নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে বর্ণবৈষম্য! রস টেলরের আত্মজীবনী ঘিরে শোরগোল
নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক রস টেলর চলতি বছরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুডবাই জানিয়েছেন। এরপর সদ্যপ্রকাশিত আত্মজীবনীতে তিনি রীতিমতো বোমা ফাটালেন। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটে তিনি এবং আরও কয়েকজন ক্রিকেটার কীভাবে বর্ণবৈষম্যে বিদ্ধ হয়েছেন সে কথা উল্লেখ করলেন টেলর।
টেলরের আত্মজীবনী
রস টেলরের আত্মজীবনীটির নাম ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট। তাঁর মা সামোয়ার। ফলে টেলরকেও নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলার সময় বর্ণবৈষম্যমূলক কটাক্ষ হজম করতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট মহলে যে শ্বেতাঙ্গদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয় সে কথা জানাতে ভোলেননি টেলর। নিউজিল্যান্ড দলের ড্রেসিংরুমেও গায়ের রংয়ের জন্য তাঁকে নিয়ে কৌতুক, কটাক্ষ যে চলত সে কথা টেলর জানাতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
নিউজিল্যান্ডে বর্ণবৈষম্য
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে আত্মজীবনীর একাংশে টেলর লিখেছেন, নিউজিল্যান্ডে ক্রিকেটে শ্বেতাঙ্গদেরই প্রাধান্য। ভ্যানিলা লাইন-আপে দীর্ঘ সময় আমিই ব্যতিক্রম ছিলাম নিজের 'ব্রাউন ফেস' নিয়ে। এর যে নানা চ্যালেঞ্জও ছিল তাও জানিয়েছেন টেলর। বর্ণবৈষম্য থাকায় সতীর্থ ও দর্শকদের কাছেও অনেক অ-শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটারকে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। টেলর এমনও দাবি করেছেন, তাঁকে অনেকেই নিউজিল্যান্ডের নাগরিক না ভেবে, মাওরি বা ভারতীয় হিসেবে মনে করতেন।
টেলরের চাঞ্চল্যকর দাবি
রস টেলরের দাবি, নানাভাবে ড্রেসিংরুমে তাঁকে কটাক্ষে বিদ্ধ হতে হয়েছে। একজন সতীর্থ রস টেলরকে বলতেন, তাঁর অর্ধেকটা ভালো। কিন্তু সেটা কোনটা তা স্পষ্ট করে বলা না হলেও বুঝিয়ে দেওয়া হতো। অন্য ক্রিকেটারদেরও জাতিগত নানা মন্তব্য শুনতে হতো বলেও দাবি করেছেন টেলর। টেলর বা অন্য সতীর্থদের এমন কথাবার্তা শুনতে হলেও নিউজিল্যান্ড দলের শ্বেতাঙ্গরা তার কোনও প্রতিবাদ করেননি। তাঁরা এগুলিকে নিছক মজা বলেই মনে করতেন। বর্ণবৈষম্যমূলক কথাবার্তা বা আচরণের প্রতিবাদ কেন করা হয়নি সেটাও জানিয়েছেন টেলর। প্রতিবাদ করলে, বর্ণবৈষম্যের তাস খেলার গুরুতর অভিযোগ উঠতো। কৌতুককে বর্ণবৈষম্য বলে চালানোর চেষ্টার পাল্টা অভিযোগে বিষয়টি বড় আকার নিতে পারে, এটা ভেবেই সকলেই নিজেদের চামড়া মোটা করে নিয়েছিলেন। প্রতিবাদ না করলেও এই ধরনের আচরণ সঠিক কিনা সে প্রশ্নও তোলেন টেলর।
কখনও ইচ্ছাকৃত, কখনও অজান্তে
অনেক সময় দলের নিউজিল্যান্ড দলের প্রাক্তন কোচ বা ম্যানেজাররা অজান্তেই বর্ণবৈষম্যমূলক কথাবার্তা বললেন বলেও দাবি টেলরের। টেলরের স্ত্রী ভিক্টোরিয়াকে এক প্রাক্তন ম্যানেজার বলেছিলেন, মাওরি বা প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপবাসীদের টাকা-পয়সা খরচে সমস্যা রয়েছে। আবার নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন কোচ মাইক হেসন (২০১২ সাল থেকে ৬ বছর নিউজিল্যান্ডের কোচ ছিলেন) টেলরের পরিচারিকাকে সামোয়া বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে এ ধরনের বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য যে ইচ্ছে করেই তাঁরা করেছিলেন সেটা বিশ্বাস করেন না টেলর। তবে এ সবের মধ্যেই টেলর বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটেও ছত্রে ছত্রে রয়েছে বর্ণবৈষম্য। অনেকেই সেই মানসিকতা নিয়ে চলেন। তাঁদের বক্তব্য অন্যদের আঘাত করতে পারে তার সাতপাঁচ না ভেবেই তাঁরা নানাবিধ কথা বলে থাকেন।
খতিয়ে দেখছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট
রস টেলরের এই আত্মজীবনী স্বাভাবিকভাবেই শোরগোল ফেলে দিয়েছে। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড বর্ণবৈষম্যকে প্রশ্রয় দেয় না। মানবাধিকার কমিশন যে বর্ণবৈষম্যের প্রতিবাদে যে সব কর্মসূচি ও নির্দেশিকা পালন করতে বলে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট তাকে সমর্থন করে। তবে রস টেলর যে অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন তা অপ্রত্যাশিত। তাঁর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন ওই মুখপাত্র।