টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ: সৌম্য সরকার চান নিজেকে নতুন করে চেনাতে
৩৪ রান ও ২ উইকেট- শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে যথাযথ অলরাউন্ডারের কাজ করেছেন সৌম্য সরকার।
বিশ্বকাপের আগে দুটি সিরিজে সৌম্য যেমন খেলেছেন, তা নিয়ে তিনি ভাবতেও চান না, কথাও বলতে চাননা।
বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে, কোচিং স্টাফ, নির্বাচকরা সৌম্য সরকারকে পছন্দ করেন কিছু কারণে।
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু সৌম্য সরকারকে নিয়ে বলেন, "সৌম্য ব্যাটিং অর্ডারের কঠিন জায়গাগুলোতে ব্যাট করতে পারেন। বোলিংয়ে অবদান রাখতে পারেন একই সাথে সৌম্য ভালো ফিল্ডার।"
স্লিপ ও বাউন্ডারি লাইনে সৌম্য ফিল্ডিং করে থাকেন।
এসব কারণে সৌম্য সরকার নিয়মিত মূল একাদশে জায়গা পেয়ে আসছেন। কিন্তু তার পারফরম্যান্স তেমন ধারাবাহিক নয়।
ক্রিকেট নিয়ে আরো পড়তে পারেন:
বাংলাদেশ ক্রিকেটে 'পঞ্চপাণ্ডব' অধ্যায় কি শেষের দিকে?
'অনেকদিন পর বাসায়' ফিরে কী করলেন ক্রিকেটার সোহান
আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদে নিষিদ্ধ ঢাকার দুই ক্লাব ও ক্রিকেটারের গল্প
উদাহরণ দেয়া যায় খুব সাম্প্রকিক ঘটনা দিয়ে।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে ১০টি টি-টোয়েন্টি ইনিংসে- ২৮৬ রান তুলেছেন সৌম্য সরকার, প্রায় ৪০ গড় এবং ১৫০ এর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে।
আবার ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরপর দুই সিরিজে- ৬ ইনিংসে ৩২ রান তুলতে সক্ষম হয়েছেন সৌম্য।
সৌম্য সরকার এই ছয় ইনিংস নিয়ে ভাবতেই চাননা- "যেটা ছিল (আগের ১০ ইনিংস) সেটা নিয়ে বেশি ফোকাস করছি
এইখানে যেটা ছিল (সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সিরিজ) সেটা নিয়ে, বেশি ফোকাস করছি না, অমন পরিস্থিতি ছিল না।"
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ২৭ বলে ৫১ রানের একটা ইনিংস খেলেছেন সৌম্য, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচে ২টি ফিফটি করেন সৌম্য সরকার।
বিশ্বকাপের আগে সৌম্য চান সেটা নিয়েই ভাবতে, "আগে জিম্বাবুয়ে, নিউজিল্যান্ডে যে ম্যাচগুলো খেলেছি সেগুলো দেখে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছি। আমি এখন যে অনুশীলন করছি, তাতেই মনোনিবেশ করছি।"
২০১৫ সাল থেকে টানা চারটি বিশ্বকাপের দলে আছেন সৌম্য সরকার।
২০১৫ সালে ওয়ানডে ফরম্যাটের বিশ্বকাপে ছোট ছোট কার্যকরী ইনিংস খেলে সৌম্য দলে নিজের প্রভাব বিস্তার করেন।
কিন্তু দিন গড়ানোর সাথে সাথে সৌম্য নিজের সামর্থ্যের তুলনায় সমর্থক ও বিশ্লেষকদের অনেককে হতাশ করেছেন। ব্যাটিংয়ে সহজাত স্ট্রোক প্লের বদলে বড় ম্যাচে চাপে পড়ে আউট হয়ে যাওয়া নিয়মিত ঘটনা হয়ে যায়।
কিন্তু সৌম্য সরকার একেবারে খারাপ খেলেননি এই সময়েও, বলছে পরিসংখ্যান।
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্রিকেট কোট নাজমুল আবেদীন ফাহিম মনে করেন সৌম্য সরকারের বাধাটা মানসিক।
"কখনো এমন হয় যে সে বেশি ভাবে ব্যাটিং নিয়ে। ব্যাটিং নিয়ে বেশি ভাবলে সেটা শারীরিক ভাষাকে আড়ষ্ট করে ফেলে।"
বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার সাথিরা জাকির জেসি মনে করেন, সৌম্য অনেক সময় 'সন্তুষ্ট' হয়ে যায়।
"ক্রীড়াবিদদের মধ্যে এমন হয় অনেক সময় তারা অল্প ভালো খেলে সন্তুষ্ট হয়ে যান। যে ভালো খেলে ফেলেছি। আবার সৌম্য চাপে পড়ে তখন সে যদি রান করে আবার তাকে নিয়ে সমালোচনা বন্ধ হয়।"
এই বিশ্লেষক মনে করেন কেউ যদি পাঁচ ম্যাচে পাঁচটা সেঞ্চুরিও করেন তবু রানের ক্ষুধা থাকাটা জরুরি, তবেই একজন ব্যাটসম্যান ভালো থেকে 'গ্রেট ব্যাটসম্যান' হয়ে উঠতে পারবেন।
বিশ্বকাপে লক্ষ্য কী?
সৌম্য চান বিশ্বকাপে 'কমপ্লিট ক্রিকেটার' হিসেবে নিজেকে চেনাতে।
ব্যাটিং যদিও সৌম্য সরকারের মূল কাজ, কিন্তু বল হাতেও তিনি ভূমিকা রাখতে পারেন।
অনেক সময় টেস্ট ক্রিকেটেও সৌম্যর বোলিং ফিগার দলের সেরাদের কাতারে থাকে।
সৌম্য বলেছেন নতুন করে চেনানোর চেষ্টা থাকবে এবারের বিশ্বকাপে, "চেষ্টা করবো নিজেকে আবার নতুন করে চেনাতে। ব্যাটিং-ফিল্ডিং যেখানেই কাজ থাকবে, নিজের সেরাটা দেবো।"
স্মরণীয় একটি বিশ্বকাপ করে রাখতে চান এটাকে।
সৌম্যর বড় বাধা কি মানসিক চাপ?
সৌম্য বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় বড় মুহুর্তের সাক্ষী।
প্রথম বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা থেকে শুরু করে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৩ বলে ২ রান না নিতে পারার ম্যাচে তিনি ছিলেন, এছাড়া ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের শেষ বলে ভারতের বিপক্ষে ছক্কা হজম করেন সৌম্য সরকারই।
তিনি মনে করেন, এই সবই তাকে মানসিকভাবে আরো শক্ত করেছে। "আমি একটা বড় জিনিস শিখেছি কীভাবে চাপ সামলাতে হয়
বিশেষ করে নিদাহাস ট্রফির শেষ ওভারে অনেক বড় শিক্ষা ছিল
শেষ বলে ছয়ের কারণে ম্যাচ হেরেছি, কিন্তু সেখান থেকে অনেক শিখেছিও।"
বিবিসি বাংলার পাতায় আরো খবর-
কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে চাঁদপুরে পূজামণ্ডপে হামলা, সংঘর্ষে নিহত ৩
খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেবার জন্য আবার দাবি জানিয়েছে বিএনপি
ভারতে স্ত্রীর গায়ে কেউটে লেলিয়ে হত্যার মামলায় স্বামীর যাবজ্জীবন