রঞ্জি ফাইনালে মুম্বইকে চাপেই রাখল মধ্যপ্রদেশ, সরফরাজ জানালেন শতরানের পর কান্নার কারণ
রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে মুম্বইয়ের উপর চাপ জারি রাখল মধ্যপ্রদেশ। আজ বেঙ্গালুরুতে মুম্বইয়ের ৩৭৪ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিনের শেষে ১ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান তুলেছে চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের প্রশিক্ষণাধীন দল। আদিত্য শ্রীবাস্তবের নেতৃত্বাধীন মধ্যপ্রদেশ পৃথ্বী শ-র মুম্বইয়ের চেয়ে পিছিয়ে ২৫১ রানে। ১৬.৩ ওভারে ৪৭ রানে প্রথম উইকেট ফেলার পর ৪১ ওভার পর্যন্ত আর কোনও উইকেট ফেলতে পারেননি মুম্বইয়ের বোলাররা।
মধ্যপ্রদেশ চাপে রেখেছে মুম্বইকে
বাংলার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে শতরানকারী হিমাংশু মন্ত্রী তুষার দেশপাণ্ডের বলে লেগ বিফোর হয়েছেন। ক্রিজে রয়েছেন যশ দুবে (১৩১ বলে ৪৪) এবং শুভম শর্মা (৬৫ বলে ৪১)। এর আগে, আজ ৩৭৪ রানে শেষ হয়েছিল মুম্বইয়ের প্রথম ইনিংস। ১৩টি চার ও ২টি ছয়ের সাহায্যে ২৪৩ বলে ১৩৪ রান করেন সরফরাজ খান। চলতি মরশুমের রঞ্জিতে তিনিই সর্বাধিক রানের মালিক। পরপর দুটি মরশুমে ৯০০-র বেশি রান করার নজিরও গড়েছেন। সরফরাজ সাংবাদিকদের এদিন বলেন, ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া সকলেরই লক্ষ্য থাকে। আমার কাজ হলো কঠোর পরিশ্রম করে রানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।
শতরানের পর কান্না
শতরানের পর সরফরাজের সেলিব্রেশন এদিন ভাইরাল হয়ে যায়। দেখা যায়, চলতি মরশুমে রঞ্জিতে চতুর্থ শতরান পূর্ণ করেই তিনি কাঁদছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটি সরফরাজের অষ্টম শতরান। যার মধ্যে ৬টিই ১৫০-র বেশি স্কোর। খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি কাঁদতে কাঁদতে শতরানের সেলিব্রেশনের আসল কারণ। দিনের খেলা শেষে সরফরাজের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে দেখা যায় প্রথমে জাতীয় নির্বাচক সুনীল যোশীকে। পরে সরফরাজের সঙ্গে কথা বলেন হরবিন্দর সিং।
|
সরফরাজ আবেগপ্রবণ
সরফরাজের সঙ্গে মুম্বই দলেই রয়েছেন ভাই মুশির খান, তবে তাঁর প্রথম শ্রেণির অভিষেক হয়নি। কিন্তু মুম্বইয়ের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ কোচবিহার ট্রফিতে মুশির ৬৭০ রান করার পাশাপাশি ৩২ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা হয়েছেন। সরফরাজ স্পষ্ট করে দিলেন, আব্বু বা বাবার জন্যই তাঁরা দুই ভাই আজ এই জায়গায়। সরফরাজের আজ শতরানের পর চোখে জল 'আব্বু'-র জন্যই। সরফরাজ বলেন, আমার জীবনে চড়াই-উতরাই রয়েছে। এই জায়গায় পৌঁছাতে পারতাম না বাবা না থাকলে। বাবার সঙ্গে ট্রেনে করে যাতায়াত করেছি। খেলা যখন শুরু করি তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম রঞ্জিতে মুম্বইয়ের হয়ে শতরান করার। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমার এটাও স্বপ্ন ছিল দলের প্রয়োজনে রঞ্জি ফাইনালে শতরান করার। সে কারণেই আজ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। কেঁদে ফেলি। কারণ, এই জায়গায় আমাকে পৌঁছে দিতে বাবা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। আমার সাফল্যের সব কৃতিত্ব তাঁর। তিনি না থাকলে আমি কিছুই না। জীবনে কিছু স্বপ্নপূরণ হতে সময় লাগে, কিন্তু আমি খুশি আমার বাবা রয়েছেন যিনি সব সময় কঠিন পরিস্থিতি পেরিয়ে যেতে আমাকে সাহায্যে করেছেন।
সিধুকে শতরান উৎসর্গ
রঞ্জি ফাইনালের শতরান সরফরাজ উৎসর্গ করেছেন দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালাকে। মুসেওয়ালা তাঁর পারফরম্যান্সের সময় উরুতে হাত দিতেন এবং ডান হাতের আঙুল আকাশের দিকে তাক করতেন ঠিক সেভাবেই এদিন শতরান সেলিব্রেট করেন সরফরাজ। তিনি বলেন, আমি ঠিক করেছিলাম শতরান পেতে হলে ২০০ বল কমপক্ষে খেলতে হবে। বেশি বল খেললেই বড় রান পাওয়া সম্ভব। প্রত্যেক বোলারকেই তিন-চার ওভার খেলে দেখে নিয়ে পিচের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। এতে বোলারদের পরিকল্পনা আঁচ করতে পেরে ব্যাট করা সহজ হয়ে গিয়েছে। মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে মুম্বই লিড নিতে পারবে বলেও আত্মবিশ্বাসী সরফরাজ। এমনকী তিনি বলেন, এই উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে ব্য়াট করা সহজ হবে না।