলে কথা হতো। ফলে রোগী ভাবতে পারেন তাঁর পাশে কেউ নেই। কিন্তু তা ঠিক নয়। তবে বড় কথা এটাই আমরা এই কোভিডকে জয় করতে চলেছি, এটাই বেশি আনন্দদায়ক।
ভাজ্জির দাদাগিরির প্রশংসায় দাদা
বাংলার দাদাগিরির মতো জি পাঞ্জাবিতে হরভজন সিং পাঞ্জাবিয়া দি দাদাগিরি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন। এরপর ওডিয়াতেও দাদাগিরি আসতে চলেছে বলে খবর। হরভজনের সঞ্চালনা নিয়ে সৌরভ বলেন, আমি হরভজনের কয়েকটা শো দেখেছি। ভালোই সঞ্চালনা করছেন ভাজ্জি। আমিও অন্য জগৎ থেকে এসেছিলাম। ব্যাট-বলের জগৎ থেকে। যেখানে অ্যাঙ্করিং মানে ছিল টেস্টে ব্যাটিংয়ের সময় নতুন বল ছেড়ে উইকেটে সেট হওয়া। সেখান থেকে দাদাগিরির এই সফৎ সত্যিই রিমার্কেবল জার্নি।
উপভোগ্য চ্যালেঞ্জ
দাদাগিরিতে এর আগে বহু বিশিষ্ট মানুষ এসেছেন, আসছেন, আসবেনও। এখন সঞ্চালনার সময় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় স্বভাবসিদ্ধভাবে সব পরিস্থিতি সামলান, আট থেকে আশি সকলের কাছেই তিনি দাদা। তবে সৌরভ বেশ উপভোগ করেন শিশুদের নিয়ে পর্বগুলি। মজা করে বললেন, আমি বলে থাকি বয়সে আরেকটু বড়দের আনতে। কেন না, স্টেজের বাইরে থেকে নির্দেশ আসে। কিন্তু আড়াই-তিন ঘণ্টা শিশুদের সামলে আমাকেই তো উত্তর বের করতে হয়। কেউ মুড না হলে উত্তর দেয় না। কেউ বাবাকে ডাকে, মাকে ডাকে। কেউ বসে পড়ে, উঠে পড়ে। কোনও একটা উত্তর সকলে মিলে দেয়। অনুষ্ঠানের নিয়মের ১২টা নয়, ১৩টা বেজে যায়! কিন্তু তারাও এক্সপোজার পায়। তারাও বাড়ি গিয়ে টিভিতে নিজেদের দেখে, আবার বন্ধুদের ফোন করে বলে আজ টিভিতে এসেছিলাম! ফলে সবটাই আনন্দের। এভাবেই সকলে আসুক, সকলে উপভোগ করুন দাদাগিরি।
সাফল্যের দিশা
বহু মানুষ জীবনে কামব্যাকের জন্য আদর্শ করেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তাঁর দাবি, নতুন ক্ষেত্রে এসেও সফল হওয়া যায়। দাদা বলেছেন, টিভি শো সঞ্চালনা করা আমি আগে কখনও করিনি। প্রথমে আমিও ভেবেছিলাম পারব কিনা। কিন্তু এটাই শেখার যে, ইচ্ছা থাকলে সব কিছুই করা সম্ভব। অন্য জগতে এসেও ঠিক সফল হওয়া যায়। তাই সুযোগ এলে পারব কিনা ভাবার দরকার নেই। চেষ্টা করতে হবে যতটা জানি সেটাই উজাড় করে দেওয়ার জন্য। বলছি না ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রে তা সফল হয়। তবে বেশিরভাগ সময়ই এতে সফল হওয়া যায়।
ছবি- সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও শতদ্রু দত্তর ফেসবুক