বিরাটের চেয়ে কীভাবে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে সচিন? তেন্ডুলকরকে নিয়ে বিশেষ ভাবনা সৌরভের
বিরাট কোহলির সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে ভারতের টেস্ট অধিনায়কের সাংবাদিক বৈঠকে। যেখানে তিনি টি ২০ ক্যাপ্টেন্সি ছাড়ার প্রসঙ্গে বিসিসিআই সভাপতিকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন! নজিরবিহীন এই সংঘাত দেখে সৌরভের প্রতিই জনসমর্থন বাড়়ছে। ভাবমূর্তিতে আঘাত লাগায় জনপ্রিয়তা কমছে বিরাট কোহলির।
বিরাটের চেয়ে এগিয়ে দাদা
সচিন তেন্ডুলকরের ১০০টি শতরানের রেকর্ড বিরাটের পক্ষে আর ভাঙা সম্ভব নয় বলেও মনে করছেন অনেকেই। সর্বোপরি, বিরাট কোহলি ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বেসর্বা বলে নিজেকে যে মনে করতে শুরু করেছিলেন সেই ফানুসও চুপসে যেতে শুরু করেছে। দেশের অন্যতম সফল প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বেটিং কেলেঙ্কারিতে বিশ্বাসযোগ্যতা হারানো ভারতীয় ক্রিকেটকে অসাধারণ উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন স্বমহিমায়। পরিসংখ্যানের বিচারে অধিনায়ক হিসেবে বিরাট সৌরভের চেয়ে এগিয়ে গেলেও, পরিস্থিতি-সহ সামগ্রিক বিচারে সৌরভের নেতৃত্বদানের দক্ষতার সঙ্গে তুলনাতেই আসেন না বিরাট। সৌরভ নিজে টিম ইন্ডিয়া গড়ে দিয়েছিলেন, বিরাটরা সেই উত্তরাধিকার বহন করছেন।
অপসংস্কৃতি আমদানি
তারপরেও যেভাবে বিরাট সৌরভকে নিশানা করেছেন, হয়তো কারও ইন্ধনেই, তা একেবারেই ভারতীয় ক্রিকেটের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। এমনটা হয়েছে শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানে। কিন্তু এই অপসংস্কৃতি আমদানি করেছে বিরাট। গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে বিসিসিআই। বোর্ড একটা বিষয় স্পষ্ট করে দেবেই, ক্রিকেটের ঊর্ধ্বে কেউ নন। সৌরভ যে শুধু টিম ইন্ডিয়াকে নিয়ে বিদেশে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার রাস্তা দেখিয়েছেন তা নয়, বিসিসিআই সভাপতি হিসেবে নয়া দিশা দেখাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেটে।
প্রশাসক হিসেবেও অনবদ্য
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বোর্ড সভাপতি হিসেবে ন্যাশনাল ক্রিকেট আকাদেমিতে রাহুল দ্রাবিড়কে রেখে যেমন ভারতীয় দলের সাপ্লাই লাইনটা তৈরি রাখা নিশ্চিত করেছেন, তেমনই আবার দ্রাবিড়কে ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ করার পর ভিভিএস লক্ষ্মণকে নিয়ে এসেছেন এনসিএ-র দায়িত্বে। রাহুল দ্রাবিড় ভারতীয় এ ও অনূর্ধ্ব ১৯ দলের কোচ হিসেবে সাফল্য পাওয়ার পর তাঁকে এনসিএতে আনেন সৌরভ। অন্য চেহারা দেখা যায় এনসিএর। ভারতীয় ক্রিকেটে ফ্যাব ফোর বলা হতো সচিন-সৌরভ-দ্রাবিড়-লক্ষ্মণকে। এর মধ্যে একমাত্র সচিন তেন্ডুলকরই সক্রিয়ভাবে ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত নন। তবে সেটা হলো দারুণ খবর হবে বলেই জানালেন মহারাজ।
সচিনকে চান
একটি অনুষ্ঠানে সৌরভ বলেন, আমার বিশ্বাস সচিন নিশ্চিতভাবেই ভারতীয় ক্রিকেটে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হবেন। সচিন বাকিদের চেয়ে আলাদা। সব কিছুতে যুক্ত হতে চান না। তবে সচিন ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে থাকার জন্য এগিয়ে এলে তার চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। তবে কীভাবে সচিনকে কোনও দায়িত্ব দিয়ে আনা যায় সেটা দেখতে হবে। স্বার্থের সংঘাতের বিষয়টিও থাকে। কিছু করতে গেলেই সংঘাত শব্দটি সামনে চলে আসে। কিছু ক্ষেত্রে তার বাস্তবতা নিয়ে আমার নিজেরই সংশয় রয়েছে। তবে সব কিছুর কথা মাথায় রেখেও সচিনের মতো সেরাকে ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত রাখতে পারলে তা ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষেই যে মঙ্গল, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন সৌরভ। উল্লেখ্য, এবারের আইপিএলেও সচিনকে মেন্টর হিসেবে রেখেছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ২০১৪ সালে সচিনকে আইকন প্লেয়ারের তকমা দেয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। এবার সেই দলে সচিনের ছেলে অর্জুন থাকাতেও স্বার্থের সংঘাতের বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা হচ্ছিল।
বিশ্বে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে মাস্টার ব্লাস্টার
২০১৩ সালে শেষ টেস্ট খেলা সচিন তেন্ডুলকরের জনপ্রিয়তায় যে এতটুকু ভাঁটা পড়েনি তা স্পষ্ট হয়েছে ইউগভ (YouGov)-এর আন্তর্জাতিক এক সমীক্ষায়। চলতি বছরে বিশ্বে সবচেয়ে প্রশংসিতদের যে তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে তাতে সচিন তেন্ডুলকরের নাম শুধু প্রথম কুড়িতেই আসেনি, তিনি রয়েছেন বিরাট কোহলিরও উপরে। ৩৮টি দেশের ৪২ হাজার জনের মধ্যে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাদের তাঁরা সম্মান করেন সেই সংক্রান্ত প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। তারপর যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে সচিন রয়েছেন দ্বাদশ স্থানে। বিরাট কোহলি ২ ধাপ নেমে রয়েছেন ১৮ নম্বরে। তাঁর ঠিক উপরেই রয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক ইমরান খান। তালিকায় চারে রয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, সাতে লিওনেল মেসি।